নিয়োগ বানিজ্য স্বজনপ্রীতি-কুবি উপাচার্য অবরুদ্ধ-উত্তপ্ত অবস্থা
কুমিল্লা প্রতিনিধি/কুবি সংবাদদাতা : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফের বাসভবন অবরুদ্ধ করে রেখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতা। আজ শুক্রবার অবরুদ্ধ অবস্থায় নিজ বাসভবনেই সিন্ডিকেট সভা করেন উপাচার্য। এই বাধা পেরিয়ে সভায় যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান।
গত ৭ মার্চ উপাচার্য মো. আলী আশরাফকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে শিক্ষক সমিতি। আজ শুক্রবার দুপুর থেকে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে রাখে শিক্ষকদের ওই সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম সিন্ডিকেট সভা প্রতিহত করতে ওই উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে শিক্ষক সমিতির নেতারা জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৬৫তম সিন্ডিকেট সভা প্রতিহত করার ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৯টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে আসেন শিক্ষক সমিতির নেতারা। এ সময় তাঁরা বাসভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এর কিছুক্ষণ পরই ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে উপস্থিত হন। শিক্ষক সমিতির নেতারা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিযোগ করেন, ইউজিসির চেয়ারম্যান ‘পেটোয়া বাহিনী’ নিয়ে শিক্ষকদের ওপর ‘হামলা’ চালান। এতে ‘তিনজন শিক্ষক আহত’ হন।
এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ, সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই-ইলাহী ও ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সঙ্গে নিয়ে তিনি উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করেন। এ সময় শিক্ষকদের দাবি সম্পর্কে কথা বলতে গেলে শিক্ষক সমিতির নেতাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন ইউজিসির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান।
এর প্রায় এক ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে উপাচার্যের বাসভবনে বৈঠক করেন ইউজিসির চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে আন্দোলন করাকে আমি সমর্থন করি না। সিন্ডিকেট সভা শেষে দুপুরে উপাচার্যের বাসভবন থেকে বেরিয়ে যান ইউজিসি চেয়ারম্যান। পরে উপাচার্যের বাসভবনের কলাপসিপল গেটে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক নেতারা।
শিক্ষক সমিতির নেতারা অভিযোগ করেন, নানা কৌশলে তিন মাস পর ৬৫তম সিন্ডিকেট সভা করেছেন উপাচার্য। নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ এনেই গতকাল বৃহস্পতিবার এই সিন্ডিকেট সভাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তবে প্রশাসনিক ভবনে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও গোপনে তা উপাচার্যের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ করে শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘উপাচার্য এই সিন্ডিকেটে অনিয়মতান্ত্রিক নিয়োগগুলোকে চূড়ান্ত করেছেন। শিক্ষকদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। উপাচার্য এ ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত।এদিকে, শিক্ষক সমিতির নাম ব্যবহার করে কতিপয় শিক্ষক এ অযৌক্তিক দাবি করেছেন বলে দাবি করেন প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আশরাফ বলেন, আমার বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমি তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেব। শিক্ষক সমিতির দাবিকে তো সব শিক্ষক সমর্থন করেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য সিন্ডিকেট ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ৭ মার্চ উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডরমিটরিতে পরিকল্পিত হামলা ও ডাকাতি এবং ১৮ জানুয়ারি দুই শিক্ষকের বাসায় পরিকল্পিত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনারও দাবি করেছে সমিতি।