• শুক্রবার , ১৫ নভেম্বর ২০২৪

‘নির্বাচন বানচালে মানুষ হত্যায় খালেদাকে শাস্তি পেতেই হবে’


প্রকাশিত: ৫:০৩ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৬ বার

নিউইয়র্ক থেকে আলামীন চৌধুরী  :  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টায় যারা আন্দোলনের 12নামে মানুষ হত্যা করেছে তাদের ক্ষমা নেই। হুকুমের আসামি হিসেবে খালেদা জিয়াকে শাস্তি পেতেই হবে। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় এ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা।

সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র বক্তা। তবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপেদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী হাসান মাহমুদ আলী, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই এলাহী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রমুখ। নিউইয়র্কসহ আশেপাশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিপুল নেতা-কর্মী  ও সমর্থকরা সংবর্ধনা সভায় যোগ দেন।

সংবর্ধনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামতে পারবে না। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশে ফিরে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাঙালি বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, তার নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি আমাদের দেশ দিয়েছেন। তিনি তার জীবনের ২৩ বছর সংগ্রাম করেছেন। ১৯৪৮ সাল থেকে সংগ্রাম শুরু করেন, ৫২ এ ভাষা আন্দোলন এবং ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ। তার জন্যই আমাদের আজ সব অর্জন। আওয়ামী লীগই একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে।

তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, তাদের কারণেই আমরা বিজয়ী জাতি। তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের ডন পত্রিকার একটি রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, আমরা পূর্ব বাংলার মানুষ কীভাবে বঞ্চিত হয়েছি তা সেই রিপোর্টেই আছে। সেই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন ৬ দফা ঘোষণা করেন তখন থেকেই বাঙালিদের অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। দেশ স্বাধীন করে মাত্র সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলেন জাতির পিতা। সেই সময় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে খাবারের সংকট ছিল, মানুষ ফুটপাতে খেয়েছে, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। মায়ের কোলে অনেক শিশু মারা যেত। কিন্তু তিনি সাড়ে ৩ বছরে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরির্তনও করেছিলেন। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ পাওয়া যাবে না, স্বাধীন হবার সাড়ে তিন বছরে সে দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আবার তিনি অন্যান্য উদাহরণও সৃষ্টি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ছিল আমাদের মিত্র বাহিনী। তারা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। জাতির পিতা তিন মাসের মাথায় তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে বলেছিলেন কবে আপনার সৈন্য ফিরিয়ে নেবেন। ইন্দিরা গান্ধী তার সৈন্য ফিরিয়ে নিলেন। বঙ্গবন্ধুর কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমরা জাতির পিতাকে হারালাম। নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হলো। কি অপরাধ ছিল তার? দেশ স্বাধীন করাই কী ছিল তার অপরাধ? ৭১ এর পরাজিত শক্তি জাতির পিতাকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিল। পরবর্তীতে বৈঈমান- মুনাফেকরা ক্ষমতায় এলো। বৈঈমান মোস্তাক তিন মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ক্ষমতা দখল করল জিয়াউর রহমান। ৭১ এর পরাজিত শক্তিকে সে ক্ষমতায় বসালো। যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি ও ভোটের অধিকার দিলো। সংবিধান রহিত করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিলো। যে বিচার শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সময় ২২ হাজার মামলা হয়েছিল এবং ১১ হাজারকে শাস্তিও দেয়া হয়েছিল। জিয়া লাখো শহীদের রক্তের সাথে বৈঈমানী করল। তার শাসনামলে ১৯টি ক্যু হয়েছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর শত শত অফিসারকে হত্যা করল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও বন্ধ করে দেয়া হলো। এরশাদও ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের লালন ও পালন করল, তাদের মন্ত্রী ও এমপি বানালো। খালেদা জিয়াও একই কাজ করলেন। এমন কি ১৯৯৬ সালের ভোট চুরির নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদদের সংসদেও নিয়ে আসলেন।

তিনি বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা জাতির পিতার খুনিদের বিচার কাজ সম্পন্ন করি। এর মধ্যে ২ জন আমেরিকায়, ১ জন কানাডায়। আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাদের ফিরিয়ে নিয়ে শাস্তি দেয়ার।

তিনি বলেন, কী দুর্ভাগা জাতি আমরা খালেদা জিয়া যুদ্ধারাধীদের মন্ত্রী বানালেন। আল্লাহর বিচার আছে। আমরা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। তিনি তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে বলেন, মানি লন্ডারিং এ সে আমেরিকার কোর্টেই ধরা পড়েছে। এখন বিএনপি এবং জামায়াত সেই অবৈধ অর্থ দিয়ে সরকার বিরোধী লবিং করছে। অপপ্রচার করছে। আপনাদের তাদের অপপ্রচার রুখতে হবে। কারণ আপনারাই আমাদের প্রতিনিধি এবং দেশের রাষ্ট্রদূত।

তিনি আরো বলেন, বিএনপি এবং জামায়াতের চরিত্রের কোন পরিবর্তন নেই। তাদের কাজই হচ্ছে মানুষ হত্যা, আগুন সন্ত্রাস। ২০১৪ সালের নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে তারা আগুন সন্ত্রাস করছে, পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস করেছে। বাসে আগুন, দিয়েছে, ট্রেনে আগুন দিয়েছে, স্কুল পুড়িয়েদিয়েছে, মসজিদ, মন্দিরেও বোমা মেরেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না। ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।