নিমরের মৃত্যুদন্ডে উত্তাল বিশ্ব-তেহরানে সৌদি দূতাবাসে আগুন
অনলাইন ডেস্ক : নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রতিক্রিয়ায় তেহরানে বিক্ষোভের সময় সৌদি আরবের দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। সৌদি আরবে দেশটির শিয়া সম্প্রদায়ের শীর্ষস্থানীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার প্রতিক্রিয়ায় আজ রোববার ভোরে তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছে। ইরানের বিক্ষোভকারীরা একপর্যায়ে ওই দূতাবাস ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গতকাল শনিবার ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব। ৪৭ জনের মধ্যে একজন চাদ ও একজন মিসরের নাগরিক। বাকিরা সৌদি নাগরিক। তাঁদের মধ্যে নিমরও আছেন। নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করায় রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। ইরান বলেছে, এর জন্য সৌদি আরবকে অচিরেই চড়া মূল্য দিতে হবে। বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর অঞ্চলজুড়ে শিয়াদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সৌদি আরব, ইরান, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে।
তেহরানে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায়। তারা দূতাবাসের আসবাব ভাঙচুর করে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় দেশটির পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, তারা একদল লোককে দূতাবাস ভবন লক্ষ৵ করে পেট্রলবোমা ছুড়তে দেখেছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, মুখোশধারী বিক্ষোভকারীরা দূতাবাসের ফটকের সামনে বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভের একপর্যায়ে তারা দূতাবাসে হামলা চালায় এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। টুইটারে প্রকাশিত ছবিতে দূতাবাসের কোনো কোনো অংশে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। দেখা যায় ভাঙচুর করা আসবাবও।
সৌদি দূতাবাসে হামলার ঘটনার পরপরই ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়েছে। তারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকতে বলেছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক স্থাপনার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতেও বলেছে। তেহরানে দূতাবাসে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে সৌদি আরব।নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি সতর্ক করে বলেছে, ওই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
উত্তেজনা কমাতে তৎপরতা দ্বিগুণ করার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। দপ্তরের মুখপাত্র জন কারবি এক বিবৃতিতে সৌদি সরকারকে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে এবং তা সুরক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিচারপ্রক্রিয়ায় নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।
ভিন্ন মতাবলম্বীদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে মত প্রকাশের অনুমতি দিতে সৌদি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। উত্তেজনা কমাতে আঞ্চলিক নেতাদের তৎপরতা দ্বিগুণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ করেছে ওয়াশিংটন। সৌদি কর্তৃপক্ষের দাবি, সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা ও রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তে জড়িত থাকার দায়ে নিমরসহ ওই ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসেইন জাবের আনসারি বলেছেন, সৌদি সরকার বরাবরই সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন এবং উগ্রপন্থীদের মদদ দিয়ে আসছে, আর নিজের দেশের সমালোচকদের নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে দামিয়ে রাখছে।
শিয়া নেতা নিমরকে দুই বছর আগে বিক্ষোভ করার সময় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়েছিল। ২০১১ সালে সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করে, তাতে নিমর প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছিলেন। সৌদি আরবে শিয়ারা দীর্ঘদিন থেকে সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করার অভিযোগ করে আসছে।
গত অক্টোবরে নিমরের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ওই সময়ও শিয়া মুসলিমপ্রধান দেশ ইরান নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে সৌদি আরবকে ‘চড়া মূল্য’ দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। নিমরের এক ভাই গতকাল বিবিসিকে বলেন, তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে সৌদি রাজত্বে বিদেশিদের ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটাতে চাওয়া; শাসকদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
২০১১ সালে ‘আরব বসন্ত’ শুরু হলে সৌদির তেলসমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বিক্ষোভ শুরু করে।
নিমরের সমর্থকেরা বলেছেন, নিমর শুধু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমর্থন করেছিলেন এবং সরকারবিরোধী সব ধরনের সহিংস বিক্ষোভের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সৌদি আরব বরাবরই শিয়াদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং এই বিক্ষোভের পেছনে ইরানের হাত আছে বলে অভিযোগ করেছে।