• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

নিপুন কেলেংকারি-অন্যরকম ইঞ্জিনিয়ারিং শেখ সেলিমের


প্রকাশিত: ১১:৪৩ পিএম, ২০ আগস্ট ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৪৬ বার

 

প্রিয়া রহমান : অবশেষে নিপুন কেলেংকারি ফাঁস করলো সেই পীরজাদা হারুন। বললেন নিপুনকে নিয়ে নানা তদবিরের নেপথ্যে শেখ সেলিমের ঘনিষ্ঠতার কাহিনী। এই সেই শেখ সেলিম যিনি নিপুনকে জেতাতে নানা রকমের কারিশমা সাজিয়ে ছিলেন তাকে জেতাতে। বললেন, নিপুনের বনানীর পার্লারের ঘটনাও! যেটা উদ্ধোধন করেছিলেন শেখ সেলিম।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। জানা যায়, ২০০৮ সালে দলটি ক্ষমতায় এলে বদলে যান নিপুণ। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর সংশ্লিষ্টতা বাড়তে থাকে। তখনই মূলত শেখ সেলিমের সঙ্গে পরিচয় নিপুণের। ২০১২ সালে বনানীর অভিজাত এলাকায় এই নায়িকা গড়ে তোলেন নিজস্ব পার্লার। এটি উদ্বোধন করেন শেখ সেলিম। এরপর থেকেই নানা আলোচনায় তাঁরা।

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার—দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্রাঙ্গনে এমন গুঞ্জন ছিল। এবার সত্যতা নিশ্চিত করে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষত ২০২২ সালের চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। প্রাথমিক ভোট গণনায় সেসময় নির্বাচনে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হন জায়েদ খান। তবে এই ফলাফল মেনে নেননি সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত প্রার্থী নিপুণ। আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তিনি।

পরবর্তী সময়ে অভিযোগ-সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও শিল্পী সমিতির চেয়ারে বসেন নিপুণ। জানা যায়, শিল্পী সমিতিতে নিপুণের এমন দাপটের পেছনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ একজন রাজনীতিবিদের সরাসরি প্রভাব ছিল। তখন ভয়ে মুখ না খুললেও এবার প্রকাশ্যেই শিল্পী সমিতির নির্বাচনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনলেন সেসময়ে দায়িত্ব পালন করা নির্বাচন কমিশনাররা।

ওই ঘটনা প্রসঙ্গে ২০২২ সালে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুন গণমাধ্যমে জানান, তিনি পাঁচবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। কিন্তু ২০২২ সালের নির্বাচনে তাঁর ওপর চাপ প্রয়োগ করা হয়, যা তাঁকে মানসিকভাবে এখনও আতঙ্কিত করে।

হারুন বলেন, ‘‘নির্বাচনে নিপুণকে জয়ী দেখাতে অনেক ওপর থেকে এক ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ একের পর এক ফোন করতে থাকেন। তিনি সে সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়ে সরাসরি প্রভাব খাটাতেন, নিয়ন্ত্রণ করতেন বলা যায়। তিনি নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমি সরাসরি ‘না’ বলে দিই। এর আগে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন একবার উপজেলা নির্বাচনে ওই নেতার শ্যালকের জন্য আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিলেন। সে অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জানতেন যে আমাকে কেনা যাবে না। এ জন্য আমি বারবার সরকারি চাকরিতে পদবঞ্চিত হয়েছি।’’

এমনকি মুঠোফোনে ভয়ও দেখানো হয়, পাশাপাশি বড় অঙ্কের অর্থের লোভ দেখানো হয় উল্লেখ করে হারুন বলেন, ‘তখন একের পর এক ফোনে আমাকে ভয় দেখানো হয় যে তুলে নিয়ে যাবে। এখন যে আয়নাঘরের কথা শুনছি, তখন সে রকম কোনো আয়নাঘরের কথা শোনা থাকলে হয়তো সৎ থাকা সম্ভব হতো না। সেই রকম ভয় দেখানো হয়েছিল। পরে একটা জায়গায় যেতে বলেন, যেখানে বড় অঙ্কের টাকা রাখা ছিল। যখন রাজি হলাম না, তখন ফলাফল নিয়ে মামলা করা হলো। সেটা চলে গেল কোর্টে। তখন নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাকে বানিয়ে দেওয়া হলো অন্য একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য। নানা কাণ্ডে আমাকে ছোট করা হলো, এফডিসিতে নিষিদ্ধ করা হলো।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে পরাজিত হন চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার। ফলাফলে অসন্তোষ জানিয়ে ভোট পুনর্গণনার জন্য আপিল করেন নিপুণ। কিন্তু তাতেও একই ফলাফল পায় আপিল কমিটি।

শিল্পী সমিতির সেই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যুক্ত আরেকজন জানান, এমন আতঙ্ক হবে ভাবলে তিনি দায়িত্ব পালন করতেন না। কারণ, জীবনের হুমকি ছিল। যেকোনো সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে—এমন শঙ্কা ছিল। ভয়ে তখন এসব প্রকাশ করেননি। তাঁরা বিষয়গুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপরই ছেড়ে দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই সূত্র গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমাদের নির্বাচন কমিশনারদের একের পর এক ভয়ভীতি দেখিয়ে গালিগালাজ করা হয়। বলা হয় যে পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাবে। এমন লেভেল থেকে ফোন আসবে, ভাবতেই পারিনি। আমাদের একজনকে সেই সময় নিপুণকে জয়ী করাতে ১৭ বার ফোন করেন শেখ সেলিম সাহেব, তাঁর মতো লোক। এটা আমাদের অবাক করেছিল।’

আমার অভিযোগ একজন ব্যক্তির অবৈধ কার্যক্রমে: জায়েদ খানআমার অভিযোগ একজন ব্যক্তির অবৈধ কার্যক্রমে: জায়েদ খান
গত ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচন, এতে হেরে যান নিপুণ। সভাপতি পদে জয়ী হন মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ডিপজল। সেদিন রাতেই বিজয়ীদের ফুলের মালা দেন নিপুণ। কিন্তু এর ২৫ দিন পরই মত পরিবর্তন করে নির্বাচিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ পুরো কমিটির কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন নিপুণ। যদিও বেশি সুবিধা করতে পারেননি। আদালতের নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থাকেন ডিপজল।

শেখ সেলিম নিপুণের পার্লারে-

এদিকে, নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিল্পী সমিতির প্যাড ব্যবহার করে বিবৃতি দেন নিপুণ। এরপর তিনি বর্তমান কমিটির নির্বাচিত সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন। সাংগঠনিক নিয়মে এটা তিনি করতে পারেন না। তাঁর বিবৃতিতে লেখা ছিল, ‘‘কোটা আন্দোলনকে ইস্যু করে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করছেন এবং রাজাকারদের প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন, তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মনে রাখতে হবে… ‘তুমি কে? আমি কে? বাঙালি, বাঙালি’—এই স্লোগান বাঙালি জাতির সবচেয়ে গর্বের স্লোগান। জয় বাংলা।’’

এদিকে এই বিবৃতি নিয়ে শিল্পীরা নিপুণের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। জানা যায়, ২০০৮ সালে দলটি ক্ষমতায় এলে বদলে যান নিপুণ। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর সংশ্লিষ্টতা বাড়তে থাকে। তখনই মূলত শেখ সেলিমের সঙ্গে পরিচয় নিপুণের। ২০১২ সালে বনানীর অভিজাত এলাকায় এই নায়িকা গড়ে তোলেন নিজস্ব পার্লার। এটি উদ্বোধন করেন শেখ সেলিম। এরপর থেকেই আলোচনায় তাঁরা।