নিজের দেশেই নাগরিকেরা গুম হচ্ছেন, তাহলে কী লাভ হলো স্বাধীন হয়ে?
প্রিয়া রহমান, ঢাকা: ‘আমরা কেউই দেশে স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারছি না। নিজের দেশেই নাগরিকেরা গুম হচ্ছেন, তাহলে কী লাভ হলো স্বাধীন হয়ে?’
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এভাবেই নিজের কষ্ট ও ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন লাকসামের সাবেক সাংসদ সাইফুল ইসলামের মেয়ে মাশরুফা ইসলাম। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘স্বজনদের ব্যথা: গুম, খুন, নির্যাতন আর না’ শীর্ষক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছরের নভেম্বরে সাইফুল ইসলামসহ তিনজনকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে একজনকে ফেরত পাওয়া গেলেও সাইফুল ইসলাম ও হুমায়ুন কবিরের কোনো খোঁজ এখনো মেলেনি।
মাশরুফা বলেন, ‘আমার বাবাকে কী করা হয়েছে, আমরা জানি না। তিনি জীবিত, না তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে—তাও জানি না। এ ঘটনায় মামলা করা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। এর পরও নানা রকমের চাপ রয়েছে মামলা না চালানোর জন্য।’
‘আমরা এখনো নিরাপত্তাহীন’
‘আমার বাবা একজন চিকিত্সক ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রেও চিকিত্সকেরা বিশেষ সুবিধা পান। কিন্তু আমার বাবাকে হাত-পা বেঁধে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটা তো কোনো যুদ্ধক্ষেত্র ছিল না। তার পরও কেন এ ঘটনা ঘটল।’ দেশের মানুষের কাছে এ প্রশ্ন রেখেছেন লক্ষ্মীপুরে
র্যাবের হাতে নিহত চিকিত্সক ফয়েজ আহমেদের মেয়ে উজমা কাওসার।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরে র্যাবের হাতে ফয়েজ আহমেদ নিহত হন।
উজমা কাওসার বলেন, ‘আমরা জানি না আমার বাবার অপরাধ কী ছিল।’ তিনি জানান, তাঁরা এখনো লক্ষ্মীপুরে থাকতে পারছেন না, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাবার মরদেহ পাওয়ার বিষয়টিকে সৌভাগ্য হিসেবে মন্তব্য করে উজমা বলেন, ‘এখনো অনেকেই জানেন না, তাঁদের স্বজনেরা কী অবস্থায় আছেন, কোথায় আছেন। সে হিসেবে আমরা ভাগ্যবান।’
খুন গুমের শিকার পরিবারের আহাজারি
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম-খুন হওয়া পরিবারের সদস্যরা একজোট হয়ে বিচার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘স্বজনদের ব্যথা: গুম, খুন, নির্যাতন আর না’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ দাবি জানানো হয়।
সম্মেলনটি সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শুরু হয়। এখনো তা চলছে। এতে গুম-খুন হওয়া শতাধিক ব্যক্তির স্বজনেরা যোগ দিয়েছেন।
সম্মেলনের প্রথম ভাগে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পক্ষে ২০ পরিবারের সদস্যরা তাঁদের কষ্টের কথা জানান। মঞ্চে যখন তাঁরা চোখের সামনে স্বজনদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, মঞ্চের সামনে বসা অন্যদের তখন চোখ মুছতে দেখা যায়। অনেকে কেঁদে লুটিয়ে পড়েন। প্রায় প্রত্যেকেই সম্মেলনস্থলে হাজির হয়েছেন স্বজনের ছবি বুকে টাঙিয়ে।
প্রত্যেকেই বলেছেন, তাঁরা র্যাব, ডিবি, থানার কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কোনো সুরাহা হয়নি। কেউ তাঁদের খোঁজ নেন না।
নিখোঁজ বিএনপিদলীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর চৌধুরী আলমের মেয়ে বলেন, ‘শুধু বাবা যেদিন গুম হয়েছিলেন, সেদিনটিতে বিএনপি থেকে ফোন আসে। সারা বছর কেউ খোঁজ নেয় না।’
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নূর খান লিটন।