নিজামীর খেল খতম-চূড়ান্ত রায় কাল
বিশেষ প্রতিবেদক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামীর করা আপিল আবেদনের চূড়ান্ত রায় বুধবার ঘোষণা করা হবে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। আপিল বিভাগের বুধবারের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় এ মামলাটি রায়ের জন্য এক নম্বরে রাখা হয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগে পঞ্চম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার চূড়ান্ত আপিল নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন-বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
গত ৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপিল আবেদনের ওপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে নিজামীর মামলাটি রায় ঘোষণা র জন্য দিন ধার্য রেখেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।
আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং পাবনার সাথিয়ায় হত্যার আসামি নিজামীর সর্বোচ্চ শাস্তি (মৃত্যুদণ্ড) বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তিনি বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার বিষয়ে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল না থাকলে জাতি হতাশ হবে। অপরদিকে, নিজামী খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
ফাঁসির রায় পুর্নবহালের দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল সাড়ে ৯টায় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার কমিটির পক্ষ থেকে গণজামায়তে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। একাত্তরে আল বদর বাহিনীর প্রধান নিজামীর ফাঁসির রায় বহালের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চ শাহবাগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।
স্বাধীনতার উষালগ্নে শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা ও গণহত্যা এবং পাবনায় হত্যা, নির্যাতন এবং ধর্ষণের দায়ে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর কুখ্যাত রাজাকার নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
ট্রাইব্যুনালে দেওয়া নিজামীর রায়ে বলা হয়, নিরস্ত্র মানুষ, অসংখ্য বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত ওই অপরাধ ছিল একাত্তরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ ঘটনা। বুদ্ধিজীবী হত্যা ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর চালানো গণহত্যা ছিল ‘অত্যন্ত নৃশংস’।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্রসহ নিজামীর করা আপিলে ১৬৮টি যুক্তি তুলে ধরে সাজার আদেশ বাতিল করে খালাস চাওয়া হয়। ১১কার্যদিবস শুনানি শেষে রায়ের জন্য দিন ধার্য রাখা হয়।
এদিকে, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের শুনানি অপেক্ষায় রয়েছে। এর আগে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। শুধুমাত্র দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ।
নিরাপত্তা: এদিকে, রায় ঘোষণা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে সর্বোচ্চ আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও তার আশেপাশের এলাকায় অসংখ্য পুলিশ, র্যাব গোয়েন্দা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
যেকোন ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে আদালত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। রায়ের পরবর্তী পরিস্থিতি মাথায় রেখে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।