নাসিরনগরে ভাঙচুর-লুটপাটের পাঁচ দিন পর ফের আগুন হিন্দু বাড়ীতে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি : নাসিরনগরে ভাঙচুর-লুটপাটের পাঁচ দিন পর ফের আগুন দেয়া হয়েছে হিন্দু বাড়ীতে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। দিবাগত রাত তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে রোববার নাসিরনগরে প্রায় ১৫টি মন্দির ও ৬০-৭০টি হিন্দু বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় লোকজন, প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, উপজেলা সদরের মধ্যপাড়ার অমর দেবের রান্নাঘর, দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা ফুলকিশোরের গোয়ালঘর, একই এলাকার মৃণাল কান্তির রান্নাঘর ও জ্বালানি কাঠ রাখার ঘরসহ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।রাতেই স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় আগুন নেভানো হয়। তবে কয়েকটি রান্নাঘর ও গোয়ালঘর পুরোপুরি পুড়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
আজ শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমেদ। তিনি জাতিরকন্ঠকে জানান, ৮ থেকে ১০টি বসতঘর ও গোয়ালঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ‘পরিত্যক্ত’ বলে তিনি জানান।
সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল করিমের ভাষ্য, পাঁচটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। জড়িত ব্যক্তিদের খোঁজ করছে পুলিশ। অপরাধীরা কেউ ছাড় পাবে না বলে তিনি জানান। ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গত রোববার নাসিরনগরে প্রায় ১৫টি মন্দির ও ৬০-৭০টি হিন্দু বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দায়ের করা দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা দুই হাজার ৪০০ জন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে শনিবার গ্রেপ্তার হওয়া রসরাজ দাসের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
হামলার চার দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর আসনের সাংসদ ছায়েদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। তিনি উপজেলা সদরের চারটি সর্বজনীন মন্দির, কয়েকটি পারিবারিক মন্দির ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করেন। তিনি দাবি করেন, সব স্বাভাবিক আছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ছিল সুপরিকল্পিত। একটি চক্রান্তকারী গোষ্ঠী দেশে অরাজকতা তৈরির জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর দূরদর্শিতার অভাব, উদাসীনতা এবং অবহেলা এ হামলার সুযোগ করে দিয়েছে।