‘নাসা’ দরবেশের পুকুরচুরি
০০ কোনো পুকুর’ই নাই মজুমদার ফিসারিজের
০০ তারপরও আয় শত শত কোটি টাকা
লাবণ্য চৌধুরী : ‘বেক্সিমকো’ দরবেশ সেজে সালমান এফ রহমানের লুটপাটের পর এবার ‘নাসা’ দরবেশের লুটপাট দুর্নীতি ধরা পড়েছে। নাসা দরবেশ সম্পদ গোপন ও কর ফাঁকি দিতে পদে পদে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন। দেশের বহুল বিতর্কিত আলোচিত ব্যবসায়ী নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার হচ্ছেন সেই দরবেশ যিনি কিনা প্রধানমন্ত্রী হাসিনার আহবানের আগেই সব প্রাকৃতিক দূযোর্গের সাথি হয়ে সবার আগে দান খয়রাত নগদ টাকার চেক নিয়ে হাজির হতেন। সেই নাসা দরবেশ ভুয়া দলিল তৈরি করে মাছের খামার দেখিয়ে ২১৫ কোটি টাকা আয় দেখিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন এর অনুসন্ধানে তার জাল জালিয়াতির নানা তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর এর দুর্নীতিবাজ আয়কর কর্মকর্তারা নাসা দরবেশকে এসব সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুসন্ধানে মিলেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নে নিজেকে মাছের খামারি বলে পরিচয় দেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। আয়কর নথিতে কোম্পানির নাম উল্লেখ করা হয়েছে মজুমদার ফিশারিজ।
এতে তিনি তথ্য দেন, খুলনার দাকোপ ও সাতক্ষীরায় সাড়ে ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে চিংড়ি ও কার্প জাতীয় মাছ চাষ করার। মাছ বিক্রি করে এক বছরেই আয় দেখিয়েছেন ২০২ কোটি টাকা। আর খরচ দেখানো হয়েছে ৯১ কোটি টাকা। খামারের জন্য দাকোপের কালীনগরের শ্রীনগরের দুই ব্যক্তির কাছে পুকুর চুক্তি নেওয়ার দলিল আয়কর রিটার্নে জমা দেন নজরুল ইসলাম। দলিল অনুযায়ী, হরি চরণ রায়ের ছেলে যোগেশ চন্দ্র রায়ের কাছ থেকে ৬১৫ বিঘা জমি লিজ নেন তিনি। তবে যোগেশ চন্দ্র জানান, এত জমি তার নেই। আর জমি কাউকে লিজও দেননি তিনি। চেনেন না নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও।
যোগেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার মাত্র ১০ থেকে ১২ বিঘা সম্পত্তি আছে। তার ভেতর দিয়েও এই যে সম্পত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলো সম্পূর্ণ ফলস ও মিথ্যা কথা। এখানে ২০০০ সাল থেকে ঘের বলতে কোনো কিছুই নেই।’ একই এলাকার রইচ উদ্দিন গাজীর ছেলে আব্দুর রশিদ গাজীর কাছে ৩ হাজার বিঘা জমি লিজ নেওয়ার দলিল আয়কর রিটার্নে দেখান নজরুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, শ্রীনগরে ওই পরিচয়ের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। আর এত বেশি জমির মালিকও কেউ নেই। তাদের দাবি, আইলার আঘাতের পর এই এলাকায় আর বড় কোনো ঘেরই নেই।একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘আমাদের দাকোপ থানা বা ৬ নম্বর ও ৫ নম্বরের মধ্যে এমন কোনো ঘের নাই। এই ব্যক্তি (রশিদ গাজী) আমাদের এখানকার না। আর ৩–৪ হাজার বিঘা জমির যে কথা বলা হচ্ছে সেটাও আমাদের এখানে না। এতো জমির মালিক কেউ এখানে নাই।’
পরের বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরেও মৎস্য খামার থেকে ১৩ কোটি টাকা আয় দেখান নজরুল ইসলাম। এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, মৎস্য চাষের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ বৈধ করার বিষয়ে আপত্তি তোলেন অনেকেই। বিষয়টি গড়ায় আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনালেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছাড় পান নজরুল ইসলাম মজুমদার।
এ সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, ‘আপনারাই তো বলেন, মিডিয়াতেই তো আসে, যে কোন কোন পারসপেকটিভে ট্যাক্স ফাঁকিটা ঘটে। এটা আমরা প্রায়োরিটি ঠিক করে ধীরে ধীরে করব।’ মাছের উৎপাদন বাড়াতে আয়করে ছাড় দেয় এনবিআর। তখন আয় ৩০ লাখের বেশি হলে কর ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। কর কম হওয়ায় অনেকেই এখাতের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ বৈধ করার সুযোগ নেন।