নাশকতার বড় প্লান চক্রের! নানা আশংকায় ৫ জোড়া ট্রেন বন্ধ
বিশেষ প্রতিনিধি : বড় ধরনের নাশকতার প্লান নিয়ে এগুচ্ছে বিএনপি জামায়াত। জনগনকে ভয় দেখাতে এমন টার্গেট করেছে বিএনপি জামায়াত চক্র। ট্রেন নাশকতায় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গ্রেফতারকৃতরা গোয়েন্দাদের বলেছে, সামনে আরো বড় প্লান রয়েছে তাদের। মানুষ যাতে ভোট কেন্দ্রে না যায় তারা সে ধরনের তৎপরতার ফাঁদ তৈরী করছিল। এদিকে নাশকতার আশংকায় ৫ জোড়া ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলওয়ের ডিভিশনাল ম্যানেজার শফিকুর রহমান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন, নাশকতার আশঙ্কা থেকেই দেশজুড়ে কয়েকটি পথে পাঁচ জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। রেলের নিরাপত্তা জোরদার করতে ইতোমধ্যে ২ হাজার ৭০০ আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন সার্বিক পরিস্থিতি জানাতে শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) কমলাপুর রেলস্টেশনে তিনি একটি ব্রিফিংও করেছেন।এসময় তিনি বলেন, নাশকতার আশঙ্কায় এখন পর্যন্ত পাঁচ জোড়া ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে ভূয়াপূর, জামালপুর থেকে সরিষাবাড়ী ও যমুনা এক্সপ্রেস আংশিক বন্ধ করা হয়েছে। এগুলো রিমোট এরিয়া এবং রাত্রিকালীন যাত্রা হওয়াতে কোনো দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, তাই বন্ধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে অ্যাডভান্স পাইলটিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী তাদের স্থাপনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন।২০১৪ সালে যেসব যেসব জায়গায় নাশকতা হয়েছিল, সেসব জায়গাগুলোতেই নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কারণ সমগ্র লাইনের কোথায় কোথায় নাশকতা হতে পারে তা আগাম বলা সম্ভব না। আনসার মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় স্থানীয় পর্যায়ে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। যেহেতু নাশকতার ধরন চেঞ্জ হয়েছে, সেহেতু আরও আনসার মোতায়েন করা হতে পারে। ইতোমধ্যেই ২ হাজার ৭০০ আনসার মাঠপর্যায়ে মোতায়েন করা হয়ে গেছে।
এদিকে আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের জন্য আরো কি ধরনের নাশকতার পথ বেছে নেয় বিএনপি-জামায়াত তা পর্যবেক্ষণ করছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা।
গত ১৫ ডিসেম্বর উত্তর এক্সপ্রেসে নাশকতার ঘটনা ঘটে। মধ্যযুগীয় কায়দায় ট্রেনের একটি বগিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এখানে প্রাণ হারান কয়েকজন নিরীহ মানুষ। একই কায়দায় আরও কয়েকটি ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনার কথা জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই তথ্য রেলওয়ে বিভাগকে জানানোর পর আজ ছয়টি ট্রেনের যাত্রা স্থগিত করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে যে, নির্বাচনের আগে জনগণের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর এই নাশকতার মূল টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে জনগণকে।
উত্তর এক্সপ্রেসে নাশকতার ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের প্রাথমিক স্বীকারোক্তিতে স্বীকার করেছে যে, বিএনপির উর্ধ্বতন নেতাদের নির্দেশে তারা এই নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে। আর এই ঘটনা ঘটানোর প্রধান কারণ হলো দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা। শুধু যে রেলওয়ে নাশকতার ঘটনা ঘটানো হবে এমনটি নয়, রেলের বাইরেও বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র তথ্য পেয়েছে।
বিশেষ করে নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে ততই টার্গেট কিলিং, বিভিন্ন প্রার্থীদের টার্গেট করে তাদের প্রাণহানির চেষ্টা করা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করা, বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং নির্বাচনী কেন্দ্রে ঝটিকা আক্রমণ করে অন্যরকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করাই বিএনপি-জামায়াতের লক্ষ্য।
বিএনপি-জামায়াত মনে করছে যে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের গতি বাড়ানো সম্ভব নয়। সেই সাংগঠনিক সক্ষমতা বিএনপির নেই। আর এই কারণেই তারা এখন কোন একটা নাশকতা করে জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করতে চাইছে। জনগণ যেন ভয় পেয়ে নির্বাচনে না যায় বা বড় ধরনের ঘটনা দেশে যেন অন্য কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এরকম একটি চিন্তাভাবনা থেকেই পরিকল্পিতভাবে এই নাশকতা গুলো ঘটানো হচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করে। এবং সেই নাশকতার সমস্ত নির্দেশনাগুলো আসছে লন্ডন থেকে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া সরাসরি ভাবে এই ঘটনাগুলোর মনিটরিং করছেন বলেও একাধিক গোয়েন্দা সূত্র তথ্য পেয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত পুরো আন্দোলনকে লেজেগোবরে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন গতিহীন এবং দিকহারা হয়ে পড়ে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোন কিছু না বুঝেই, বাস্তবতা উপলব্ধি না করেই বিএনপির পক্ষ থেকে সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় তা পুরোপুরি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এই অসহযোগ আন্দোলন যে সফল হবে না তা বুঝতে পেরে এখন একমাত্র ভরসা অগ্নিসংযোগ, গুপ্ত হামলা, সন্ত্রাস এবং বড় ধরনের নাশকতার মাধ্যমে নির্বাচনকে বানচাল করা। আর সেপথেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনে করছে। আর সেক্ষেত্রে গোয়েন্দা অনুসন্ধান বাড়িয়ে দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।যাতে নতুন করে বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়ানো যায়। ইতিমধ্যে এর সফলতাও এসেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থা।