• বৃহস্পতিবার , ২ মে ২০২৪

নারী জেএমবিরা আত্মঘাতি হামলার পরিকল্পনা করছিল-কমান্ডার আকলিমা


প্রকাশিত: ৮:২২ পিএম, ১৮ অক্টোবর ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৬ বার

বিশেষ প্রতিনিধি  :  ধর্মের অপব্যাখ্যা বা কথিত ফিদায়ী জেহাদের নাম করে জেএমবি নারীদের দিয়ে আত্মঘাতী ইউনিটে lady-jmb-aklima-www-jatirkhantha-com-bdসংগঠিত করছিল। এদের সঙ্গে রয়েছে অর্ধশতাধিক নারী জেএমবি। গাজীপুরে জেএমবির নিহত কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম আকাশ এদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল।

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে জেএমবির পুরুষ সদস্যরা মারা গেলে আত্মঘাতী দলের নারী সদস্যরা যে কোনও ধরনের আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।  গ্রেফতারকৃত আকলিমা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার 2করেছে এসব তথ্য।
আকলিমা স্বীকারোক্তি দিয়েছে, গাজীপুরে জেএমবির নিহত কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম আকাশ ও পলাতক নেতা আবু তালহা রবিনের মাধ্যমে আকলিমাসহ আকাশের স্বজনরা মূলত দু’বছর আগে  দীক্ষা নিয়েই আত্মঘাতী ইউনিট গঠন করে আত্মপ্রকাশ করে।

আকলিমা জানায়, জেএমবি’র পুরুষ সদস্যরা প্রাণ হারালে আত্মঘাতী ইউনিটের নারী সদস্যদের পরবর্তী আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা’য় ছিল। সেজন্য সংগঠনের নির্দেশে তাদেরকে মানসিকভাবে প্রস্তুত রাখা হতো। জেএমবির আত্মঘাতী ইউনিটের নারী কমান্ডার আকলিমা খাতুন ওরফে আছিয়া (২৫) ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে। গত শনিবার রাতে ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয় সে।

আটক হওয়ার পর ডিবি পলিশের কাছে আকলিমা নিজেকে জেএমবির আত্মঘাতী দলের সক্রিয় নারী কমান্ডার হিসেবে পরিচয় দিয়েছে। গাজীপুরে পুলিশের  অভিযানে নিহত জেএমবির সামরিক কমান্ডার ফরিদুল ইসলাম আকাশের মা ফুলেরা বেগম, দু’বোন শাকিলা ও সালমা খাতুন ছাড়াও প্রতিবেশী ভ্যান চালক রফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাজিয়া বেগম তার ইউনিটের সদস্য। তারা সকলেই আকাশের প্ররোচনায় আত্মঘাতী ইউনিটের নারী সদস্য হিসেবে জেএমবিতে দলভুক্ত হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের ওসি ওয়াহেদুজ্জামান জানান, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাতে গিয়ে জেএমবির পুরুষ সদস্যরা মারা গেলে আত্মঘাতী দলের গ্রেফতারকৃত এই নারী সদস্যরা যে কোনও ধরনের আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। আকলিমাসহ অন্যরা তাদের  স্বীকারোক্তিতে এসব জানিয়েছে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর আকাশের মা ও বোনসহ চার জন আত্মঘাতী সদস্য আটকের পর আকলিমার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। আকাশের মা-বোনরা আকলিমার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায়  স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তারা আটক হলেও তখন আকলিমা ছিল পলাতক। তখন থেকেই তাকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালানো হয়। এরপর গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) সে ধরা পড়ে। ডিবি পুলিশ জানায়,এরা সবাই ফিদায়ী হিযরত বা আত্মঘাতী হামলার অপেক্ষায় ছিল।

ডিবি পুলিশের সেকেন্ড অফিসার রওশন আলী বলেন, ‘জেলায় গত এক বছরে ২৯ জন জেএমবি সদস্য ধরা পড়েছে। তাদের বেশির ভাগ আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের অনুসারী। ফরিদুল ইসলাম আকাশ এবং আত্মঘাতী দলের সদস্য তার মা-বোন, আকলিমা, রাজিয়া এবং জেএমবির জেলা ক্যাশিয়ার কাজীপুরের গান্ধাইল গ্রামের অধিবাসী আবু বকর সিদ্দিকী আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের অনুসারী। কাজীপুরের আলোচিত বরইতলা এবং আশেপাশেসহ পুরো উপজেলায় প্রায় ৩০ থেকে ৩২ হাজার আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের অনুসারী আছে। ’

পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহম্মেদ সোমবার দুপুরে জাতিরকন্ঠকে বলেন, আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের সবাই যে জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত বা এর অনুসারী, আমরা তা বলছি  না। তবে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলে জেএমবির সম্পৃক্ততার অভিযোগে যারা আটক হয়েছে, তাদের অধিকাংশই আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, এটা নিশ্চিত যে, সিরাজগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী সফল অভিযানে আত্মঘাতী নারী সদস্যসহ এ পর্যন্ত ২৯ জন আটক হওয়ায়, এ জেলা অনেকটাই সুরক্ষিত। বড় কোনও ঘটনা বা হামলার আগেই এদেরকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা বা কথিত ফিদায়ী জেহাদের নাম করে নারীদের যেভাবে আত্মঘাতী ইউনিটে সংগঠিত করা হচ্ছিল, তাতে বড় ধরনের ঘটনার আভাস পাওয়া যায়। আর সেটা ঘটার আগেই এরা ধরা পড়েছে।

এদিকে, সোমবার দুপুরে সাংবাদিকরা কাজীপুরের বরইতলা গ্রামে গেলে আকলিমার বাবা বা অন্য ভাই-বোনদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার মা মরিয়ম বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবারে আমরা গরিব মানুষ। স্বামী কামারের কাজ করে খায়। মেয়েটাকে খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করাচ্ছিলাম। পড়াশুনা করতে গিয়ে সে কী করেছে, আমরা তা কিছুই জানি না।

একই গ্রামের বাসিন্দা গান্ধাইল ইউপি সদস্য আসাদুল ইসলাম বলেন, ফরিদুল ইসলাম আকাশ এবং আকলিমাসহ বাকি যারা জেএমবি সম্পৃক্ততার দায়ে ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়েছে, সবাই গরিব এবং দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। এলাকায় তাদের সেভাবে কর্মকাণ্ডও ছিল না। ভেতরে ভেতরে যে তারা এত বড় ধরনের কিছু, তা আমরা কখনোই টের পাইনি। এখন তাদের কারণে আমরা বাইরে মুখ দেখাতে পারছি না। তাদের কারণে সবার কাছে পুরো গ্রামটিই যেন জেএমবি হয়ে গেছে।

গান্ধাইল ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম বলেন, আমি নিজে এবং আমার বাপ-দাদা সবাই আমরা আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের। আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের সবাই যে জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত, এটা সত্য না। সে যে ধরনের কর্ম করবে, তার ফল সে ভোগ করবে। আকাশ, তার মা-বোন, আকলিমা বা আবু বক্কার হুজুরসহ যাদের বিরুদ্ধে জেএমবির সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে, তারা পথভ্রষ্ট। তাদের বিষয়ে আমরা কোনও  দায়-দায়িত্ব নেবো না।