নারীর গলাকাটা লাশ নিয়ে তুলকালাম-দাফনকালে মোবাইলে ‘মৃত’ স্ত্রীর ফোন!
নাটোর জেলা প্রতিনিধি : পাঁচদিন আগে কাটাশকোল গ্রামের নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার স্ত্রী আশরাফুন বেগমের (৪০) ঝগড়া হয়। ওইদিনই স্বামীর ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান আশরাফুন। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না।
সেই আশরাফুনকেই মৃত ভেবে চলছিল স্বামী-সন্তান, আত্মীয়-স্বজনদের কান্নাকাটি। শোকে পাথর হয়ে গিয়েছিলেন সবাই। মরদেহ দাফনের জন্য বাড়ির অদূরে বাগানে কবরও খোঁড়া হয়। দাফনের জন্য যাবতীয় সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন। কবরে শোয়ানোর ঠিক আগ মুহূর্তে স্বজনদের কাছে একটি মোবাইলে কল আসে। ফোন করেছেন স্বয়ং আশরাফুন, যাকে সমাহিত করার আয়োজন চলছিল সেখানে।
সবাই হতভম্ব। যাকে কবর দেয়া হচ্ছে সে আবার কীভাবে মোবাইলে কল দিতে পারে? এক পর্যায়ে সবাই বুঝতে পারে অন্য কারো মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে মর্গ থেকে। এ ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার (২৭ মে) নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোয়াড়ি ইউনিয়নের কাটাশকোল গ্রামে।
গত বুধবার (২৫ মে) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বিলগোপালহাটি এলাকার আম বাগানের পাশের গর্তে এক নারীর মস্তকবিহীন লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নিহতের মাথা না থাকায় সঠিক পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না।
অজ্ঞাত পরিচয় নারীর মস্তকবিহীন মৃতদেহ উদ্ধারের খবরটি পরদিন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় খবর পড়ে মৃতদেহটি আশরাফুনের দাবি করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন কাটাশকোল গ্রামের নজরুল ইসলাম ও তার স্বজনেরা। শুক্রবার বিকেলে লাশ বাড়ি আনার পর কান্নার রোল পড়ে যায়। সন্ধ্যা অবধি লাশ জড়িয়ে কান্নাকাটি আর বিলাপ চলে স্বামী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের। এক পর্যায়ে বাড়ির অদূরে বাগানে কবর খোঁড়া শেষ হয়।
আশরাফুনের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেয়েটি স্বামীর সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। শাশুড়ির মৃত্যুর সংবাদ দিয়ে মেয়েকে নিয়ে দ্রুত বাড়িতে আসার জন্য ঢাকায় জামাইকে ফোন করা হয়। খবর পেয়ে মেয়ে-জামাই ঢাকা থেকে রওনা দেয়।
তবে পথিমধ্যে অন্য একটি নম্বর থেকে মায়ের ফোন পেয়ে চমকে যান মেয়ে। বিস্তারিত বলার পর আশরাফুন পরে তার স্বামী ও স্বজনদের কাছেও ফোন দেন। বিস্ময়ে থ হয়ে যায় সবাই। অবশেষে বিস্ময়ের ঘোর কাটলে সবাই বুঝতে পারেন লাশটি আশরাফুনের নয়, অন্য কারো। পরে মরদেহ ফিরিয়ে দিয়ে আসা হয় হাসপাতাল মর্গে।
বড়াইগ্রাম উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হেলেনা বেগম জানান, নজরুল ইসলামের স্ত্রী আশরাফুন বেগম ৫ দিন আগে স্বামীর ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই সবাই ভেবে নিয়েছিল তাকে কেউ হত্যা করে মস্তকবিহীন লাশ ফেলে গেছে। তবে ফিরিয়ে দিয়ে এলেও এখনও অজ্ঞাতপরিচয়ই থেকে গেছে ওই নারীর লাশ।