• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

নানা ভোগান্তিতে ঈদে বাড়ি ফেরা


প্রকাশিত: ৩:২৭ এএম, ৪ অক্টোবর ১৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮০ বার

 

eid-1

 

 

 

 

 

 

 স্টাফ রিপোর্টার.ঢাকা:
মহাসড়কে যানজট ও ধীরগতি, ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয়, লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছানো ও লঞ্চে ওঠার আগ পর্যন্ত ভোগান্তি—এসব সঙ্গী করে ঈদে ঘরমুখী মানুষ গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকা ছেড়েছে।

যাত্রা-পূর্ব ও পথের কষ্ট-ভোগান্তি সত্ত্বেও তাঁরা বাড়ি যাচ্ছেন আনন্দ নিয়ে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে।
সড়কপথে আগের চার দিনের মতো গতকালও সবচেয়ে দীর্ঘ যানজট ছিল ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে।

ফলে উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েক জেলা, টাঙ্গাইল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের একাংশের যাত্রীদের ভোগান্তি-কষ্টও বেশি। ছিল পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও মাওয়া ঘাটকেন্দ্রিক যানজট। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদেরও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবশ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এমন ভোগান্তি ছিল না। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে কিছু ধীরগতি থাকলেও জট ছিল না।

আগের দিনও প্রায় ঠিক থাকা ট্রেনের সময়সূচিতে গতকাল বিপর্যয় ঘটে। ট্রেনগুলো ছেড়েছে নির্ধারিত সময়ের দুই থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে। ট্রেনগুলোর যাত্রীতে গাদাগাদি থাকা বগির ছাদেও ছিল অনেক যাত্রী। লঞ্চে অবস্থা এর চেয়ে ভালো হলেও যাত্রীদের জিরো পয়েন্টের সামনে থেকে তীব্র যানজট ঠেলে পৌঁছাতে হয়েছে সদরঘাট টার্মিনালে। এরপর ঝক্কি পোহাতে হয় লঞ্চে উঠতে। এত কিছুর পরও অধিকাংশ মানুষের মুখে ছিল হাসি-আনন্দ।
বিপুল মানুষ ঢাকা ছাড়ায় ফাঁকা হয়ে গেছে রাজধানী। টার্মিনাল, পশুর হাট ও বিপণিবিতানমুখী সড়ক ছাড়া নগরের অন্য সড়কগুলো এখন যানজটমুক্ত।
পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে ঘরমুখী মানুষের মূল চাপ শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে। মহাসড়কগুলোতে বেড়েছে যানবাহনের চাপ। গতকাল এই চাপ আরও বেড়েছে। মহাসড়কে জটের প্রভাবে যাত্রার সময়েও বিলম্ব ঘটেছে। কোনো কোনো বাস নির্ধারিত সময়ের দুই-আড়াই ঘণ্টা পরে ছেড়েছে। এতে বাস টার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের। পরিবহনমালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা গেছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর থেকে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজট ছিল গতকাল। এতে ভোগান্তিতে পড়ে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে মির্জাপুরের দেওহাটা এলাকা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলোমহাসড়কে দুর্ভোগ: পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, পুলিশ ও অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে

ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে উত্তরাঞ্চলের ১৭ জেলার যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ওই মহাসড়ক দিয়ে টাঙ্গাইল, বৃহত্তর ময়মনসিংহের একাংশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলার যানবাহনও চলাচল করে।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মহাসড়কের মির্জাপুরের নাটিয়াপাড়া ও জামুর্কি এলাকায় গরুবাহী দুটি ট্রাক বিকল হয়ে পড়ে। এতে মহাসড়কের এক পাশ দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে যানজট হতে থাকে। ভোর চারটার দিকে মির্জাপুরের শুভুল্যা এলাকায় বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়। জট বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। যানজটের কারণে ভোর চারটা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত মহাসড়ক প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। এতে ঘরমুখী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে।
গতকাল দুপুর পর্যন্ত মির্জাপুর থেকে চন্দ্রার মধ্যবর্তী বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে প্রায় ২৫ কিলোমিটারের মতো যানজট ছিল। তবে সন্ধ্যার আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই লেনের মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহন চলছে। দুর্ঘটনাকবলিত যান সরিয়ে নিতেও সময় লাগছে। এসব কারণে জট লাগছে। তবে পুলিশ যানজট নিরসনে আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
অবশ্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। যানবাহনের চাপ বেশি থাকলেও গাজীপুর অংশে কোনো যানবাহনকে জটের কারণে থেমে থাকতে হয়নি বলে জানান গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন।

মাওনায় চার লেনের কাজ চলায় যানগুলো চলেছে ধীরগতিতে।
পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ করে দেওয়ায় গতকাল দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে পরিস্থিতি ছিল সহনীয়। তবে নদীর এপারে পাটুরিয়া ঘাটে এবং ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটে পড়তে হয়েছে মানুষকে। ওই মহাসড়ক দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাচ্ছে ঘরমুখী মানুষ, আর ঢাকায় আসছে পশুবাহী ট্রাক। ফলে মহাসড়কে যানবাহনের ব্যাপক চাপ রয়েছে। এর ওপর স্থানে স্থানে গতিরোধক, বাস থামানোর কারণে গতি ধীর হয়ে যাচ্ছে।
সন্ধ্যায় পাটুরিয়া ঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় ছিল শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ও তিন শতাধিক গাড়ি।

মাওয়া ফেরিঘাটে গতকাল প্রায় দুই কিলোমিটার যানজট হয়।
টার্মিনালে যাত্রীদের অপেক্ষা: মহাসড়কে যানজটের কারণে বাস আটকে থাকায় গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও বিভিন্ন বাসের কাউন্টারে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে যাত্রীদের। eid-2

যাত্রীর তুলনায় বাস কম থাকায় অপেক্ষা দেখা গেছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও এর আশপাশের কাউন্টারগুলোতে।
সায়েদাবাদে সকাল ১০টার দিকে বাসের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী সায়মা রহমান বললেন, তিনি যাবেন চট্টগ্রামে। তাঁর বাস ছাড়ার কথা ছিল সকাল সোয়া নয়টায়। এখনো বাস আসেনি।
সায়েদাবাদে এস আলম কাউন্টারের কর্মী রাশেদ বললেন, বাসগুলো ধীরগতিতে আসছে। এ জন্য সময়সূচি সামান্য এদিক-ওদিক হচ্ছে।

এর পরও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রীরা ছিলেন স্বস্তিতে। কারণ, বাস ছাড়তে দেরি হলেও পথে যানজট ছিল না। ধীরগতি ছিল।
মহাখালীতে ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের চালক শামসুল ইসলাম বললেন, উত্তরা পর্যন্ত কোনো যানজট নেই। তবে আবদুল্লাহপুর থেকে গাড়ির গতি খুব কম থাকে। এ জন্য ওই পথের গাড়িগুলোর গন্তব্যে আসতে অতিরিক্ত সময় লাগছে।
ওই পথের কয়েকজন চালক জানান, গাজীপুর-কোনাবাড়ী রোড ও গাজীপুর চৌরাস্তা পেরোতেই সময় বেশি লাগে।
উত্তরবঙ্গের এসআর পরিবহনের এক চালক বললেন, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। এ কারণে তাঁর আসতে অতিরিক্ত তিন ঘণ্টা লেগেছে।
শ্যামলী পরিবহনের উত্তরবঙ্গ (বগুড়া অঞ্চল) ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার জানান, ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার রাতে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের ৬০টির মতো কোচ যানজটে আটকে পড়ায় সকালেও বগুড়ায় পৌঁছেনি।

কমলাপুর রেলস্টেশন: গতকাল ট্রেনের সময়সূচিতে বিপর্যয় ঘটে। এতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে অপেক্ষা করতে হয়। ঢাকা থেকে দিনাজপুরগামী ট্রেন দ্রুতযানের ছেড়ে যাওয়ার কথা সন্ধ্যা ছয়টায়। কিন্তু স্টেশন থেকে জানানো হয়েছে, রাত ১২টার আগে এটি ছাড়বে না। সন্ধ্যা সাতটার দিকেও ট্রেনটি কমলাপুরে এসে পৌঁছায়নি। একই অবস্থা চট্টগ্রামগামী গোধুলি এক্সপ্রেসের। ট্রেনটি ঢাকা থেকে বিকেল চারটা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু সময়সূচি বিপর্যয়ের কারণে এর নতুন সময়সূচি ঠিক করা হয়েছে রাত ১০টায়। অন্যদিকে নোয়াখালীগামী উপকূলের তিনটা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছায়নি। তবে সকালের দিকে ট্রেনের সময়সূচি কিছুটা ভালো ছিল।

লঞ্চ: কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সকাল থেকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। টার্মিনাল, পন্টুনের কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। যাত্রীর তুলনায় বরগুনা, আমতলী, হাতিয়া, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, হুলারহাটসহ কয়েকটি নৌপথে লঞ্চ-সংকট দেখা দেয়। যাত্রীদের টার্মিনালে আসতে যানজটের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।

এদিকে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও নানা অনিয়মের কারণে রাজদূত-৭, কর্ণফুলী-৩ ও এমভি পানামা লঞ্চকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই হয়ে যাওয়ায় কোকো-৭, পূরবী-৭, মেঘদূতসহ সাতটি লঞ্চকে নির্ধারিত সময়ের আগেই বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে নৌ-পুলিশ।