নাটোরের ‘কীর্তিমান’ ৩ যুবলীগার যে কারণে খুন হলেন-
- নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের নিহত ৩ যুবলীগার খুনের নেপথ্যে বেরিয়ে আসছে নানা রহস্যময় কাহিনী। পুলিশের ভাষায় ‘কীর্তিমান মহান’ এই ৩ যুবলীগার ছিলেন নানাভাবে বিতর্কিত ।এদের চাঁদাবাজি ধান্ধাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল মানুষ।অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পুলিশের এক কর্তা দাবি করেন, নিহত ব্যক্তিরা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। রেদোয়ান সাব্বিরের বিরুদ্ধে বাড়ির সামনে দলীয় অফিস বানিয়ে সেখানে বিচার-সালিসের নামে অনেককে মারধর করা হতো। চাঁদা আদায় করা হতো। সাব্বির বাহিনী নামে তাঁর একটি বিশেষ বাহিনীও রয়েছে।
যুবলীগার যে কারণে খুন হলেন-
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তিন যুবককে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে নাটোর যুবলীগ। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে ওই তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আজ সোমবার দুপুরে নাটোর প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় জেলা, উপজেলা ও পৌর যুবলীগ। তাদের অভিযোগ, সংগঠনের তিন নেতা-কর্মীকে দুষ্কৃতকারীরা নাটোর থেকে অপহরণ করে হত্যা করার পর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রাণীগঞ্জ এলাকায় ফেলে রেখে গেছে। তারা সরকারের কাছে দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
এর আগে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে গুলিবিদ্ধ তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে থানা-পুলিশ। সোমবার সকালে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের পাশে উপজেলার কলাপাড়া এলাকায় পুলিশ বক্সের ৫০০ গজ পূর্ব দিকে একটি আমবাগান থেকে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করা হয়। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) পরিচয়ে ওই তিন যুবককে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন নিহত এক যুবকের মা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন। সে সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সাঈম হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুল হাসান।সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রেদোয়ান সাব্বির (৩২) শনিবার রাতে যুবলীগ কর্মী আবদুল্লাহ (২৭) ও সোহেল হোসেনকে (২৫) নিয়ে ব্যবসার কাজে সদর উপজেলার টকিয়া বাজারে যান।
সেখানে এক চায়ের দোকানে বসে থাকার সময়ে রাত ১১টার দিকে ১৫-১৬ জন মুখোশ পরা দুষ্কৃতকারী তাঁদের জোর করে সাদা ও কালো রঙের দুটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তাঁদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সোমবার সকালে গণমাধ্যমে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকায় তিন যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়ার খবর পেয়ে তাঁরা যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন যে ওই মরদেহগুলো নিখোঁজ যুবলীগ নেতা-কর্মীদের।
সাধারণ সম্পাদক এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করে বলেন, কারা তাঁদের অপহরণ করে হত্যা করেছে, তা তদন্ত করে দেখা হোক। দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সাঈম হোসেন বলেন, নেতা-কর্মীরা নিখোঁজ হওয়ার পর একজনের পক্ষে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হত্যাকারীদের খুঁজে বের করতে অনুরোধ জানিয়েছি।নাটোর সদর থানা সূত্রে জানা যায়, নিহত যুবলীগ নেতা রেদোয়ান সাব্বিরের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে শহরের অপর যুবলীগ নেতা রাসু হত্যা মামলারও আসামি।
তা ছাড়া নিহত সোহেলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। তবে পুলিশ জানাতে না পারলেও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক আইনজীবী সাঈম হোসেন জানান, আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। তাঁরা সবাই সব মামলায় জামিনে মুক্ত ছিলেন। সর্বশেষ রেদোয়ান সাব্বির গত বৃহস্পতিবার তাঁর মাধ্যমে আদালতের একটি মামলায় জামিন নিয়েছেন।
জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, নিহত ব্যক্তিরা সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। রেদোয়ান সাব্বিরের বিরুদ্ধে বাড়ির সামনে দলীয় অফিস বানিয়ে সেখানে বিচার-সালিসের নামে অনেককে মারধর করা হতো। চাঁদা আদায় করা হতো। সাব্বির বাহিনী নামে তাঁর একটি বিশেষ বাহিনীও রয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মসজিদ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
গত বছরের ১৩ আগস্ট র্যাবের সদস্যরা কানাইখালী এলাকায় স্থানীয় সাংসদ শফিকুল ইসলামের সভাস্থল থেকে সাব্বিরকে আটক করলেও পরে তিনি নাটোর সদর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পালিয়ে যান। এ বিষয়ে র্যাবের হাতে আটক, পরে পলায়ন শীর্ষক খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি। তবে নিহত আবদুল্লাহর মামা সোমবার দুপুরে তাঁর বাসায় এই প্রতিনিধিকে বলেন, এটা একটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাঁর ভাগনে আবদুল্লাহ ভালো ছেলে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের ধরে ষড়যন্ত্র মূলকভাবে আবদুল্লাহকে খুন করা হয়েছে।
নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, যুবলীগ কর্মীদের নিখোঁজের ব্যাপারে সদর থানায় সাব্বিরের মা সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তাতে তিনি তাঁর ছেলে সাব্বিরসহ অপর দুজনের অপহরণের কথাও উল্লেখ করেছেন। জিডিতে তিনি র্যাব পরিচয়ে তাঁদের তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।তবে র্যাব নাটোর ক্যাম্পের কমান্ডার পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান দাবি করেন, র্যাব এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। কারা কেন তাঁদের অপহরণ করেছে বা হত্যা করেছে, তা তাঁদের জানা নেই।