• বুধবার , ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

নাইকো দুর্নীতি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন নিলেন খালেদা জিয়া


প্রকাশিত: ৫:৩৭ পিএম, ৩০ নভেম্বর ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৮ বার

khalada-www.jatirkhantha.com.bdবিশেষ প্রতিবেদক:   দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ সোমবার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি ২৮ ডিসেম্বর। ওই দিন অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে।

ঢাকার বিশেষ জজ-৯ এর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন খালেদা জিয়া। শুনানি শেষে তাঁর আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক আমিনুল ইসলাম।জামিন মঞ্জুর করার পাশাপাশি আদালত বলেন, এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ আগামী ২৮ ডিসেম্বর। ওই দিন অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে। ওই দিন খালেদা জিয়াসহ এই মামলার অন্য আসামিদের আদালতে হাজির থাকতে বলেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ-৯ এর আদালতে এই মামলার বিচারকাজ চলছে। অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে থাকা এই মামলার কার্যক্রম প্রায় সাত বছর ধরে স্থগিত ছিল।হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী আজ বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন খালেদা জিয়া।

জামিনের আবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়া অসুস্থ। লন্ডনে তাঁর এক চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। আরও চিকিৎসা বাকি রয়েছে। এই মামলায় তিনি আগে জামিনে ছিলেন। জামিন অপব্যবহার করেননি তিনি। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করার আরজি জানানো হয়।বেলা সোয়া ১১টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে দিকে আদালতে হাজির হন তিনি।

খালেদা জিয়া আদালতে আসার আগেই তাঁর আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।খালেদা জিয়ার জামিনের পক্ষে তাঁর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। এই মামলায় খালেদা জিয়া আগে জামিনে ছিলেন উল্লেখ করে পূর্বের শর্তে তাঁর জামিন চান খন্দকার মাহবুব।

খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে অন্য আসামিদের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি করেছেন। এ কারণে তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করার আরজি জানান এই আইনজীবী।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদেশ দেন আদালত।

খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণকে কেন্দ্র করে আজ ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জজ কোর্ট এলাকার চারদিকে প্রতিবন্ধকতা (ব্যারিকেড) দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়।নিরাপত্তার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রবেশের একটি ফটক পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সকাল থেকেই আদালত এলাকাজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবের একাধিক দল তৎপর ছিল।
নাইকো দুর্নীতি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদন ও এ-সংক্রান্ত রুল গত ১৮ জুন খারিজ করেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। রায়ে আদালত বলেন, বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হলো। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তবে জামিন অপব্যবহার না করার শর্তে খালেদা জিয়ার জামিন বিবেচনা করবেন আদালত। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতির মামলাসহ দুর্নীতির পাঁচটি মামলা রয়েছে। এক-এগারোর পরের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ মামলাগুলো করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

পরে নাইকো মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি রুল দেন হাইকোর্ট। ওই সময় থেকে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল। চলতি বছরের শুরুতে মামলাটির কার্যক্রম আবার চালু করার উদ্যোগ নেয় দুদক। গত ১৯ এপ্রিল রুল শুনানি শুরু হয়, ২৮ মে শেষ হয়। ১৮ জুন রায় ঘোষণা করা হয়।