• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

নাইকোর কাছে হারলো কেন পেট্রোবাংলা?


প্রকাশিত: ১১:১৩ এএম, ১ জুন ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৬ বার

সাইফুল বারী মাসুম    :   দীর্ঘ দিন যাবত মামলা পরিচালনায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও অবশেষে naiko-www.jatirkhantha.com.bdকানাডীয় কোম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে কেন  হেরে গেল পেট্টোবাংলা? কেন ২৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকে। এনিয়ে চলছে তেল গ্যাস সেক্টরে জমজমাট আলোচনা-সমালোচনা।

ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম বাবদ কানাডীয় কোম্পানি নাইকো রিসোর্সেসকে এই ২৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আদালত (ইকসিড)।

বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার আপিল শুনানি শেষে গত ২৬ মে আগের আদেশই বহাল রাখে ইকসিড।ইকসিডের রায়ের ভিত্তিতে গত সোমবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে নাইকো, যদিও ইকসিড এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেনি।

ইকসিডের রায়ের বরাত দিয়ে নাইকোর বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০১০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বাবদ নাইকোকে দেশী ও আন্তর্জাতিক মুদ্রায় ২৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা দিতে হবে পেট্রোবাংলাকে। এর মধ্যে ১৯৫ কোটি টাকা ডলারে ও বাকি ১৪ কোটি টাকা বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। ওই অর্থের সঙ্গে ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত সুদ বাবদ ৫১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নাইকোকে দিতে বলা হয়েছে।

এর মধ্যে ৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ডলারে এবং ৫ কোটি টাকা বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী সময়ের জন্য লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেটের (লাইবর) চেয়ে ২ শতাংশ অধিক হারে ডলারে ও ৫ শতাংশ হারে বাংলাদেশি টাকায় সুদ পরিশোধ করতে হবে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে এ পাওনা পরিশোধ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি আদালতের পাল্টা কোনো আদেশ গ্রহণযোগ্য হবে না। পাওনা পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলে পেট্রোবাংলা ও নাইকো বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালের আদেশ বহাল থাকবে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার সচিব সৈয়দ আশফাকুজ্জামান বলেন, এ নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না। আমাদের চেয়ারম্যান দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে সরকার যে সিদ্ধান্ত  নেবে, আমরা সে মোতাবেক কাজ করব।

জানা যায়, সরকার টেংরাটিলা, ফেনী ও কামতা গ্যাসক্ষেত্রকে ‘প্রান্তিক’ (যে ক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে) দেখিয়ে সেখান থেকে গ্যাস তোলার জন্য ১৯৯৯ সালে নাইকো-বাপেক্স যৌথ উদ্যোগের চুক্তি করেছিল। কিন্তু নাইকোর অদক্ষ কূপ খনন প্রক্রিয়ার কারণে ২০০৫ সালে দুবার (৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন) সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ ঘটে

। এতে ওই গ্যাসক্ষেত্র ও সন্নিহিত এলাকায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ঘটনার পর নাইকোর বিরুদ্ধে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে ২০০৮ সালে ঢাকার দ্বিতীয় জেলা জজ আদালতে মামলা করে পেট্রোবাংলা। সে সঙ্গে ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ বাবদ পাওনা আটকে দেয় পেট্রোবাংলা।

এদিকে টেংরাটিলায় বিস্ফোরণে ক্ষতিপূরণ থেকে রেহাই এবং ফেনী ক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম চেয়ে ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল একটি এবং ১৬ জুন ইকসিডে পেট্রোবাংলার বিরুদ্ধে পাল্টা দুটি মামলা করে নাইকো। ওই মামলার দ্বিতীয় রায়ে ২০১৪ সালে ১১ সেপ্টেম্বর ইকসিড নাইকোর গ্যাসের দাম পরিশোধ-সংক্রান্ত মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়।

পরে তা চ্যালেঞ্জ করে আপিল করে পেট্রোবাংলা। ইকসিডে পেট্রোবাংলার পক্ষে তখন মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ। তিনি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির স্বামী। বর্তমানে মামলাটি পরিচালনা করছেন মার্কিন আইনি সংস্থা ‘ফলি হক’। গত ২৬ মে তৃতীয় রায়ে পেট্রোবাংলাকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আদেশ দেয় ইকসিড।

এদিকে গত ২৫ মার্চ আগের অভিযোগ বাতিল এবং প্রায় সোয়া ৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে নাইকোর বিরুদ্ধে ইকসিডে মামলা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)।