• রোববার , ১৭ নভেম্বর ২০২৪

নর্থ সাউথের জঙ্গি জামাই শ্বাশুড়িকে বানালো নারী জিহাদী


প্রকাশিত: ৯:৩৬ পিএম, ২২ জুলাই ১৬ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯১ বার

এস রহমান  :  নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া জঙ্গি জামাই শেষমেষ শ্বাশুড়িকে পটিয়ে পরিবারের Naima-www.jatirkhantha.com.bdসবাইকে বানিয়েছে জঙ্গি জিহাদী।ওরা এখন জঙ্গি দলে। জামাইয়ের কুমন্ত্রে পুরো পরিবারটির এই জিহাদী কাহিনী জানালেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ নাসিমা রহমান।

তিনি বলেন, যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাঈমা আক্তার এর কাহিনী। এই নাইমাই এখন বাংলাদেশ থেকে জঙ্গি দলে যোগ দেয়া জিহাদী নারী।

সূত্র মতে, আধুনিক রুচিসম্পন্ন একজন মানুষ অধ্যাপক নাঈমা আক্তার। চোখে গাঢ় কাজল, হাতে প্রচুর চুড়ি আর ঠোঁটে লিপস্টিক—সাজসজ্জায় এ তিনটি বিষয় তার কমন। পোশাক-আশাকেও অত্যন্ত স্মার্ট। কথা বলেন গুছিয়ে। সম্মোহনী শক্তিতে মানুষকে আকর্ষণ করেন সহজেই।
আধুনিক এই মানুষটি হঠাৎ গেলেন পাল্টে। নিজেকে আবৃত করলেন বোরকায়। কথাবার্তায় এলো পরিবর্তন। যাকে কাছে পান, তার সঙ্গেই ধর্মীয় আলোচনা। পরিবর্তন আসে তার আলোচনায়। ধীরে ধীরে আলোচনায় স্থান পায় জিহাদ। ধর্মান্ধ উগ্রপন্থিদের সপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন পরিচিতজনদের কাছে। নিজেও জড়িয়ে পড়েন জঙ্গি তত্পরতায়। একসময় সব ছাড়েন। পৈতৃক বাড়ি, শিক্ষকতা, আত্মীয়স্বজন, এমনকি দেশের মায়াজালও তাকে আটকাতে পারেনি।

অবশেষে দেশ ছাড়লেন। একা নয়, সঙ্গে শিশুচিকিৎসক স্বামীসহ দুই মেয়ে এবং মেয়ের জামাতাকে নিয়ে। ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া। সেখান থেকে তুরস্ক। পুরো পরিবার এখন সেখানেই। যোগ দিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ধর্মীয় উগ্রপন্থি সংগঠন আইএসে। নাঈমার স্বামী ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক খন্দকার রোকনউদ্দিন। মেয়ে রেজওয়ানা রোকন ও তার স্বামী সাদ কায়েস ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আরেক মেয়ে রামিতা রোকন লেখাপড়া করতেন ভিকারুননিসা নূন স্কুলে। সপরিবারে তুরস্কে পাড়ি জমানো চিকিৎসক খন্দকার রোকনউদ্দিনের স্ত্রী নাঈমা আক্তার হঠাৎ করেই জিহাদের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। আর তার এই জিহাদি মনোভাবাপন্ন হওয়ার পেছনে মেয়েজামাই সাদ কায়েসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন পুলিশ ও স্বজনরা।

তার বিভাগের শিক্ষক, যারা তার সঙ্গে মিশেছেন, তাদের ভাষায়, অত্যন্ত স্মার্ট একজন মানুষ ছিলেন নাঈমা। সাত মাস কলেজে চাকরিকালীন শেষ দিকে বদলে যেতে থাকেন তিনি। জঙ্গি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে তার দেশত্যাগের খবরে হতবাক হয়েছেন সহকর্মীরা। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কয়েক দিন আগে একজন পথচারী আমাকে জানান, এখানকার নাঈমা ম্যাডাম আইএসে যোগ দিয়েছেন। এরপর তার ব্যক্তিগত ফাইল থেকে জানতে পারি, তিনি ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর সরকারি এমএম কলেজে যোগ দেন।

ওমরাহর জন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ছুটির জন্য আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই এখান থেকে তিনি বিমুক্ত হন। ৪৬ দিনের ছুটির পর ওই বছরের ২৮ আগস্ট তার যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু তিনি যোগদান না করায় তৎকালীন অধ্যক্ষ নমিতা রানী বিশ্বাস ১৫ সেপ্টেম্বর মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে তার অনুপস্থিতির বিষয় অবহিত করেন। মন্ত্রণালয় থেকে তার উদ্দেশে একটি চিঠি আসে। ব্যক্তিগত চিঠি বলে তা তার ঢাকার ১১/বি মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে চিঠিটি গ্রহণ না করায় আবার কলেজে ফেরত আসে।’ কলেজ অধ্যক্ষ জানান, ঢাকায় তার পরিবার থাকত বলে তিনি কলেজের ছাত্রী হোস্টেল খালেদা জিয়া হলে একটা কক্ষ নিয়ে থাকতেন।

সেখানে মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে থাকতেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ নাসিমা রহমান। অধ্যাপক নাসিমার কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, মানুষ হিসেবে ভালো ছিলেন নাঈমা। কলেজে যোগদানের সময় শাড়ি পরতেন। পরে তিনি বোরকা পরেন এবং ধর্মীয় লাইনে ধাবিত হন। নাঈমা আক্তারের সহকর্মী অধ্যাপক শেখ নাসিমা রহমান বলেন, ‘হঠাৎ তার কথাবার্তায় কেমন জানি অসঙ্গতি দেখা যায়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া তার মেয়েজামাই তাকে ইসলাম সম্পর্কে তাগিদ দেন বলে তিনি আমাকে বলেন। তবে আমি তাকে বলতাম, ইসলাম তো শান্তির ধর্ম।

তিনি (অধ্যাপক নাঈমা) বলতেন, না, শুধু শান্তির না, জিহাদেরও। আমাদের নবীজিও জিহাদের কথা বলেছেন।’ এ সম্পর্কে তিনি ভিন্নমত পোষণ করেছেন কি না, জানতে চাইলে অধ্যাপক শেখ নাসিমা রহমান বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে তার সঙ্গে তর্কে যেতাম না। তবে শেষ দিকে তাকে ফ্রাসট্রেটেড (হতাশাগ্রস্ত) দেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক নাঈমা ওমরাহ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনুমতি পাননি বলে বিদেশে ট্যুরে গিয়েছিলেন। তবে কোথায় গিয়েছিলেন তা আমাদের বলে যাননি।’

নিখোঁজ নাঈমার বোন ডা. হালিমা আহমেদ বলেন, গত বছর রোজার সময় একদিন তার বোন জানান, তারা সপরিবারে বিদেশ যাচ্ছেন। এর দু-তিনদিন পর সন্ধ্যায় তার বোন আবারও জানান, রাত ২টায় তাদের ফ্লাইট। প্রথমে তারা মালয়েশিয়া যাবেন। এরপর সেখান থেকে তুরস্কের উদ্দেশে রওনা দেবেন। স্বামী ডা. রোকনউদ্দিন সেখানে একটি হাসপাতালে চাকরি পেয়েছেন। এর আগে ডা. রোকনউদ্দিন ঢাকা শিশু হাসপাতালের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন।

ডা. হালিমা আরও বলেন, তারা চলে যাওয়ার পর থেকে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এর পর থেকে ডা. রোকনউদ্দিনের বড় ভাই আফাজ উদ্দিনের ছেলেমেয়েরা তাদের সাতটি ফ্ল্যাট দেখাশোনা করছেন। চলতি বছর রোজার সময় একটি বিদেশি নম্বর থেকে তার মোবাইল ফোনে কল আসে। অপর প্রান্ত থেকে নাঈমা আক্তার জানান, তারা তুরস্কে আছেন এবং ভালো আছেন। এর বেশি কথা হয়নি।

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম নিখোঁজ চিকিৎসকের ভাই আফাজ উদ্দিনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গত বছর জুনে ডা. রোকনউদ্দিন, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও জামাতা তুরস্ক চলে যান। এর পর থেকে তারা দেশে ফেরেননি।

ডা. রোকনউদ্দিন মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় থাকতেন। ওই বাড়িটি স্ত্রী নাঈমা আক্তারের পৈতৃক। এলাকাবাসী আর পরিচিতজনরা বলছেন, রোকনউদ্দিন বেশ সদালাপী আর ভদ্র আচরণ করতেন সবার সঙ্গে। তবে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই ধর্মের প্রতি ঝোঁক বেড়ে যায় গোটা পরিবারে।