নওয়াজের প্রধানমন্ত্রীত্ত্ব খতম মঞ্চে আসছেন শাহবাজ শরীফ
ইসলামাবাদ থেকে ইসরাফিল আলম : পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে বাধ্য হলেন নওয়াজ শরীফ। শুক্রবার পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির রায়ে সুপ্রিমকোর্ট নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে। এর পর পদ থেকে সরে দাঁড়াবার ঘোষণা দেন নওয়াজ। রায় ঘোষণার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সুপ্রিমকোর্টের রায়ের প্রতি সম্মান দেখিয়ে নওয়াজ শরীফ পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল আসতার আউসাফ সাংবাদিকদের বলেন, নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে আজীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। তবে নওয়াজ পদ ছাড়লে তার স্থলে কে দায়িত্ব নেবেন সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে কে হচ্ছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী? এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলো তুলে ধরছেন তাদের অনুমান। এরমধ্যে অনেকে ধারণা করছেন সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর ভাই শাহবাজ শরীফই হচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার দেশটির সুপ্রিমকোর্ট অযোগ্য ঘোষণার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান নওয়াজ শরীফ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন,ইতিপূর্বে নওয়াজ শরীফের মেয়ে মারিয়াম নওয়াজকে নিজের রাজনৈতিক উত্তরসূরী হিসেবে ভেবে আসছিলেন নওয়াজ। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী পদে তাকে লড়তে দেয়া যাচ্ছে না। কারণ তিনি নির্বাচিত কোনো সংসদ সদস্য নয়।
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্ভাব্য বেশ কয়েকজনের নাম আসছে। এর মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন নওয়াজ শরীফের ভাই শাহবাজ শরীফ। এছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, জাতীয় পরিষদের স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক, পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পিএমএল-এন’র সদস্য চৌধুরী নিসার আলী খান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেমন হবেন শাহবাজ শরীফ, সেদিকে ইঙ্গিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহবাজ অনেক বুদ্ধিমান হলেও বড় ভাইয়ের মতো ক্যারিশমাটিক নন।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে দেশটির সুপ্রিমকোর্ট দুর্নীতির দায়ে নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করে। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চালিয়ে যাওয়ারও নির্দেশ দেন। পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের এ রায়ের মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসা নওয়াজকে শাসনামল পূর্ণ করার আগেই পদ হারাতে হলো।
এদিকে মামলার রায়কে ঘিরে ইসলামাবাদের আদালত প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। আদালত নওয়াজ পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে দুর্নীতির তথ্য উপস্থাপনের জন্য তদন্ত দলকে ছয় সপ্তাহের সময় দিয়েছেন। এসময়ের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরেরও নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
আদালত নওয়াজের পাশাপাশি দুর্নীতির দায়ে তার মন্ত্রীসভার ফিন্যান্স মিনিস্টার ইসহাক দার ও সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন সফদারকে পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা দিয়েছেন।
পাঁচ বিচারপতি আসিফ সায়্যিদ খোসা, গুলজার আহমেদ, এজাজ আফজাল খান, আজমত সায়্যিদ ও ইজাজুল আহসানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। এর আগে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে ওই বেঞ্চের বিচারপতি খোসা ও গুলজার নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন। বাকি তিন বিচারপতি যৌথ তদন্ত দল গঠনের পক্ষে রায় দেন। আর সেই দলের তদন্তের পর এবার নতুন রায় ঘোষিত হলো নওয়াজের বিরুদ্ধে।
ওই তদন্তে উঠে আসে যে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যরা তাদের অর্থনৈতিক সম্পদের হিসেব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া ২০১৫ সালে পানামা পেপার্স ফাঁসের পর জানা যায় মি. শরীফের সন্তানরা বিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত রয়েছে।