• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

ধর্ষিত মারিয়ার আর্তনাদ-সশস্ত্র ধর্ষকদের বিচার হয়নি!


প্রকাশিত: ৭:২৯ পিএম, ২৫ আগস্ট ১৬ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮৪ বার

ডেস্ক রিপোর্টার  :  কলম্বিয়ার কিশোরী ও মহিলাদের অপহরণ করে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর 22বিরুদ্ধে।আর এ নিয়ে সেখানকার একজন নারীও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তবে তিনিও রক্ষা পাননি। সশস্ত্র জঙ্গিদের বর্বর যৌন অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন প্রতিবাদ করা সেই নারীটি।

কলম্বিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যে কত শক্তিশালী তারই একটি চিত্র বহন করে ওই নারীর কাহিনী। ওই নারীর নাম ‘মারিয়া’।কলম্বিয়ার বোগোতা শহরে এক নারী ‘মারিয়া’ তার রোগীদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ সময়। সংঘর্ষপ্রবণ এলাকার লোকজন এখানে তার কাছেই চিকিৎসা নিতে আসেন।

তিনি মূলত শিকড় ও বীজ থেকে উৎপন্ন ওষুধ দিয়েই রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তবে অন্যদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টার সাথে সাথে তিনি নিজেকেও সুস্থ করে তুলছেন বলা যায়।ছয় বছর আগের ঘটনা, মারিয়া তখন বাস করতেন কলম্বিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে কুইবদো শহরে। দেশের অন্যতম দরিদ্র এলাকার একটি কুইবদো। সেখানে বেশিরভাগ পরিবারই আফ্রিকান ক্রীতদাসদের বংশোদ্ভূত।

‘আফ্রোমুপাজ’ নামে একটি নারী সংগঠনের নেতা ছিলেন মারিয়া। ওই সংগঠনটি সংঘর্ষে গৃহহীন হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তায় কাজ করতো।নারী ও শিশুদের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি। একই সঙ্গে সশস্ত্র গ্রুপগুলোতে শিশু সৈনিকদের নিয়োগ দেয়ার বিরুদ্ধেও প্রচারণা চালাচ্ছিলেন মারিয়া।

২০১০ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ একদিন একজন লোক আসে মারিয়ার সঙ্গে দেখা করতে। লোকটি তখন বলে যে সে শিশুদের জন্য কাপড় দান করতে চায় এবং মারিয়ার সাহায্যে অন্য এলাকাতেও এই কাপড় দিতে চায় বলে তাকে ট্রাকে তোলে লোকটি।

মারিয়া বলেন, ‘আমি একটুও সন্দেহ না করে তার সাথে ট্রাকে চড়েছিলাম। কিন্তু ট্রাকটি যখন শহর ছাড়িয়ে দূরে যেতে থাকলো আমার তখন অস্বস্তি হতে লাগলো। একসময় একজন আমার কানের কাছে বন্দুক ধরল’।এরপর তাকে জঙ্গলে নিয়ে গেল বন্দুকধারীরা, সেখানে গিয়ে মারিয়া দেখলেন যে তার ১৩ বছর বয়সী মেয়েকেও অপহরণ করেছে তারা।

এসব মিলিশিয়ার আনুষ্ঠানিক কোনও পরিচয় নেই। এক দশক আগে এদের সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং এদের বেশিরভাগই অপরাধীদের দলে ভিড়ে গেছে।বিশেষ করে আমব্রেলা গোষ্ঠীর অধীনে এইউসি বা কলম্বিয়ার ইউনাইটেড সেল্ফ ডিফেন্স ফোর্সের সঙ্গে মিশে গেছে এরা, আর এই গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করে জমির মালিক এবং মাদক পাচারকারীরা।

মারিয়া বলছিলেন সন্ধ্যা হবার পর তারা মেয়েকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং মারিয়াকে একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে, তিনটি লোক তাকে পাহারা দিচ্ছিল। তার মাথা থেকে রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছিল। ‘প্রথমে আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু একজন আমাকে বললো বেশি কথা বলার কারণে আমাকে শাস্তি পেতে হবে।

আমি বুঝতে পেরেছিলাম তারা কী করতে চাইছে। আমি চিৎকার দিয়ে বললাম যা করার আমাকে করো, কিন্তু আমার মেয়েকে নয়’-বলছিলেন মারিয়া।মারিয়াকে সেই দিন থেকে টানা পাঁচ দিন অনবরত ধর্ষণ করেছে পাঁচটি লোক। একসময় তিনি অজ্ঞান হয়ে যান, জ্ঞান ফেরার পর দেখেন যে তিনি কুইবদো হাসপাতালে।

মারিয়া নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর তার বড় মেয়ে সবাইকে জানিয়েছিল এবং সব জায়গায় তাকে খোঁজা হচ্ছিল। রাস্তার পাশ থেকে মারিয়াকে উদ্ধার করে তার বড় মেয়ে।মারিয়ার অপহৃত ছোট মেয়ে ক্যামিলাও ঘরে ফিরে আসে, সে ওই ঘটনায় প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিল, ভীত সন্ত্রস্ত ছিল। তবে শারীরিকভাবে কোনও নির্যাতনের শিকার হয়নি সে।

‘তারা মেয়েকে বলেছিল যে কী ঘটেছে সেটা যদি সে কাউকে বলে তাহলে তারা আবার ফেরত আসবে এবং আমাকে মেরে ফেলবে। তাই সে ওই ঘটনা নিয়ে কিছুই বলেনি। অনেকদিন তার কথা শুধু হ্যাঁ ও না এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এবং প্রায় প্রতিদিনই সে কাঁদতো”-বলছিলেন মারিয়া।

ছয় মাসের মধ্যে মারিয়া সুস্থ হয়ে উঠে এবং আফ্রোমুপাজে নিজের কাজ শুরু তরে। কিন্তু একদিন সকালে সেই আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্য এসে বলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মারিয়াকে শহর ছেড়ে যেতে হবে।‘আমি শুধু জানতাম ওই শহর ছেড়ে চলে যেতে হবে’-বলছিলেন তিনি।

তারপর রাজধানী বোগোতায় বাস করা শুরু করেন মারিয়া। সেখানকার কর্তৃপক্ষ তাকে বুলেটপ্রুফ পোশাক, একটি মোবাইল ফোন এবং ট্যাক্সিতে চলাচলের জন্য মাসিক একটা বাজেটও নির্ধারণ করে দেয়।পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচলেও বিধিনেষেধ ছিল তার। কয়েক মাস পর মারিয়ার তিন সন্তানও তার কাছে চলে আসে।মারিয়ার ছোট মেয়ে ক্যামিলা অপহরণের পর সাময়িকভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেও এখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে সে ‘ভালো রাজনীতিবিদ’ হতে চায়।

মারিয়া বলেন, ‘যা ঘটেছে তা আমি পরিবর্তন করতে পারবো না। ভুলতেও পারবো না কারণ আমার শরীর প্রতিনিয়ত সেই ঘটনা মনে করিয়ে দেয়’।মারিয়া সব ভুলে যেতে চান এবং একটা সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখেন।তিনি তার শহর কুইবদোতে ফিরে যেতে চান -‘জানিনা কবে পারবো যেতে। আমারতো আগামীকালই চলে যেতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আমি জানি না সেই দিন কবে আসবে!