ধর্ষণচেষ্টা যুবলীগার খুন!
চান্দিনা প্রতিনিধি : কুমিল্লার চান্দিনায় যুবলীগ নেতা তানভীর আহমেদ ভূঁইয়াকে (৩২) ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তবে এক অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর দাবি, তাকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে তার স্বামী ওই যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা করেন। তবে এলাকাবাসী দাবি করে বলছে, গাছ কেনাবেচা নিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে তানভীরের সঙ্গে প্রতিপক্ষের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। এর জেরেও এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। সব মিলিয়ে হত্যাকাণ্ডটি নিয়ে এলাকায় নানা রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাতে চান্দিনা উপজেলার বাড়েরা ইউনিয়নের গড়ামারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বুধবার (৫ জুন) সকালে গড়ামারা গ্রামের আক্কাস আলীর বাড়ির সামনে থেকে তানভীরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গড়ামারা গ্রামের এক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছে।
নিহত তানভীর আহমেদ ভূঁইয়া বাড়েরা ইউনিয়নের গনিপুর গ্রামের বাবুল ভূইয়ার ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি ছিলেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে বেশ সমালোচিত ছিলেন তানভীর। তার বিরুদ্ধে চান্দিনা ও তিতাস থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বা ওই গৃহবধূ জানান, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তানভীর ঘরে প্রবেশ করে জোর করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। এ সময় তার স্বামীর সঙ্গে তানভীরের ধস্তাধস্তি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। তার স্বামী তানভীরকে পেটালে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তার মৃত্যু হয়।
নিহত তানভীরের মা নিলুফা বেগম জানান, তার ছেলেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে খাবার খেয়ে তার ছেলে ঘর থেকে বের হন। রাত ১২টায় মোবাইলে কল করলে তানভীর জানান, তিনি ফিরে আসছেন। এরপর আর তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। ওই গৃহবধূ যা বলছেন, সব মিথ্যা। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান তিনি।
নিহতের ছোট বোন তান্নি বলেন, ‘আমার ভাইকে একটি সালিসের কথা বলে রাতে ঘর থেকে ডেকে নেয়। আমার ভাইকে অন্য কোথাও খুন করে এখন মিথ্যা গল্প সাজানো হচ্ছে।’
এদিকে তানভীরের মরদেহ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, ওই স্থানটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। এমন স্থান থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় তানভীরের মরদেহ উদ্ধার কিংবা গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা জানায়, তানভীরের লাশ যেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে, ওই বাড়িতে প্রায় সব টিনের ঘর। এক ঘর থেকে অন্য ঘরের দূরত্ব চার-পাঁচ ফুটের বেশি নয়। রাতে যদি ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা, কিংবা মারামারি হতো তাহলে আশপাশের মানুষ অবশ্যই টের পেত। কিন্তু কেউ কিছু টের পায়নি। ফলে বিষয়টি কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
বাড়েরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে গেছি, হত্যাকাণ্ডটি সন্দেহজনক। ঘটনাস্থলটি এত ঘনবসতিপূর্ণ যে এমন একটি কাণ্ড ঘটলে কেউ টের পাবে না, এটা হতে পারে না।’
চান্দিনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন দত্ত জানান, নিহত তানভীরের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ও পায়ে কাটা চিহ্ন আছে। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে এ বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো যাবে।
চান্দিনা থানার ওসি আহাম্মদ মঞ্জুর মোরশেদ জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পূর্বশত্রুতার জের ধরে এমনটা ঘটতে পারে। নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চান্দিনা ও তিতাস থানায় অস্ত্র, ধর্ষণসহ একাধিক মামলা রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।