ধর্মমন্ত্রীর এলাকায় দলীয় কামড়া-কামড়ি রক্তারক্তি
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।এ সময় মোস্তফা (৩৫) নামের এক বালু-শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।সংঘর্ষ চলাকালে শতাধিক রাউন্ড গুলিবর্ষণ এবং কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে শহরতলীর আকুয়া দরগা পাড়ায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ জানায়, শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহ শহরতলির আকুয়া মোড়লপাড়ার একদল লোক দরগাপাড়ার যুবলীগ নেতা শাহিনুর আলমের বাড়িতে হামলা করলে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ও শতাধিক রাউন্ড গুলিবিনিময় হয়। এতে দরগাপাড়ার মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে বালু শ্রমিক গোলাম মোস্তফায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। এসময় কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধ মোস্তফাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর অবস্থার অবনতি ঘটলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়।খবর পেয়ে পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর এলাকায় শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আটজনকে আটক করলেও তিনজনকে ছেড়ে দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে ২০ টি গুলির খোসা একটি তাজা পেট্রলবোমা উদ্ধার করে।
এব্যাপারে আফাজ উদ্দিন সরকার সাংবাদিকদের জানান, আকুয়া দক্ষিণপাড়া থেকে শাহিনুরের লোকজন দেশিয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ককটেল ও গুলি করতে করতে মোড়লপাড়ার দিকে আসছিল। খবর পেয়ে মোড়লপাড়ার লোকজন দলবদ্ধ হয়ে তাদেরকে ধাওয়া করে।যুবলীগ নেতা শাহিনুর আলমকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা আব্দুল মান্নান ড্রাইভার অভিযোগ করেন, আফাজ উদ্দিন সরকারের লোকজন তার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করে। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিযে বাড়িতে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু মুহাম্মদ ফজলুল করিম জানান, তিনি অসুস্থ। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আকুয়া ইউপির চেয়ারম্যান আফাজ উদ্দিন সরকার গ্রুপের সঙ্গে আকুয়া দক্ষিণপাড়ার যুবলীগ নেতা শাহিনুর আলম গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে ধর্মমন্ত্রীর ছোটভাই আকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফাজউদ্দিন সরকারের সমর্থক আনিসের সঙ্গে গত মঙ্গলবার শহরের রামকৃষ্ণ মিশন রোডে ময়মনসিংহ পৌরসভার মেয়র ইকরামুল হক টিটুর সমর্থক যুবলীগ নেতা শাহিনুর আলমের লোকজনের বচসা হয়। এর জের ধরে রাত ৯ টার দিকে শাহিনুরের নেতৃত্বে একদল অস্ত্রধারী শহরের বদরের মোড় থেকে সংঘবদ্ধ হয়ে আকুয়া হাবুন বেপারির মোড়ে গিয়ে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলিবর্ষণ করে।
অস্ত্রধারীরা কয়েকটি দোকান ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে আফাজউদ্দিন সরকারের অফিসের সামনে তিনটি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাদের অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকায় পাঠানো হয়। এরপর রাত ১১টার দিকে মোড়লপাড়ার লোকজন দলবদ্ধ হয়ে আকুয়া দরগাপাড়ায় শাহিনুর আলমের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় প্রায় অর্ধশত ককটেল ও গুলির শব্দ শোনা যায়। মূলত; এ ঘটনার জের ধরেই শনিবারের ঘটনা ঘটেছে।
প্রসঙ্গত, গত এক সপ্তাহ ধরে শহরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সশস্ত্র মহড়া ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা শহরজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।