• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

এমপি পিনু খানের ছেলের নোংরামি-রনির বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিলেন বন্ধু কামাল


প্রকাশিত: ৮:৩৯ পিএম, ১৭ জুন ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২২২ বার

Pinu+Khan-Son+Rony-www.jatirkhantha.com.bd
নীপা খন্দকার.ঢাকা:  দশ মিনিটেরও কম সময় ইস্কাটন-মগবাজার এলাকায় ছিলেন, আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে, বখতিয়ার আলম রনি। যদিও বলা হচ্ছে যানজটের কারণে বিরক্ত হয়ে রনি রিভলবার থেকে গুলি ছুড়েছেন, মদ্যপ ছিলেন, দুজন নিহত হয়েছে কিন্তু ঘটনাস্থলে রাস্তায় কোনো যানজট ছিল না। তারপরও গাড়ির সামনে কয়েকটি রিকশা আর অটোরিকশা লক্ষ্য করে রনি গুলি চালান নির্বিচারে। গুলি বর্ষণের কোনো ছবি না পাওয়া গেলেও, চ্যানেল ২৪ এর হাতে ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, সে রাতে রনির কালো প্রাডো গাড়ির চলাচল ও পালিয়ে যাবার ছবি।

pinu khan son-2-www.jatirkhantha.com.bd১৩ এপ্রিল গভীর রাত। অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল রাত দেড়টার কিছু পর। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, জনকণ্ঠ ভবনের সামনে, পরদিন ভোরে পাঠকের হাতে পত্রিকা পৌঁছানোর কাজ করছেন বেশ কজন। ১টা ৩৪ মিনিট, মগবাজার মোড়ের দিকে যাচ্ছে বখতিয়ার আলম রনির ব্যবহৃত কালো গাড়টি।

একটু সামনে গিয়ে দু সেকেন্ডের জন্য থামে গাড়িটি। এরপর চলে যায় মগবাজার মোড়ের দিকে। পরদিন পয়লা বৈশাখের সরকারি ছুটি। ফলে রাস্তায় দুয়েকটি ট্রাক আর সিএনজি অটোরিকশার পাশাপাশি, হাতেগোনা কয়েকটি রিকশা।

1434542521760968415op-400x250মগবাজারে বন্ধুকে নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে, বখতিয়ারের গাড়ির সামনে পড়ে রিকশা আর অটোরিকশা। সিসিটিভির ফুটেজে ঘটনাস্থল দেখা যাচ্ছে না। তবে, রাত ১টা ৪৩ মিনিটে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে লোকজনের চলাচল ও রনির গাড়ি দেখে বোঝা যায়। মগবাজার মোড়ের পাশে এলএমজি টাওয়ারের সামনে গুলি চালিয়ে একটি গলিতে ঢুকে পড়ে রনির গাড়ি। ছবি, সে কথাই বলছে।

সেখানে মিনিট দেড়েক থাকার পর, একটি ট্রাকের পেছন পেছন বাংলামোটরের দিকে পালিয়ে যায় কালো প্রাডো গাড়িটি। জনকণ্ঠ পত্রিকার যে সিএনজি চালক বখতিয়ার আলম রনির গুলিতে আহত হন, তার আরোহী, জনকণ্ঠের কর্মচারি আলামিন, দৌড়ে অফিসে ঢোকেন ১টা ৪৫ মিনিটে। তখনই বাংলামোটরের দিকে যায় রনির গাড়িটি।

আলামিনের কাছ থেকে শোনার পর অনেকেই বেরোন গুলির ঘটনার খোঁজ নিতে। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে এসে একজন সবাইকে জানান পুরো ঘটনা। তখন জনকণ্ঠের ৪/৫ জন রওয়ানা হন ঘটনাস্থলের দিকে।

এদিকে আমাদের কোর্ট রিপোর্টার সাবিহা সুলতানা জানিয়েছেন, রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে গুলি করে দুজনকে হত্যার ঘটনায় সংসদ সদস্য পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির বন্ধু কামাল মাহমুদ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাসের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার  মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল হকের আদালতে বুধবার হত্যাকান্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনার সময় গাড়িতে অবস্থানকারী কামাল মাহমুদ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি দেন।

এর আগে গত ১৩ জুন রনিকে রিমান্ড  শেষে কারাগারে পাঠানো হয় এবং ১৬ জুন তার জামিন আবেদন নাকচ করেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে রনি ও তার সহযোগীরা একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়লে দৈনিক জনকণ্ঠের অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম নিহত হন। নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে ১৫ এপ্রিল রাতে অজ্ঞাত আসামিদের নামে রমনা থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ ও তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি’র উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার গণমাধ্যকর্মীদের জানান, রিমান্ডে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে গুলির কথা স্বীকার করেছেন এমপিপুত্র রনি। তিনি বলেছেন, ওইদিন মধ্যরাতে রাস্তায় যানজট থাকায় বিরক্ত হয়ে কোমর থেকে পিস্তল বের করেন তিনি। মদ্যপ থাকায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। রাস্তায় এলোপাতাড়ি গুলি ছোঁড়েন। নিজে জানতেনও না তার ছোঁড়া গুলিতেই দু’জন মারা গেছেন।

ঘটনার সময় রনির সঙ্গে গাড়িতে আরও তিন বন্ধু ছিলেন। ওই তিন বন্ধুকেও শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, ওই তিন বন্ধুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে পুরো ঘটনাটি আরও পরিষ্কার হবে। তারই একজন কামাল মাহমুদ।

২৪ মে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগকে (ডিবি)। তদন্তভার পাওয়ার পর ৩১ মে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে বখতিয়ার আলম রনিকে আটক করে ডিবি পুলিশ।

আদালতে রনির বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য দিলেন বন্ধু কামাল

ইস্কাটনে জোড়া খুনের সময় সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনির সঙ্গে গাড়িতেই ছিলেন বন্ধু কামাল মাহমুদ। এরপর তাঁকে নামিয়ে দেওয়া হয়। আজ বুধবার মহানগর হাকিম আমিনুল হকের খাস কামরায় জবানবন্দি দেন তিনি। সেখানেই তিনি এ কথা জানান বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে এ ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাডো গাড়িটি জিম্মায় নিতে আবেদন করা হয়েছে। বখতিয়ারের মা সরকারদলীয় সাংসদ পিনু খানের পক্ষে তানভীর আহমেদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আজ আবেদনটি করেন। আদালত পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে গাড়ির মালিকানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন। গত রোববার গাড়িটি জব্দ করে গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে ওই গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে রিকশাচালক ও জনকণ্ঠ পত্রিকার অটোরিকশাচালককে হত্যা করা হয়। ঘটনার সময় বখতিয়ারের গাড়ির পেছনের আসনে ছিলেন কামালসহ দুই বন্ধু। এ ঘটনায় ডিবি পুলিশ বখতিয়ার ও তাঁর গাড়িচালক ইমরান ফকিরকে গ্রেপ্তার করে।
আজ দুপুর তিনটার দিকে কামালকে আদালতে নিয়ে আসেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। এরপর তিনি বিচারকের সামনে জবানবন্দি দেন। আদালত সূত্র আরও জানায়, কামাল বলেছেন, বখতিয়ার ও তিনি বন্ধু। ঘটনার দিন তাঁরা ওই গাড়িতে (জব্দ) করে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

বখতিয়ারকে দায়ী করে গাড়িচালক ইমরান ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ইস্কাটনে যানজটে আটকা পড়ে নেশাগ্রস্ত বখতিয়ার লাইসেন্স করা পিস্তল বের করে গাড়ির জানালা দিয়ে এলোপাতাড়ি চার-পাঁচটি গুলি ছোড়েন।

বখতিয়ার তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেন, ওই রাতে তাঁরা প্রথমে বাংলামোটরের একটি বারে যান। এরপর হোটেল সোনারগাঁওয়ে যান। সেখান থেকে বখতিয়ার তাঁর গাড়িতে করে মগবাজারে নামিয়ে দেন জাহাঙ্গীরকে। এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে বাংলামোটর হয়ে হাতিরপুলে যান। নিউ ইস্কাটনে রাত পৌনে দুইটায় যানজটে পড়লে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়েন। তখন তিনি চালকের পাশের আসনে বসে ছিলেন। আর পেছনের আসনে ছিলেন কামালসহ দুই বন্ধু। এরপর হাতিরপুলের বাসার সামনে কামালকে এবং অন্যজনকে আরেক স্থানে নামিয়ে ধানমন্ডির বাসায় ফেরেন তিনি।