‘দেশের স্বর্ণ-ডলার পাচার হচ্ছে-ফেনসিডিল ও শাড়ি আসছে’
বিশেষ প্রতিবেদক: দেশের অর্থনীতিকে স্মাগলিং বা চোরাচালান ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেছেন, দেশের স্বর্ণ এবং ডলার পাচার হচ্ছে আর ফেনসিডিল ও শাড়ি আসছে; যা দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। সময় এসেছে এটা প্রতিরোধ করার।
আজ শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় মাদকের সর্বগ্রাসী থাবা জেলাটিতে বিস্তৃত বলে উল্লেখ করে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘এটা আমাদের খুব পীড়া দেয়। তা ছাড়া শাড়ি চোরাচালানপ্রবণ এলাকা।
একটা ভারতীয় দামি শাড়ি ভারতের চেয়ে কম দামে পাওয়া যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি। আমি বিচারপতি হিসেবে দেশের প্রতিটি অঞ্চলের খুঁটিনাটি বিষয় জানি। সেই ডেটা নিয়ে কথা বলছি। আমাদের অর্থনীতিকে গ্রাস করছে স্মাগলিং।’প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এত বিত্তবান লোক। প্রাকৃতিক গ্যাস থাকা সত্ত্বেও শিল্পের বিকাশ তেমন হয়ে উঠছে না।
আজকে আপনারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন—সারা দেশে আপনারা যদি তিতাস গ্যাস দিতে পারেন, আপনারা এটাকে ব্যবহার করতে পারবেন না কেন?’ ব্রাহ্মণবাড়িয়া কোনো সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় না থাকাকে ‘দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, অর্থবিত্তের প্রাচুর্য, মাদকদ্রব্যের বিস্তার, সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় শুধু প্রভাব বিস্তার করার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গ্রামে গ্রামে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এবং হত্যার মতো নির্মম ঘটনা ঘটে। মামলা হয়।
কিন্তু মামলা চলার সময় দেখা যায়, উভয়ের মধ্যে আপস-মীমাংসা হয়েছে। অনেককে মীমাংসা করতে বাধ্য করা হয়। এতে অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে যায়। অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়। আবার বেরিয়ে তারাই অপরাধ করছে। এ বিষয়টি খেয়াল রাখার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংসদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি বিচারহীনতা, অন্য একটি অপরাধের সাহস জোগায়। বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে রোধ করতে হবে। আইনের শাসনকে শক্তিশালী করতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সামাজিক সালিস প্রশংসনীয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সব অপরাধ আপসযোগ্য নয়। বিচারের কণ্ঠরোধ করা মানে অবিচারকে লালন করা।
অপরাধের কোনো বর্ণ-গোত্র নেই। এ দেশে এক সময় বিচারহীনতার রেওয়াজ ছিল। এ জন্য এ দেশকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আজ বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি যতই ক্ষমতাশালী হোক না কেন, অন্যায় করার আগে এর পরিণতির কথা ভাবতে হবে। এটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আপসের নামে বিচারকে যেন বিলম্বিত না করতে পারে, এ জন্য সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অন্যায়ের যেন প্রতিকার হয়, সেটা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
পদ্মা সেতু সম্পর্কে অর্থসচিবের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের প্রসঙ্গ ধরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমাদের মনোবল এমনভাবে বেড়ে যাবে, আমরা শুধু পদ্মা সেতু বা আরও একটা সেতু করব না। আমরা বিদেশেও এ ধরনের অন্য কোনো সেতু করার জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারব।’প্রধান বিচারপতি তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিবাসীদের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
ঢাকায় থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অধিবাসীদের উদ্দেশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ভালোবেসে প্রত্যেকে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অবদান রেখে উন্নয়নে এগিয়ে আসবেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির সভাপতি সাংসদ র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর সভাপতিত্বে অভিষেক অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুন নূর প্রমুখ। অভিষেক অনুষ্ঠানে ঢাকায় অবস্থানরত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহস্র অধিবাসী অংশ নেন।