দেশের বৃহত্তর শোলাকিয়া ঈদগাহ’র পাশে গোলাগুলি হাতবোমা বিস্ফোরণ-পুলিশ নিহত-বহু হতাহত
জেলা প্রতিনিধি. কিশোরগঞ্জ : দেশের বৃহত্তর ঈদগাহ শোলাকিয়ার ঈদগাহ মাঠের পাশে কয়েকশ’ গজ দূরে হাতবোমা বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।এঘটনায় ১ পুলিশ নিহত এবং অন্য ৮ জন পুলিশ আহত হয়েছেন। তবে নিহতের সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয় পুলিশ সূত্র জাতিরকন্ঠকে জানায়,বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে সকাল সোয়া ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে শোলাকিয়া ঈদগাহ্ ময়দানে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। এবার ছিল ১৮৯তম ঈদুল ফিতরের জামাত।
সকাল ১০টায় বিশিষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের ঈমামতিতে জামাত অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত ছিল। এতে অংশ নিতে দেশ বিদেশের তিন লাখেরও বেশি মুসুল্লির সমাগম ঘটেছিল।
কিন্তু নামাজের আগে ঈদগাহে প্রবেশ পথে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় পুলিশ পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে গুলি বর্ষণ করে। বেশ কিছু সময় ধরে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় ঈদগাহ সংলগ্ন আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে ।নিহত পুলিশ সদস্যের পরিচয় জানা যায়নি। আহত পুলিশ সদস্যদের অবস্থা গুরুতর। তাদের কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকাল ১০টায় শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আগে আজিমুদ্দিন স্কুলের পাশে টহল দিচ্ছিল একদল পুলিশ। এ সময় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা বোমা মেরে পালিয়ে যায়। কিশোরগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশাররফ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, জনশ্রুতি আছে প্রায় ৭ একর আয়তনের এই মাঠে একবার ২৬৫টি কাতারের প্রতিটিতে ৫’শ জন করে মোট সোয়ালাখেরও বেশি মুসুল্লি একসঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। সেই থেকে এ মাঠটি সোয়লাখিয়া থেকে পরবর্তিতে শোলাকিয়া নামে পরিচিতি লাভ করে।
শোলকিয়ার এই হামলা কি মাসউদের ফতোয়ার জের-
শোলকিয়ার এই হামলা কি মাসউদের ফতোয়ার জের-কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে।সূত্র জানায়, শোলাকিয়া মসজিদের ইমাম ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ সম্প্রতি সন্ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা হারাম- এমন অন্তত ১০টি ফতোয়া ঘোষণা করেছিলেন। বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামার চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া মসজিদের ইমাম ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ফতোয়ায় বলেন, “ধর্মের নাম দিয়ে যারা মানুষ হত্যা করবে তারা জাহান্নামে যাবে।”
জঙ্গিবাদ ঠেকানো ও কোরান হাদিসের অপব্যাখ্যা ঠেকাতে এক লাখ আলেম উলামার সমর্থন নিয়ে তিনি এসব ফতোয়া প্রণয়ন ও ঘোষণার কথা জানান।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ফতোয়াগুলো প্রকাশ করে ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, “যেকোনো পরিস্থিতিতে খুন করা অপরাধ এবং ইবাদত বা উপাসনারত কাউকে হত্যা করা সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। অমুসলিমদেরউপাসনালয়ে হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও অবৈধ এবং এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
মাসঊদের ঘোষিত ফতোয়ার মধ্যে আরো রয়েছে আত্মহত্যা বা আত্মঘাত ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম, সন্ত্রাস ও আতঙ্কসৃষ্টি করা যেহেতু হারাম এবং নিষিদ্ধ সুতরাং তা কখনো বেহেশত পাওয়ার পথ হতে পারে না।
কোরান ও হাদিসের নানা ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “জিহাদ আর সন্ত্রাস একই জিনিস নয়, বরং সন্ত্রাস হারাম ও অবৈধ।”