• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

দেশকে অস্থিতিশীলকারী চক্রের তান্ডবে খুন হলো আরো দু’জন


প্রকাশিত: ১২:৩৪ এএম, ২৬ এপ্রিল ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯১ বার

বিশেষ প্রতিবেদক  :   রাজশাহীতে অধ্যাপক খুনের রেশ কাটতে না কাটতেই দেশকে অস্থিতিশীলকারী julhas-www.jatirkhantha.com.bdচক্রের তান্ডবে খুন হলো আরো দু’জন।গোয়েন্দাদের ধারনা দেশবিরোধী চক্র পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে।
কলাবাগানে তেঁতুল তলার মাঠ সংলগ্ন আছিয়া ভবন নামের এই বাসায় ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ সোমবার বিকেলে উত্তর ধানমন্ডির কলাবাগানে তেঁতুলতলার মাঠসংলগ্ন এলাকায় আছিয়া ভবন নামের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় এ ঘটনা ঘটে।

Rupban editor-julhas-www.jatirkhantha.com.bvdদুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছেন ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ। তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।নিহত দুজনের নাম জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তন্ময়। এর মধ্যে জুলহাজ মান্নান মার্কিন দাতা সংস্থা ইউএসএআইডিতে কর্মরত। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার প্রটোকল কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

2বাংলাদেশের সমকামীদের প্রথম পত্রিকা রূপবানের একজন সম্পাদক ছিলেন জুলহাজ মান্নান।আর নিহত মাহবুব তন্ময় ছিলেন জুলহাজের বন্ধু। তন্ময়ের ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি।কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাবিবুর রহমান জানান, নিহত দুজনের বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

তিনি জানান, আজ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কয়েকজন যুবক পার্সেল দেওয়ার কথা বলে ওই বাড়িতে ঢোকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই যুবকেরা জুলহাজ ও মাহবুব তন্ময়কে চাপাতি দিয়ে মাথাসহ সারা শরীরে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। ওই সময় বাসায় ছিলেন জুলহাজের বৃদ্ধ মা ও গৃহকর্মী। ঘটনার আকস্মিকতায় তাঁরা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন।

ওই যুবকেরা দুজনকে কুপিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে যান। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আশপাশের লোকজন ওই বাড়ির দিকে ছুটে যান। এর আগেই যুবকেরা দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তখন স্থানীয় লোকজন তাদের ‘ছিনতাইকারী’, ‘ধর ধর’ বলে চিৎকার করে ধাওয়া করেন। তখন ওই যুবকেরা আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে লোকজনদের হুমকি দিতে দিতে পালাতে থাকে। একপর্যায়ে কয়েকটি গুলি ছুড়ে তারা পালিয়ে যায়।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, বিকেলে বাড়ির সামনে চার-পাঁচজন যুবক আসে। তাদের প্রত্যেকের পরনে একই রঙের পোশাক ছিল। তারা জুলহাজের নামে একটি পার্সেল এসেছে বলে তাঁকে জানান। তখন তিনি ওই যুবকদের নিচে থাকতে বলে পার্সেলের ব্যাপারে কথা বলতে দোতলায় জুলহাজের বাসায় যান।

কলিং বেল দেওয়ার পর জুলহাজ দরজা খোলেন। পার্সেলের কথা জিজ্ঞেস করলে জুলহাজ কোনো পার্সেল আসার কথা নয় বলে জানান। জুলহাজ দরজা বন্ধ করার আগেই তিন থেকে চারজন যুবক সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত ওপরে উঠে পড়েন। এ সময় তিনি (পারভেজ) যুবকদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন যুবকদের একজন চাপাতি বের করে তাঁকে আঘাত করেন। এরপর আর কোনো কিছুই তাঁর মনে নেই।

কলাবাগানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক মমতাজকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসাতালে ভর্তি করা হয়েছে।আজ সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওই বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায়, র‍্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হন। বাড়ির সামনে গণমাধ্যমকর্মী ছাড়াও উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। বাড়ির প্রধান ফটক ভেতর থেকে ছিল আটকানো। ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না।

ওই বাসায় প্রাথমিক তদন্ত শেষে বের হওয়ার পর কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হাবিবুর রহমান বলেন, নিহত জুলহাজ ও মাহবুব তন্ময় পরস্পর বন্ধু বলে জানা গেছে। জুলহাজ একটি দূতাবাসে চাকরি করতেন। এএসআই বলেন, ‘বাসায় স্কচটেপ প্যাঁচানো বড় আকৃতির দুটি জিনিস দেখেছি। ধারণা করছি, ওইগুলোকে পার্সেল বানিয়ে বাসায় ঢুকেছিলেন দুর্বৃত্তরা। তবে এর ভেতরে কী তা এখনো দেখা হয়নি।’

ওই যুবকদের ধাওয়া করা স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে মো. আশরাফ নামের এক দোকানদার বলেন, ‘আমি ওই বাড়ির কিছুটা দূরে ছিলাম। হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে তাকিয়ে দেখি, চার-পাঁচজন যুবক অস্ত্র হাতে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছিল। পরে আমিসহ কয়েকজন তাদের ধাওয়া দিই। পরে দুর্বৃত্তরা অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে তারা পালিয়ে যায়।’

3ই যুবকদের পালিয়ে যেতে দেখেছেন এমন একজন মহিলা সাংবাদিকদের বলেন, যুবকদের প্রত্যেকের কাঁধে ব্যাগ ছিল। পরনে ছিল কালো গেঞ্জি। তারা অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি দিতে দিতে তেঁতুলতলার মাঠের পাশ দিয়ে চলে যায়। পরে তিনি কয়েকটি গুলির শব্দ শোনেন।ঘটনার পর দ্রুত ওই বাসায় যাওয়া এক তরুণী বলেন, ‘ওই বাসার সবাইকে আগে থেকেই চিনতাম। তাই ঘটনার পর বাসায় গিয়ে দেখি, খালাম্মা (জুলহাসের মা) আহাজারি করছেন।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, পার্সেল দেওয়ার কথা বলে ওই বাসায় ঢুকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থল থেকে পার্সেলের বক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইসলামি উগ্রপন্থীরা জড়িত-

ঢাকায় সমকামীদের অধিকার বিষয়ক পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধুকে বাসায় ঢুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ইসলামি উগ্রপন্থীরা জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করছে পুলিশ।সোমবার সন্ধ্যায় এই হত্যাকাণ্ডের পরপরই বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রকাশিত এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।রয়টার্স বলছে, রাজশাহীতে একজন অধ্যাপককে কুপিয়ে হত্যার মাত্র তিনদিনের মাথায় ঢাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটলো।

জুলহাজ নিহতের ঘটনায় বার্ণিকাটের বিবৃতি

ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান নিহত হওয়ার ঘটনায় মার্কিন রাষ্ট্রদুত মার্সিয়া বার্ণিকাট দাফতরিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।বার্ণিকাট তার দাফতরিক এ বিবৃতিতে বলেন, আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় জুলহাজ মান্নান এবং আরেক বাংলাদেশির নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমি মর্মাহত। জুলহাজ আমার এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যামবেসিতে যারা তার সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের কাছে সহকর্মীর চেয়ে বেশিকিছু ছিল। তিনি সবার প্রিয় বন্ধু ছিলেন।

আমরা জুলহাজের জন্য এবং নিহত ও আহত অন্যদের জন্য প্রার্থণা করছি। সহিংসতার এই কর্মকাণ্ডের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি। এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোরালো তাগিদ দিচ্ছি যেন খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হয়।