• বৃহস্পতিবার , ২৮ নভেম্বর ২০২৪

দৃষ্টির সীমানার বাইরে সেই গানের পাখি


প্রকাশিত: ৭:৪৬ পিএম, ২৪ মার্চ ১৯ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৩৭ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : যে ছিলো দৃষ্টির সীমানায়,

যে ছিলো হৃদয়ের আঙ্গিনায়,

সে হারালো কোথায় কোন দুর অজানায়,

সেই চেনা মুখ কতদিন দেখিনি,

তার চোখে চেয়ে স্বপ্ন আঁকিনি…

সেই গানের পাখি-শাহনাজ রহমত উল্লাহ চলে গেলেন দৃষ্টির সীমানার বাইরে..। আর কোন দিন এ পৃথিবীর কেউ তাকে দেখতে পাবে না শ্বশরীরে-। তাঁর গাওয়া গান – যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, সে হারালো কোথায়, কোন দূর অজানায়-মানুষ অনন্তকাল শুনতে থাকবে কিন্তু তাকে আর খুঁজে পাবেনা। অসংখ্য জনপ্রিয় গানের শিল্পী শাহনাজ রহমত উল্লাহ চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

কিন্তু হঠাৎ করে তার এই চলে যাওয়া মানতে পারছেনা ভক্তকূল। ১৯৫৩ সালে জন্ম নেয়া এই সুপরিচিত শিল্পী ক্যারিয়ারের ৫০ বছর পূর্তির সাথে সময় থাকতেই গান থেকে বিদায় নেন। জানা গেছে, ওমরাহ করতে গিয়ে ধর্মপরায়ণ জীবনযাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেন শাহনাজ রহমতুল্লাহ। পরে এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আমি সংসারকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার ৪২ বছরের ঘর।… বিয়ের পরে হাউজ ওয়াইফ হিসেবে নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছি।

তিনি বলেন, ওমরাহতে গিয়েই আমি চেঞ্জ হয়ে গেছি। আসার পর মনে হয়েছে শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো, শুধু মনে হয়েছে আমি রোজা রাখবো, শুধু মনে হয়েছে আমি কুরআন শরীফ পড়বো। ৫০ বছর পার হয়ে গেছে, ইমেজটা সুন্দর থাকতে থাকতেই আমি গান ছাড়তে চেয়েছিলাম যাতে পাবলিক মনে করে যে আর কয়টা গান উনি কেন গাইলেন না।তিনি বলেছিলেন, ১০ বছর বয়স থেকেই আমি সঙ্গীত জীবন শুরু করি।

তবু কিন্তু মিস করি গানকে;, মিস করি মাঝে মাঝে। বাসায় একটু গুনগুন করি।হাজব্যান্ডকে গান শুনাই। সে আবার অনেক বড় ভক্ত আমার। এখন তো সময় পারই হয়ে গেছে। এখন কোন অসুবিধা হয় না।বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের দিকটা ধরতে গেলে সবার আগেই চলে আসে শাহনাজ রহমত উল্লাহর নাম।স্বাধীনতা বা বিজয়ের মাসেই যেসব দেশের গান বেশি শোনা যায় তার বেশির ভাগই সত্তরের দশকে রচিত।সেই তুলনায় এখনকার দেশাত্মক গানগুলো সেভাবে পরিচিতি পায় না।

এ বিষয়ে তিনি বলতেন, দেখুন যেসব দেশের গানের কথা আমি বলেছি যেমন – একবার যেতে দেনা আমায় ছোট্ট সোনার গাঁয়, কিংবা ধরুন জয় বাংলা বাংলার জয়, এক তারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল। কথাগুলো রিচ (সমৃদ্ধ)।আজকাল আমার মনে হয় না দেশের গান কেউ খুব একটা করে। দেশের গানের যে মাধুর্য – তার জন্য এটা কঠিন ব্যাপার কিন্তু। ওই ষাট দশক আর ফিরে আসবে না।

তখন সব কিছু জীবন্ত ছিল – গানের কথার সুর এবং সঙ্গীত যারা সৃষ্টি করেছেন সবাই এক একজন বিগ বিগ বস আমি বলবো।দেশের গানের কথা বললে শাহনাজ রহমত উল্লাহর নাম চলে আসে – বিষয়টি তুলতেই তিনি বলেন, “একজন শিল্পী হিসেবে এটা অনেক ভালো লাগে যে একটা দেশের গান থেকে অনেক কিছু আমি জনগণকে বলতে পারি।

শাহনাজ রহমতুল্লাহর কালজয়ী গানগুলো হলো – খান আতাউর রহমানের কথা ও সুরে ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কথা ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’ এবং ‘একতারা তুই দেশের কথা বলরে এবার বল’।

দেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতউল্লাহর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে সামরিক বাহিনীর কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়। এর আগে বাদ জোহর শাহনাজ রহমতউল্লাহর জানাজা হয় বারিধারার ৯ নম্বর রোডের পার্ক মসজিদে।গতকাল রাত সাড়ে ১১টায় বারিধারায় নিজ বাসায় শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় শাহনাজ রহমতউল্লাহ মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমতউল্লাহ ব্যবসায়ী, মেয়ে নাহিদ রহমতউল্লাহ থাকেন লন্ডনে আর ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমতউল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে এখন কানাডায় থাকেন।