• রোববার , ১২ জানুয়ারী ২০২৫

দুর্নীতি দমন মন্ত্রীর দুর্নীতি-ধরা খাচ্ছে হাসিনার ভাগনি


প্রকাশিত: ৬:৫৪ পিএম, ১২ জানুয়ারী ২৫ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩ বার

 


শফিক রহমান :
অবশেষে ইউকে’র দুর্নীতি দমন মন্ত্রী দুর্নীতিতে ধরা খাচ্ছে। বহুল বিতর্কিত যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এই মন্ত্রী হচ্ছে বাংলাদেশের পলাতক ফেসিস্ট হাসিনার ভাগনি বৃটেনের দুর্নীতি দমন মন্ত্রী টিউলিপ। তার বিরুদ্ধে ‘আনএক্সপ্লেইনড ওয়েলথ অর্ডার’ (ইউডব্লিউও) জারির আহ্বান জানানো হয়েছে। তদন্ত করতে বলা হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে।

অবস্থা এতটাই বেগতিক যে যে কোনো সময় টিউলিপ পদত্যাগও করতে পারেন। যদিও দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগে জেরবার যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক যদিও অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে নিজেকে তদন্তের সামনে দাঁড় করিয়েছেন, তারপরও তার পদত্যাগের জোর দাবি উঠছে বিরোধীদের পক্ষ থেকে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে দিয়ে তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।

৪২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবকাঠামো নির্মাণ খাতের তহবিল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।যুক্তরাজ্যের টোরি পার্টির সাবেক মেয়র প্রার্থী ও দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের তদন্ত কর্মকর্তা সুসান হল, যিনি একই সঙ্গে গ্রেটার লন্ডন অ্যাসেম্বলির পুলিশ ও অপরাধ কমিটির সভাপতি, তিনি শনিবার জাতীয় অপরাধ সংস্থার (এনসিএ) প্রধান নির্বাহী গ্রেইম বিগারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চিঠি লেখেন।চিঠিতে তিনি টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘আনএক্সপ্লেইনড ওয়েলথ অর্ডার’ (ইউডব্লিউও) জারির আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হওয়া অবকাঠামো প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করেন।

চিঠিতে সুসান হল লেখেন, “এটি প্রকাশ পেয়েছে যে, টিউলিপ তার খালার (শেখ হাসিনা) দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সম্পত্তি লাভ করেছেন। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যা কিংস ক্রসে তাকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি ফ্ল্যাট, যা তিনি ব্যবহার করেছেন এবং পরে তা তার বোনকে বিনামূল্যে উপহার দেওয়া হয়েছে। উত্তর লন্ডনের একটি ২ দশমিক ১ মিলিয়ন পাউন্ডের বাড়ি, যা তার খালার রাজনৈতিক সম্পর্কযুক্ত একজন ডেভেলপারের মালিকানাধীন, যেখানে টিউলিপ বসবাস করেন এবং ভাড়া দেন।

আনএক্সপ্লেইনড ওয়েলথ অর্ডার জারি করা প্রয়োজন, যাতে টিউলিপের সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে সত্য উদঘাটিত হতে পারে, বিশেষ করে এই বিষয়টি যখন বাংলাদেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট উত্থাপন করেছে। তারা এই সপ্তাহে টিউলিপের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে।আমি এনসিএকে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন তারা এটি জরুরিভাবে তদন্ত করে… [কারণ তিনি] লেবারের দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত। তাই এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে টিউলিপ এখন একটি দুর্নীতি মামলায় জড়িত। এই কেলেঙ্কারি প্রধানমন্ত্রীর বিচার সম্পর্কে আরও গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে, এবং এটি দেখায় যে তিনি ও তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগীরা সরকার পরিচালনার জন্য উপযুক্ত নন।ডেইলি মেইল জানিয়েছে, আদালত ইউডব্লিউও জারি করতে পারে। এর মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তি তার অস্বচ্ছ অর্থের উৎস প্রকাশে বাধ্য হয়।

তবে টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। যদিও এই আস্থা টিউলিপ কতদিন ধরে রাখতে পারবেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ গত জুলাই মাসে টানা চতুর্থবার লেবার পার্টি থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর স্টারমারের সরকারে স্থান পান। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরপরই টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে।

এসব অভিযোগের সঙ্গে নাম আসছে শেখ হাসিনারও। যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলোতে টিউলিপের খালা শেখ হাসিনাকে পতিত স্বৈরাশাসক হিসাবেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে।গত জুলাই মাসে বাংলাদেশে আন্দোলন চলার মধ্যে টিউলিপের বিরুদ্ধে একটি বাড়ির ভাড়ার তথ্য গোপনের অভিযোগ ওঠে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের ৪০০ কোটি পাউন্ড (প্রায় ৫০০ কোটি ডলার) আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে।এই অভিযোগ তদন্তে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের উদ্যোগ নেওয়ার খবর যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলোতে ফলাও করে প্রচার করা হয়। ২০১৩ সালে মস্কোয় রাশিয়ার সঙ্গে ওই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে শেখ হাসিনার সঙ্গে টিউলিপের থাকা ছবিও প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনগুলোতে।