• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

দুর্নীতির জিরো টলারেন্স-৩ আপদের খেসারত


প্রকাশিত: ৬:৫৯ পিএম, ২৫ মে ২৪ , শনিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৮ বার

এরা এখন রাষ্ট্রের আপদে পরিণত হয়েছে। সরকার যে দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিল তা এরা ভুলে গিয়েছিল কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে জনমনে এবং রাজনৈতিক অঙ্গণে।দেশনেত্রী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলে আসছিলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে দুর্নীতির ঠাঁই নাই;

 

শফিক রহমান : দেশের সাম্প্রতিক ৩ ঘটনায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। বলা হচ্ছে ৩ আপদে উঠকো ঝামেলা বাধিয়েছে। নিজেদের অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাওয়া এরা এখন রাষ্ট্রের আপদে পরিণত হয়েছে। সরকার যে দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছিল তা এরা ভুলে গিয়েছিল কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে জনমনে এবং রাজনৈতিক অঙ্গণে।

দেশনেত্রী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার বলে আসছিলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে দুর্নীতির ঠাঁই নাই; সেটা আমলে না নেয়ার খেসারত দিয়েছে এই ৩ আপদ। আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাই যথার্থ বলেছেন, দুর্নীতি করলে কারো রক্ষা নেই এটা যেই হোক, সাবেক আইজিপি হোক বা সেনা প্রধান বা এমপি যেই হোক না কেনো।

গত সোমবার বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আমেরিকায় ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সে দেশের সরকার। এ বিষয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আজিজ আহমেদ তাঁর ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেছেন।

এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। এ ছাড়া অন্যায্যভাবে সামরিক খাতে ‘কন্ট্রাক্ট’ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য জেনারেল (অব.) আজিজ তাঁর ভাইয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য সরকারি নিয়োগের বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছেন। তবে আজিজ অবশ্য সব দোষ অস্বীকার করেছেন।

বুধবার ছিল বুদ্ধ পূর্ণিমা, সরকারি ছুটি। ওই দিন সকাল সকাল খবর এল ঝিনাহদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম কলকাতায় খুন হয়েছেন। যদিও আগে থেকেই তাঁর নিখোঁজ হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছিল। ওই দিন প্রথমে তাঁর লাশ উদ্ধারের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত তা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বলা হচ্ছে, খুন করার পর লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়েছে, যাতে কখনোই তা খুঁজে না পাওয়া যায়। ঠিক যেন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির খুন হওয়ার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সোনা চোরাচালান নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তিনি খুন হন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ ও গোয়েন্দারা এ ঘটনাটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সত্য বেরিয়ে আসুক, এটাই কাম্য।

সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার পুলিশের সাবেক প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ৮৩টি দলিল জব্দ করার এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত এই নির্দেশ দেন।

তিন ঘটনা দেশজুড়ে নানা আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দল ও সরকার এসব ঘটনার দায় নিতে নারাজ। সে কারণে এগুলো নিয়ে কোনো ফোরামে আলোচনার প্রয়োজন মনে করছেন না তাঁরা। তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা সরকার ও দলের পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরছেন।

গতকাল শুক্রবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ব্যক্তি অপরাধ-অপকর্ম করতে পারেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার তাঁকে প্রটেকশন (সুরক্ষা) দিচ্ছে কি না। তিনি উল্লেখ করেন, অপরাধ করে কেউ পার পাবেন না। তিনি সাবেক আইজিপি হোন আর সাবেক সেনাপ্রধান হোন।

টানা তিনবারের এই সংসদ সদস্য এবার নির্বাচনী হলফনামায় বিভিন্ন ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে বিভিন্ন সময় ২১টি মামলার কথা উল্লেখ করেছিলেন। যদিও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই কোনোটিতে খালাস বা কোনোটিতে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এখন কলকাতায় গিয়ে তাঁর খুন হওয়ার ঘটনা যেমন নানা অভিযোগকে সামনে আনছে, একই সঙ্গে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি না থাকলেও বারবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন, ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন হলেও এগুলো একই সূত্রে গাঁথা। দুই বাহিনীর সাবেক দুই প্রধানের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ক্ষমতার কাঠামোর সংশ্লিষ্টতা ছিল। আর খুন হওয়া সংসদ সদস্যও ক্ষমতাসীন দলকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নানা অভিযোগের জন্ম দিয়েছেন। এমন সব ঘটনার দায় এড়ানোর কথা বললে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ মনোভাব তৈরি হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি এ-ও বলেন, এ ধরনের লোকদের চক্র তৈরি হচ্ছে কি না এবং তাঁরাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন কি না, এসব এখন আলোচনা করার সময় হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মন্ত্রী বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়কে রাজনৈতিক বলে মনে করে তাঁদের নেতৃত্ব। এর পেছনে তাঁদের যুক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকে সরকারের ওপর একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরির চেষ্টা ছিল। এর অংশ হিসেবেই সেনাপ্রধানের পদ থেকে অবসর নেওয়ার তিন বছর পর আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফলে এটিকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ।

ওদিকে পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আগে থেকে মুখে মুখে শোনা গেলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা গণমাধ্যমে বিশদভাবে প্রকাশ হয়েছে। তিনিও পুলিশপ্রধান থাকার সময় বেশ প্রভাবশালী ছিলেন। অবশ্য এখন তাঁর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্থাবর সম্পদ জব্দ করার যে আদেশ আদালত থেকে এসেছে, সে জন্য দুদক আবেদন করেছিল।

দুদকের এই আবেদনের পেছনে সরকারের সম্মতি ছিল বলে একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, অভিযোগের দায় এই সাবেক পুলিশপ্রধানের ব্যক্তিগত এবং বিষয়টি আইনগতভাবেই এগোবে।এ ব্যাপারে বেনজীর আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, অভিযোগগুলো এসেছে তাঁদের অবসর নেওয়ার পর। পদে থাকার সময় অভিযোগ ওঠেনি। সে কারণে এর দায় সরকারের নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব মনে করেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে করেন। সেই বৈঠকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন শরিকদের কেউ কেউ। কিন্তু দুই বাহিনীর সাবেক দুই প্রধানের বিষয় ও সংসদ সদস্য খুন হওয়ার ঘটনা নিয়ে কেউ আলোচনা করেননি। জোটের অন্যতম শরিক জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ঘটনাগুলো কতিপয় ব্যক্তির। এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পৃক্ততা নেই বলে তাঁরা মনে করেন।

তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঘটনাগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক। যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোতে সরকার কোনো ছাড় দেবে না। সরকারের এই অবস্থানকে সমালোচকদের বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন।