• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

দুদক থেকে বেরিয়ে-বাচ্চু ড্যাম-কেয়ার


প্রকাশিত: ৪:২১ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৫ বার

স্টাফ রিপোর্টার :  তিন ঘন্টা দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ ফেস করে  বেরিয়ে-এসে সেই বাচ্চু’র ড্যাম-কেয়ার ভাব দেখলো সবাই।  আজ দুপুরে বাচ্চু শুধু বললেন-‘ আমি দোষী নই-আমি Bachu-www.jatirkhantha.com.bdবিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব হয়েছে উত্তর দিয়েছি।’বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে দীর্ঘ তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তবে দেখা গেছে দুদক থেকে বেরিয়ে’ও বাচ্চু’র ড্যাম-কেয়ার ভাবটা যায়নি। তিনি মনোভাব করছেন তেমন কোন অপরাধ’ই তিনি করেননি। ওই সময় বাচ্চু হালকা ছাই রঙের স্যুট, সাদা শার্ট আর প্রিন্টের টাই পরা বেশ ঠাঁটেই ছিলেন। একপর্যায়ে আত্মবিশ্বাসী’র মতো জানালেন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা কোনো অভিযোগই এখনো প্রমাণ হয়নি। মনে হচ্ছিল তিনি ধোঁয়া তুলসিপাতা!!পরে গেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ই তিনি দুই হাত উঁচু করে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে বলেন, এখনো তদন্ত চলছে, তার আগেই যেন গণমাধ্যম কোনো উপসংহার না টানে।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেছেন,  ‘যেসব অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে সেসব বিষয়ে উত্তর দিয়েছি। প্রয়োজনে দুদককে আরও সহযোগিতা করবো।’ এর আগে বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সকাল সোয়া ৯টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে যান আবদুল হাই বাচ্চু। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়।

পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভিযোগগুলি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে জানা যাবে কারা অপরাধী।’তিনি আরও বলেন, ‘অপরাধীরা ছাড় পাবে না। তাদের শাস্তি পেতেই হবে।’ এর আগে দুদক পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বিশেষ টিমের সদস্যরা বাচ্চুকে ২০০৯-১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাংকটিতে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

গত কয়েকদিনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বেসিক ব্যাংকের পাঁচ পরিচালককে। ২০০৯-১৪ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর মেয়াদে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ওই সময়ে জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটিসহ অন্যান্য কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও পর্ষদ সভায় এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই ওই ব্যাংক থেকে লোপাট হয়েছিল সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।

জিজ্ঞাসাবাদকালে তাদের কাছে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। অর্থ আত্মসাতে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে ব্যাংকের নথিপত্রও দেখানো হয়। তবে সাবেক চেয়ারম্যানকে দুদকের মুখোমুখি হয়েছে এবারই  প্রথম। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুই মেয়াদে ছয় বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ওই ব্যাকংটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। ২০১৫ সালের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬টি মামলা করে দুদক। এই হিসাব অনুযায়ী গত দুই বছরের বেশি সময়ে মামলাগুলোর চার্জশিট পেশ করা হয়নি। দুদক সূত্রমতে, ৫৬ মামলার আওতায় ওই সমুদয় পরিমাণ টাকার ঋণ প্রস্তাবই ছিল ত্রুটিপূর্ণ।

প্রস্তাবগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) রিপোর্ট ছিল না। প্রস্তাবে উল্লেখ করা জামানতের মূল্য যাচাই করা হয়নি। অধিকাংশ ঋণ গ্রহীতার কোনো ব্যবসা নেই। কারও কারও ছোট্ট পরিসরে ব্যবসা থাকলেও ৫০, ৮০, একশ’ কোটি টাকার ঋণ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা নেই। ঋণ প্রস্তাবে এসব বিষয় উল্লেখ করা হলেও পর্ষদ তা বাতিল না করে অনুমোদন দিয়েছে।

২০১৫ সালের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান, পল্টন ও মতিঝিল থানায় দায়ের করা ৫৬ মামলার তদন্ত করছেন দুদক উপপরিচালক ঋত্বিক সাহা, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, মির্জা জাহিদুল আলম, মাহবুবুল আলম, শামসুল আলম, সহকারী পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন, উপসহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান ও আ স ম শাহ আলম।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ওই চার বছর তিন মাসে ব্যাংক থেকে মোট ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়, যার সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।

ওই সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক ৫৬টি মামলা করে। বাকি ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫ হাজার ৬৫৯ টাকা আত্মসাতের অনুসন্ধান শুরু করা হয়নি। গত বছরের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল, গুলশান ও আগারগাঁও থানায় দায়ের করা ওইসব মামলায় ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়।