দুদকের জালে ইসলামী ব্যাংকের এমডি মওলা
লাবণ্য চৌধুরী : অবশেষে ফেসিস্ট মুক্ত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক! ইসলামী ব্যাংকের বহুল বিতর্কিত লুটেরা এস আলমের সহযোগী এমডি মনিরুল মাওলা আউট হয়েছেন। ব্যাংককের অভ্যন্তরে কর্মকর্তাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তিনি অফিস ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। যাবার আগে মওলা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল সরিয়ে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে। সূত্র জানায়, বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য হলেন মুহাম্মদ মনিরুল মওলা।
ইসলামী ব্যাংক সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানায়, কর্মকর্তাদের বাধার মুখে তিনি গত ১৯ ডিসেম্বর অফিস ছাড়তে বাধ্য হন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।তবে এমডি পদ থেকে সরে যাওয়ার গুঞ্জনের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন এমডি মনিরুল। তিনি জানান, অসুস্থতার কারণে বাসা থেকে অফিস করছি। পদত্যাগ করিনি। আজকেও (মঙ্গলবার) বাসা থেকে অফিসিয়াল কিছু কাজ করেছি। আগামী বৃহস্পতিবার সশরীরে অফিস করব।তবে ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, উনি মামলার আসামি। সঙ্গত কারণেই উনার পদে থাকার বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এমন প্রেক্ষাপটে, আমরা জানি, উনি পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এখন উনি যদি অস্বীকার করেন, তাহলে কিছু করার নেই।
চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগ্রুপ এস আলমের ঋণ জালিয়াতির সহায়তাকারী হিসেবে ব্যাংকটির কর্মকর্তারা মুহাম্মদ মনিরুল মওলার বিরুদ্ধে নানাভাবে আন্দোলন করে আসছিলেন। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের তোপের মুখে তিনি সরে যেতে বাধ্য হন। পরে আবারও আগের দায়িত্বে (এমডি) থেকে অফিস শুরু করেন। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে ঋণে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকে মামলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী ব্যাংকের একজন ঊধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এখন অনুপস্থিত আছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আমরা শুনেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পারিনি। তবে ব্যাংকটির অন্য একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এমডি মনিরুল মওলা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
জালিয়াতির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক থেকে এক হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও আলোচিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাইফুল আলম ওরফে এস আলম, ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মনিরুল মওলাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক।
দুদক চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ বাদী হয়ে মামলাটি করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক ইয়াছিন আরাফাত। মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে এই টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন।মামলার আসামিরা হলেন- এস আলমের ছেলে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমদ, সাবেক পরিচালক মো. ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, মো. সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক মো. কামরুল হাসান ও সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ।
আরও রয়েছেন- ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন, ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমান এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাক্তাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাক্তাই শাখার প্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনজুর হাসান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ও দক্ষিণের অপর জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ।
ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আসামিরা হলেন- মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংকের মোহাম্মদ এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং করপোরেশনের মোরশেদুল আলম, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, রেইনবো করপোরেশনের রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, আনছার এন্টারপ্রাইজের আনছারুল আলম চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের সহিদুল আলম, ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশনের আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সের এম এ মোনায়েম, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউসের এরশাদ উদ্দিন,
জাস্ট রাইট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মো. গিয়াস উদ্দিন, এক্সক্লুসিভ বিজনেস হাউসের ফেরদৌস আহম্মদ বাপ্পি, এনেক্স বিজনেস কর্নারের আনোয়ারুল আজম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউসের মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ মামুন, চৌধুরী বিজনেস হাউসের মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী, ডিলাক্সিয়াম ট্রেডিং করপোরেশনের কাজী মেজবাহ উদ্দিন, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের এমডি মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের এমডি মো. রাশেদুল আলম ও পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সবুর, স্যোসাল ট্রেড সেন্টারের আলী জহুর ও শাহ আমানত ট্রেডার্সের মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী চৌধুরী।