দুদকের কব্জায় ১৭ বীমা কোম্পানীর মালিকদের ১৭৮১ কোটি লুটপাটের নথি
এস রহমান : এবার দুদকের কাছে এসেছে ১৭ বীমা কোম্পানীর মালিকদের ১৭৮১ কোটি লুটপাটের নথি। ভুয়া খরচা দেখিয়ে এসব বীমা কোম্পানীর মালিকরা এই বিপুল পরিমান টাকা মেরে দিয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ১৭টি জীবন বীমা কোম্পানির দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাপনা ব্যয় অতিরিক্ত দেখিয়ে গ্রাহকদের এক হাজার ৭৮১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই শেষে কমিশন ১৭টি বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে আসা এসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে অনুসন্ধানের জন্য দুই সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরপরই দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারকির দায়িত্ব দিয়ে দুই সদস্যের অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। দুদকের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে অনুসন্ধান টিমের অপর সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন।
অনুসন্ধানের আওতায় পড়া বীমা কোম্পানিগুলো হলো- পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স, জীবন বীমা করপোরেশন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, সন্ধানী লাইফ, প্রগতি লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, সানলাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, মেঘনা লাইফ, ডেল্টা লাইফ, রুপালী লাইফ, হোমল্যাণ্ড লাইফ, প্রোগ্রেসিভ লাইফ, বায়রা লাইফ এবং ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, বীমা খাতের সরকারি-বেসরকারি পুরনো ১৭ কোম্পানি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে অবৈধভাবে ব্যয় করেছে এক হাজার ৯৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের অংশ ৯০ শতাংশ বা ১ হাজার ৭৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে কোম্পানিগুলোর দাখিল করা তথ্যে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র তথ্যানুসারে, অবৈধ ব্যয়ের কারণেই অনেক কোম্পানি চরম আর্থিক সংকটে পড়েছে। সময়মতো গ্রাহকদের দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে গ্রাহকদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে চরম অনাস্থা। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি ২০১২ সাল থেকেই অবৈধ ব্যয় কমিয়ে আনতে বেশ কয়েকবার তাগিদ দিয়েছে কোম্পানিগুলোকে।
দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, আইডিআরএ’র কাছে কোম্পানিগুলোর দাখিল করা তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সরকারি-বেসরকারি ১৭টি বীমা কোম্পানির মধ্যে অবৈধ ব্যয়ের শীর্ষে রয়েছে সাতটি কোম্পানি। ওই সাত কোম্পানি মোট অবৈধ ব্যয় করেছে ১ হাজার ৩৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা, যা মোট অবৈধ ব্যয়ের ৭০ দশমিক ৬ শতাংশ। আর এর মধ্যে গ্রাহকের রয়েছে ১ হাজার ২৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
অবৈধ ব্যয়ের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পপুলার লাইফ ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, জীবন বীমা করপোরেশন ২৭৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ২শ কোটি ৫১ লাখ টাকা, পদ্মা ইসলামী লাইফ ১৬৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, গোল্ডেন লাইফ ১৬৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা, সন্ধানী লাইফ ১৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ও প্রগতি লাইফ ১৪৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
এ ছাড়া অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে সানফ্লাওয়ার লাইফ ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকা, সানলাইফ ৯০ কোটি ৭০ লাখ টাকা, প্রাইম ইসলামী লাইফ ৭৪ কোটি ৪১ লাখ, মেঘনা লাইফ ৬৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ৫৫ কোটি ৩২ লাখ টাকা, রুপালী লাইফ ৫০ কোটি ২৩ লাখ টাকা, হোমল্যান্ড লাইফ ৪৮ কোটি ৮ লাখ টাকা, প্রোগ্রেসিভ লাইফ ৪২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, বায়রা লাইফ ৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা ও ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৭ বছরে ২১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা অবৈধ ব্যয় করেছে।