• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

তেল ট্যাংকার ডুবি: সুন্দরবনের ডলফিন অভয়ারণ্যে মহাবিপর্যয়


প্রকাশিত: ১০:৩৯ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ১৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৪ বার

oil-Sundorbanদিনা করিম.সুন্দরবন ঘুরে এসে: তেল ট্যাংকার ডুবিতে সুন্দরবনের ডলফিন অভয়ারণ্যে মহাবিপর্যয় আশংকা করা হচ্ছে।সুন্দরবনের ভেতরে তেল নিয়ে জাহাজ–ডুবির ঘটনা বনটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিবেশগত বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যা সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্যের দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতি করতে পারে।বন বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির জরিপ অনুযায়ী, সুন্দরবনের মংলা থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার এলাকায় আট প্রজাতির ডলফিন দেখতে পাওয়া যায়, যা বিশ্বের সবচেয়ে কম স্থানে বেশি প্রজাতির ডলফিনের বিচরণ এলাকা। ইরাবতী, বোতলনাক, গাঙ্গেয়, ইন্দো প্যাসিফিক হাম্পব্যাক, ফিনলেস পরপয়েস, প্যানট্রপিক্যাল স্পটেড ডলফিনের প্রজাতি একসঙ্গে এই এলাকাতেই দেখা যায়। এ ছাড়া বেঙ্গল টাইগারসহ বিশ্বের মহাবিপন্ন প্রজাতির ১২ থেকে ১৫ প্রজাতির প্রাণী বনের এই এলাকায় বিচরণ করে থাকে। তেল ছড়িয়ে পড়ায় এই প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বন্য প্রাণীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি এবং ওয়াইল্ড টিম।
holaবন বিভাগ ও সুন্দরবনবিষয়ক গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় এই বনে এর আগে ছোটখাটো জাহাজডুবি এবং বর্জ্য তেল ছড়িয়ে পড়লেও তার মাত্রা এত বিস্তৃত ছিল না। এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বিপর্যয়।
গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে তেলবাহী একটি জাহাজ ডুবে যায়। এতে সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি ফার্নেস তেল ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পর বন বিভাগের পাশাপাশি বন্য প্রাণীবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটি এবং ওয়াইল্ড টিমের দুটি দল সুন্দরবনে অবস্থান করছে।
তেল ছড়িয়ে পড়া এলাকাটি সরকার ঘোষিত ডলফিনের অভয়ারণ্য। এ ছাড়া সুন্দরবন ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য এবং জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। জাতিসংঘের ওই দুই সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী সুন্দরবনের ভেতর এ এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে নৌপরিবহন অধিদপ্তর বন আইন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (সিবিডি), ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিশনের নিয়ম লঙ্ঘন করে বনের ভেতর দিয়ে নৌপথ চালু করে। গত ১ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে তিনিও নৌপথটি বন্ধের জন্য নির্দেশ দেন।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০টি বড় পণ্যবাহী জাহাজ এবং তেলবাহী ট্যাঙ্কার বনের ভেতর দিয়ে চলত। এক বছর ধরে বনের ভেতর দিয়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০টি জাহাজ চলাচল করছে।
প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী  বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে এই নৌপথটি বন্ধের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিষয়টি তুলে ধরেছি। কিন্তু তা বন্ধ না হওয়ায় আজকে এত বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল। এই তেল সুন্দরবনের জন্য মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উচিত জাহাজটি দ্রুত উদ্ধার করা এবং তেল ছড়িয়ে পড়া বন্ধে কাজ করা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার  বলেন, এ দুর্ঘটনা বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আমি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম।’ তবে শ্যালা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়লে বড় কোনো আশঙ্কা নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, জোয়ার-ভাটার টানে তেল বঙ্গোপসাগরে চলে যাবে।
বন বিভাগ থেকে একাধিকবার এবং জাতিসংঘের জলাভূমিবিষয়ক সংস্থা রামসার কর্তৃপক্ষ এবং বিজ্ঞান-শিক্ষা ও ঐতিহ্যবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো থেকে নৌপথটি নিয়ে আপত্তি তুলে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই নৌপথসহ সুন্দরবনের পাশে গড়ে ওঠা রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার কারণে বনের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র থেকে সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান হারাতে পারে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।