• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

তেতুলতলার উইকেট থেকে ‘আনলিশ দ্য ফিজ!-মুস্তাফিজের অজানা অধ্যায়-


প্রকাশিত: ৪:৩৬ পিএম, ২২ মে ১৬ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৮ বার

আসমা খন্দকার  :  ছোটবেলায় মাছের ঘের দেখে আর মাছ ধরে ওর জন্ম হলেও ওই সময় থেকেই 555টেনিস বল ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের কাটার জাদুকর মুস্তাফিজের সঙ্গি। ওর বালিশের পাশে থাকত টেনিস বল।

ওই বল নিয়ে রাতে ঘুমাতো আর সকাল হলেই উইকেট তাক করে তা টেনিস বল দিয়েই উড়িয়ে দিত। সাতক্ষীরার আশাশুনির সেই তেতুলতলা গ্রামের উইকেট থেকে মুস্তাফিজ বিশ্ব কাঁপাচ্ছে! কেমন ছিল তেতুলতলার সেই মুস্তাফিজ! আর কেমনই বা ছিল মুস্তাফিজের তেতুলতলার উইকেট-তা জানার জন্যে যাওয়া হয়েছিল সাতক্ষীরায়।

Mustafiz_with_his_familly-www.jatitirkhantha.com.bdমুস্তাফিজের তেতুলতলা গ্রাম যেন সবুজ শ্যামল গ্রাম। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজের সমারোহ এবং তেতুল গাছের সারি। মুস্তাফিজের মা বললেন, ঠিক ছয়টা বাজলে ফোন আসে। অনেক দূর থেকে ভেসে আসে সেই কণ্ঠস্বর, ‘মা, কেমন আছ?’ ভারতের ছত্তিশগড় থেকে ফোন করে মায়ের কাছে দোয়া চাইলেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিছুক্ষণ পরে মাঠে যাবেন। তাঁর দল হায়দরাবাদ সানরাইজার্সের গুরুত্বপূর্ণ খেলা দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের সঙ্গে।

1মুস্তাফিজের মা বললেন, ও খেলা থাকলেই ফোন করে। জানা গেল, রুটিনের মধ্যে অবশ্যকর্তব্য হিসেবে আছে মা ও বাবাকে ফোন করে দোয়া নেওয়া। ফোনেই মা বলেন, বাবা ঠিকমত খেয়ে দেয়ে নিস কিন্ত।  একদম তো শুকায় গেচস বাবা!’ ততক্ষণে টেলিভিশনে সামনে ওরা। আইপিএলে মুস্তাফিজের খেলা দেখতে বসে অপেক্ষা করছেন তাঁর বাবা-মা ও ভাই।

111হায়দারাবাদের হয়ে মুস্তাফিজের বরাদ্দ ৪ ওভার।এতেই কাফি সারা বিশ্ব !একেকটি বল যেন একেকটি যাদু!  ব্যাটসম্যানদের প্রবল দাপটের খেলা এই টি-টোয়েন্টিতে বাঘা বাঘা খেলোয়াড়রা খাবি খেয়েছে মুস্তাফিজের বলে। মুস্তাফিজের প্রতিটি বল যাদুর মত উইকেট ভেঙ্গে দেয়! এ যাদু দেখতেই সারা বাংলার মানুষ বসে থাকে টিভির পর্দায়। শুধু কি বাংলা সারা ভারত আফ্রিকা ইউরোপ এখন মুস্তাফিজের ভক্ত!! এই সেই মুস্তাফিজ সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের আশাশুনি থানার তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান।

Mustafij-www.jatirkhantha.com.bdমুস্তাফিজের মা বললেন, ছয় ভাই-বোনের মধ্যে বাড়ির সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে আদরের ছেলেটা এত দিন বাড়ি ছেড়ে থাকেনি। ওর জন্য খুব কষ্ঠ হয় মায়ের। মা বলেন, , তাঁর কোলের ছেলেটা, এই সেদিন মুখে ভাত তুলে খাইয়ে না দিলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা ছেলেটা এখন শুধু তাঁর একার নয়। এই ছেলেটার ওপর এখন সারা বাংলাদেশের অধিকার।

এ ছেলেটার জন্য শুধু তিনি নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশেষ প্রার্থনা করেন না; করে সারা বাংলাদেশের মানুষ। আইপিএল, হোক না সেটা শুধুই ভারতের ঘরোয়া এক টুর্নামেন্ট; সেখানেও মুস্তাফিজের ভালো বোলিংকে বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষ নিজেদের গর্ব হিসেবেই দেখে। মুস্তাফিজ নামটা এবারের আইপিএলে সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত হয়েছে। আর তাঁর নামের সঙ্গে সঙ্গে গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে বাংলাদেশের নামটাও!

মাত্র এক বছরের একটু বেশি সময় হলো আবির্ভাবের। তাতেই কী করে যেন এই ছেলেটা বাংলাদেশের সবার মন জিতে এবার জয় করতে চলেছেন ক্রিকেট-বিশ্ব!

হায়দরাবাদ নামের যে শহরের ভাষাও বড্ড অচেনা, খাবার কিংবা সংস্কৃতি; সেখানেও কেন মুস্তাফিজকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি ব্যানার-ফেস্টুন উড়বে গ্যালারিতে? মুস্তাফিজ বিশেষ ডাকনামে পরিচিত হবেন—দ্য ফিজ! মুস্তাফিজ বোলিংয়ে এলেই গ্যালারির দৈত্যপর্দায় ভেসে উঠে, ‘আনলিশ দ্য ফিজ!’ মুস্তাফিজের বোলিং বলে এর ভাষা এবং সে সেই কাটার জাদুকর।

হায়দারাবাদের হয়ে মুস্তাফিজের বরাদ্দ ৪ ওভার।এতেই কাফি সারা বিশ্ব !একেকটি বল যেন একেকটি যাদু!  ব্যাটসম্যানদের প্রবল দাপটের খেলা এই টি-টোয়েন্টিতে বাঘা বাঘা খেলোয়াড়রা খাবি খেয়েছে মুস্তাফিজের বলে। মুস্তাফিজের প্রতিটি বল যাদুর মত উইকেট ভেঙ্গে দেয়! এ যাদু দেখতেই সারা বাংলার মানুষ বসে থাকে টিভির পর্দায়। শুধু কি বাংলা সারা ভারত আফ্রিকা ইউরোপ এখন মুস্তাফিজের ভক্ত!! এই সেই মুস্তাফিজ সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের আশাশুনি থানার তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান।

মুস্তাফিজের মা শুধু বোলিং দেখেন না তিনি দেখেন কখন উইকেট নিচ্ছে তার ছেলে এবং ওই রান মুস্তাফিজ চেক দিতে পারবে তো?  মুস্তাফিজের বাবা আবুল কাশেম গাজী এখানকার সবচেয়ে অবস্থাপন্ন চিংড়িঘেরের মালিকদের একজন। তিনি চেয়েছিলেন, বাড়ির ছোট ছেলেটা ডাক্তার হবে। পড়াশোনায় মন বাড়াতে একজনের বদলে দুজন গৃহশিক্ষকও রেখেছিলেন। কিন্তু পারেননি।

সেই মুস্তাফিজ এখন সারা ক্রিকেট বিশ্বের বিস্ময় বালক। হায়দারাবাদের খেলা হলেই তেতুলতলা গ্রামের রাস্তা জনশুন্য হয়ে যায়। সবাই চলে যায় বাড়িতে।যার বাসায় টিভি নেই তারা যান মুস্তাফিজের বাসায়।

এলাকার লোকজন মিলে সবাই খেলা দেখেন। ম্যাচ শুরুর আগে সবার অবশ্য একটাই টেনশন—কারেন্ট নিয়ে। লোডশেডিংয়ের কারণে মুস্তাফিজের পুরো ৪ ওভার বোলিং দেখার সৌভাগ্য খুব কম সময়ই মিলেছে তাঁর পরিবারের, তাঁর মায়ের।

মুস্তাফিজের নতুন খাটটা পড়ে আছে, যে খাটে এখন খুব কমই শোয়া হয় তাঁর। ফাইভ স্টার হোটেলে হোটেলে কাটে জীবন। যে জীবনে একধরনের আনন্দ অবশ্যই আছে। তা তিনি উপভোগও করেন। কিন্তু কাঁটাচামচ দিয়ে খুব কেতা করে খাওয়ার চেয়ে তাঁর বেশি ভালো লাগে গরু আর মুরগির মাংসের ভুনা। সেটাও দেশি মুরগি হতে হবে অবশ্যই। বাড়ি ফিরলে তাঁর এই দুটি পদ রান্না করা বাধ্যতামূলক। টেবিলে আবার সাজিয়ে রাখতে হবে সেই রান্না।

মুস্তাফিজের ভাই মোখলেছুর জানান, মুস্তাফিজ খাবেন কম, দেখবেনই বেশি। ভিনদেশি খাবার খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে যাওয়া চোখকেও যেন তৃপ্তি দিতে চান। সবচেয়ে বড় কথা, মায়ের হাতের রান্নার চেয়ে সুস্বাদু খাবার পৃথিবীতে আর আছে নাকি!তবু মুস্তাফিজ সেই জীবন মানিয়ে নিয়েছেন।

মুস্তাফিজের বাবা আবুল কাশেম জানান ‘ও যেবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেইলে ফেরল, দুই দিনে তো মনে হয় কেবল পাঁচ হাজার টাকার মিষ্টিই খাইয়েছি বাড়িতে আসা মেহমানদের’—‘সে কী যে মাইনষের ভিড়! কী কব!’ আবুল কাশেম জানালেন, ছেলে একটা গাড়ি কিনেছে। সেটাও ঘরবন্দীই থাকে। এখনো বাড়ির লোকেরা মোটরসাইকেলেই স্বচ্ছন্দ। মুস্তাফিজের যাওয়া-আসার সুবিধা হয় ভেবেই গাড়িটা রাখা। ছেলেটা যে ঢাকায় থাকতেই চায় না।

মুস্তাফিজের নিচতলায় ছোট্ট একটা শোবারঘরেই টিভি। চারদিকে ছড়িয়ে আছে এরই মধ্যে জমে যাওয়া অজস্র স্মারক; ট্রফি, ডামি চেক, ম্যাচসেরা হওয়া ম্যাচের সেই বলগুলোও।এগুলো মুস্তাফিজের জাদুঘর বলে সবাই। এসব নিয়ে এলাকার ছেলেরা প্রতিদিন নাড়াচাড়া করে।অনেকে শিক্ষা নেয় নতুন করে আরেক মুস্তাফিজ হওয়ার।