তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি “সক্রিয় বিবেচনার” আশ্বাস নরেন্দ্র মোদির
অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং সাংবাদিকদের জানালেন, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে পর্যায়ে পেঁৗছেছে, তাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হয়ে ভারতের পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রী মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শিরীন শারমিন চৌধুরী এখন দিল্লি রয়েছেন। সোমবার মোদির শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি৷
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শিরীন শারমিনের বৈঠকটি চলে প্রায় আধঘণ্টা। বৈঠকের শুরুতেই স্পিকার মোদির হাতে তুলে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা চিঠি। চিঠিতে মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে সার্বিক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন শেখ হাসিনা। দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ইত্যাদি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এতে বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত একে অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কাজেই পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলোর মোকাবিলা একযোগে হলে দুই দেশই উন্নতির দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা।
শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছি, সার্ক সদস্যদেশগুলোর সম্পর্ক বিকাশের জন্য এই আমন্ত্রণ এক জোরালো বার্তা।’ তিনি বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি সই ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়গুলো “সক্রিয়ভাবে বিবেচনা” করার আশ্বাস দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। আমন্ত্রণ গ্রহণ করে তিনি শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।’
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দুই দেশ যেসব ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করছে, স্পিকার সেগুলোর উল্লেখ করে বলেন, যোগাযোগ, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ও শক্তি, পরিবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা অনেক জোরদার হয়েছে। এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকা জরুরি বলে দুজনেই একমত হয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ অভিহিত করে বাংলাদেশের স্পিকার জানান, নরেন্দ্র মোদিও দুই দেশের সহযোগিতা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের জানান, সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তির প্রসঙ্গটি শিরীন শারমিন চৌধুরী তুলেছিলেন। নরেন্দ্র মোদি তাঁকে বিষয় দুটি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
নির্বাচনী প্রচারণায় কথিত বাংলাদেশিদের ভারতে অনুপ্রবেশের কথা তুলেছিলেন মোদি। বাংলাদেশের স্পিকারের সঙ্গে বৈঠকে সেই প্রসঙ্গ উঠেছিল কি না জানতে চাওয়া হলে সুজাতা শুধু বলেন, সীমান্ত সমস্যা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার সার্বিক বিষয়ই আলোচিত হয়েছে।
সুজাতা সিং বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সবাইকে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, সার্ক সদস্যদেশের প্রত্যেকেরই অন্যের কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে। যেমন, বাংলাদেশ থেকে আমরা “ক্ষুদ্রঋণ” বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারি।’
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ: জাতীয় সংসদ সচিবালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, গতকাল ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে দেখা করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দিয়ে স্পিকার বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আমরা আরও উপকৃত হব৷’ প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের স্পিকারকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক এ করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সুষমা স্বরাজকে অভিনন্দন: ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। গতকাল পাঠানো এক চিঠিতে লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভের পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় সুষমা স্বরাজকে অভিনন্দন জানান মাহমুদ আলী। তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে ভারতের গুরুত্বের পাশাপাশি একাত্তর সাল থেকে দুই দেশের সম্পর্কের তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ বাংলাদেশ গভীরভাবে বিশ্বাস করে, তিস্তা চুক্তি সই ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় ভিত্তি পাবে৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান এ এইচ মাহমুদ আলী।
এদিকে ভারতের নবনিযুক্ত পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বি কে সিংকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম৷