তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ে দিল্লির জোর প্রচেষ্টা
দিনা করিম :
তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ে দিল্লির জোর প্রচেষ্টা আর স্থলসীমান্ত চুক্তি দ্রুত অনুমোদন এ দিল্লি জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, সীমান্ত চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা ছিল, এখন তিনি এর পক্ষে মত দিয়েছেন। তাই এটা খুব দ্রুত হয়ে যাবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী বুধবার কাঠমান্ডুতে সন্ত্রাসবাদ দমন আর নিরাপত্তা প্রসঙ্গ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। নেপালের রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ১৮তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি বৈঠক করেন। দুই নেতা প্রায় ৪৫ মিনিট আলোচনা করেন।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল উপস্থিত ছিলেন। হাসিনা-মোদির বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী র্যাডিসন হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ দমনের কথা তুললে মোদি তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে এই অঞ্চলের সব দেশকে একযোগে কাজ করা উচিত। বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের উল্লেখ করে মোদি বলেন, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্য বিনিময় করা জরুরি। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও উন্নয়নের অন্তরায় এই জঙ্গিবাদ।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন প্লাটিনাম হোটেলে আয়োজিত পৃথক ব্রিফিংয়ে জানান, সন্ত্রাসবাদ দমন ও নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে দুই প্রধানমন্ত্রী বিস্তারিত আলোচনা করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা জানান, দ্বিপক্ষীয় অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে মোদি নিজেই আলোচনা শুরু করেন। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর করার বিষয়ে তিনি বলেন, তিস্তা এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে তিনি জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা নরেন্দ্র মোদিকে আবারও বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি বলেন, ‘আমি আসব, এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।’ ঢাকা সফরের সময় তিস্তা ও স্থলসীমান্ত চুক্তির বিরোধিতাকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশনে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য ভারতীয় সংবিধান সংশোধন করতে হবে। গত মঙ্গলবার ভারতের রাজ্যসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে।
এ অধিবেশন শুভ বড়দিনের আগে শেষ হওয়ার কথা। বিজেপি সরকার এ অধিবেশনে সীমান্ত চুক্তি কার্যকর করতে এ বিলটি পাসের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতিমধ্যে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি সর্বসম্মতভাবে বিলটি চূড়ান্ত করেছে।
নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক:
ইকবাল সোবহান চৌধুরী জানান, শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাঁকে অভিনন্দন জানান। তিনি শেখ হাসিনার জঙ্গিবাদ দমন এবং বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের কৌশল জানতে পাকিস্তানের একটি প্রতিনিধিদল আসবে বলে উল্লেখ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ-সংকট এবং জঙ্গিবাদ আমাদের প্রধান সমস্যা। জঙ্গিবাদের জন্য পাকিস্তানের ১০৩ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান নওয়াজ।
পাকিস্তানের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য শেখ হাসিনা নওয়াজ শরিফের প্রশংসা করেন। তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে শেখ হাসিনার ভক্ত বলে উল্লেখ করেন নওয়াজ।
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের বিরূপ মন্তব্য নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালা ও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গেও বৈঠক করেন।