তাসকিনের গতির জাদু-বিশ্ব ষড়যন্ত্রকারীরা স্তব্ধ
প্রিয়া রহমান : বাংলাদেশ আফগানিস্তান ওডিআই সিরিজ শুরুর আগে অনলাইন দৈনিক জাতিরকন্ঠ’ই একমাত্র দ্বিধাহীনভাবে বলেছিল এবার আফগানরা দেখবে তাসকিনের জাদু। রবিবার রাতে সেটাই ফললো। বিশ্ব দেখল ষড়যন্ত্র করে তাসকিনের গতির জাদুকে স্তব্ধ করা যায়নি। শেষ ওভারে তাসকিনের জাদু দেখেছে বিশ্ব। চার চারটি উইকেট নিয়ে হাওযায় মিললো গতির জাদুকর তাসকিন।
আফগানদের বিপক্ষে দারুণ জয়ের মূল নায়ক সাকিব আল হাসানের প্রতিক্রিয়া পরশু রাতেই শোনা হয়েছে। ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। কিন্তু ম্যাচের আরেক নায়ক তাসকিন আহমেদের যে দেখা নেই! কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত অনুশীলনে বাংলাদেশ দলের এই পেসার অবশ্য ছিলেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের সামনে আসেননি।
আফগানিস্তানের সঙ্গে তাসকিনের ওপর চাপ কতটা জেঁকে বসেছিল, সেটি তাঁর প্রথম স্পেল দেখেই বোঝা যাবে। ৩ ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান, উইকেট পাননি একটিও। তৃতীয় ওভারে আফগান উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শেহজাদ মেরেছেন পরপর তিনটি বাউন্ডারি। তাসকিনের ওই ওভারে আফগানিস্তান তুলেছে ১৭ রান। দ্বিতীয় স্পেলটাও বিবর্ণ। ২৭ ও ২৯তম—২ ওভারে উইকেটশূন্য থেকে দিয়েছেন ১২ রান। আর তৃতীয় স্পেলে ১ ওভারে ৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য।
পরে আসল তাসকিনের দেখা মিলেছে শেষ স্পেলে। আফগানদের ১৮ বলে দরকার ২৭ রান। বাংলাদেশের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া মোহাম্মদ নবী। গতির সঙ্গে কখনো ইয়র্কার—তাসকিনের মূল শক্তি এটিই। কিন্তু নবীর বিপক্ষে ভিন্ন এক অস্ত্র ব্যবহার করলেন তিনি। শর্ট অফ কাটারটা তাড়িয়ে চালাতে গিয়ে লং অফে সাব্বির রহমানের হাতে ধরা পড়লেন আফগানিস্তান ব্যাটসম্যান। এক বল পরে ফিরলেন অধিনায়ক আসগার স্টানিকজাই, যিনি ২০১৪ এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেওয়া ম্যাচের অন্যতম চরিত্র।
এল শেষ ওভারটা।
তাসকিনের এটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আফগানিস্তানের দরকার ১৩ রান, হাতে ২ উইকেট। ফিল্ডিং পজিশন আর ব্যাটসম্যানের মুভমেন্ট দেখে বোলিং করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। উইকেট না পাওয়া গেলেও যেন রান তুলতে না পারে আফগানরা—এমনই ছিল রণকৌশল। তাতে শতভাগ সফল। আফগানিস্তান তো রান তুলতে পারেইনি, উল্টো হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়েছে ব্যাটিং লাইনআপ। প্রথম ৩ উইকেট পাওয়ার পর উচ্ছ্বাস পরিমিত হলেও শেষ উইকেটের পর দেখা গেল তাসকিনের চেনা সেই উদ্যাপন—ডানা মেলে সবুজ মাঠটায় প্রজাপতি হয়ে ওড়া!
দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকায় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলের জড়তা ছিল লক্ষণীয়। তাসকিনের পরিস্থিতি ছিল আরও কঠিন। বোলিং নিষেধাজ্ঞা থাকায় গত পাঁচ মাসে তাঁকে যেতে হয়েছে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে। দলের সঙ্গে নিয়মিত অনুশীলন করলেও চরম অনিশ্চয়তায় ম্যাচ খেলার মানসিক প্রস্তুতি ঠিকভাবে নিতে পারেননি। ২৩ সেপ্টেম্বর বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষার ফল দেওয়ার আগ পর্যন্ত নিশ্চিত ছিলেন না, আদৌ এই সিরিজে খেলতে পারবেন কি না।
স্নায়ুচাপে ভোগায় শুরুর বোলিংটা ভালো হয়নি। তবে ম্যাচের বয়স যত বেড়েছে ততই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। ধীরে ধীরে ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। শেষ দিকে দল চাপে থাকলেও তাসকিন ছিলেন স্বচ্ছন্দ। ফলে শেষটা মনের মাধুরী মিশিয়ে উদযাপন করেছেন তাসকিন ও তার ভক্তরা।