তনুর ছোট ভাইয়ের বন্ধু-মিজানুরকে চোখ ও হাত বেঁধে রাখা হয়েছিল কেন?
বিশেষ প্রতিবেদক : হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি ঘরে এত দিন রাখা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন সোহাগী জাহান তনুর ছোট ভাইয়ের বন্ধু মিজানুর রহমান ওরফে সোহাগ। কেবল খাওয়ার সময় তাঁর এক হাত খুলে দেওয়া হতো। সেখানে আরও কয়েকজন ছিল। কারা, কোথায় তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল, তিনি বুঝতে পারেননি।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় নিখোঁজ থাকার পর আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টার দিকে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নারায়ণসার গ্রামে নিজ বাড়িতে ফেরেন মিজানুর। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন। মিজানুর শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। তাঁর কথাবার্তা এলোমেলো।
মিজানুরের ভাষ্য, বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মাইক্রোবাসের মধ্যে তাঁর চোখ ও হাত বেঁধে ফেলা হয়। এরপর থেকে সব সময় তাঁর চোখ ও হাত বাঁধা ছিল। খাওয়ার সময় এক হাত খুলে খাবার দেওয়া হতো। আজ সকালে তাঁকে গাড়ি থেকে বাড়ির কাছে নামিয়ে দেওয়া হয়।
মিজানুরের চাচা মো. সেলিম বলেন, ফজরের নামাজ আদায় করার পর তিনি হাঁটছিলেন। নাজিরাবাজারে মদিনা পেট্রলপাম্পের কাছে মিজানুরকে দেখতে পান। তিনি সেখান থেকে মিজানুরকে বাসায় নিয়ে যান। এ সময় তাঁর চোখ ও হাত বাঁধা ছিল না বলে তিনি জানান।
মিজানুর বলেন, ‘পাপ করিনি। তাই ফিরে এসেছি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে এনেছেন।’ মিজানুরের মা সাহিদা আক্তার ও বাবা নুরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের ছেলে ফিরে এসেছে। এতেই তাঁরা খুশি।
মিজানুরের বড় বোন খালেদা আক্তার এর আগে বলেন, মিজানুর যে লুঙ্গি পরে বাড়ি থেকে গিয়েছিলেন, সেই লুঙ্গি পরেই ফিরে এসেছেন। তিনি যেখানে ছিলেন, ভালো ছিলেন বলে পরিবারকে জানিয়েছেন।
বুড়িরচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘সকালে খবর পেয়েছি ছেলেটি ফিরে এসেছে। পুলিশ মিজানুরের বাড়িতে যাবে।’গত ২৭ মার্চ গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে একদল লোক মিজানুরকে নিয়ে যায় বলে তাঁর পরিবার জানিয়েছিল। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় মিজানুরের কোনো খোঁজ মেলেনি।
পরিবারের সদস্যদের ধারণা, তনু হত্যার পর তাঁর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার কারণেই মিজানুরকে সরকারি কোনো বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন। এ জন্য তাঁরা পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে ধরনা দিয়েছেন, কিন্তু ছেলের খোঁজ পাননি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনী মিজানুরকে ধরে নেওয়ার কথা স্বীকার করেনি, আবার তাঁকে উদ্ধারও করতে পারেনি।
পরিবারের পক্ষ থেকে ৩০ মার্চ এ ঘটনায় বুড়িচং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডিতে বলা হয়, ২৭ মার্চ দিবাগত রাত একটায় সাদাপোশাকধারী লোক তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে এসে মিজানুরের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় তাঁকে নিয়ে চলে যায়। পরদিন পরিবারের সদস্যরা র্যাব ও ডিবি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেননি।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু ২০ মার্চ খুন হন। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরে কালভার্টের পাশের ঝোপ থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।