• বুধবার , ২০ নভেম্বর ২০২৪

তদবির-তবুও বেসিক বাচ্চু ঘায়েল!


প্রকাশিত: ৪:১৩ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ১৭ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৯ বার

বিশেষ প্রতিনিধি  :  তদবিরে বাঁচার ফঁন্দি এঁটেছে একসময়কার ৬ বডিগর্ডি নিয়ে চলাফেরাকারী বেসিক ব্যাংকের সেই বাচ্চু। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির Bachuchu-www.jatirkhantha.com.bdসাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয়।এর আগে সোমবার শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে প্রথম দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আজ তার ‘কিছুটা ঘায়েল’ ভাব দেখা গেছে। অনেকটা হতাশ এবং বিধ্বস্ত ভাব ছিল তার চোখে মুখে।

আজ’ও বাচ্চু জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির দায় অস্বীকার করে জালিয়াতিপূর্ণ ঋণপ্রস্তাব তৈরি ও অর্থ লোপাটের সব দোষ চাপিয়েছেন সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামের ওপর। তিনি বলেছেন, ‘এমডির উপস্থাপনা অনুযায়ী ওই সময়ে ঋণপ্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার কোনো দায় নেই।’

দুদক সূত্র জানায়, দুদক পরিচালক জায়েদ হোসেন খান ও সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে বিশেষ টিমের সদস্যরা বাচ্চুকে ২০০৯-১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাংকটিতে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

গত কয়েকদিনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বেসিক ব্যাংকের পাঁচ পরিচালককে। ২০০৯-১৪ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর মেয়াদে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ওই সময়ে জালিয়াতিপূর্ণ ঋণ প্রস্তাবগুলো সম্পর্কে ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটিসহ অন্যান্য কমিটির আপত্তি সত্ত্বেও পর্ষদ সভায় এগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এভাবেই ওই ব্যাংক থেকে লোপাট হয়েছিল সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। জিজ্ঞাসাবাদকালে তাদের কাছে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। অর্থ আত্মসাতে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে ব্যাংকের নথিপত্রও দেখানো হয়। তবে সাবেক এই চেয়ারম্যানকে দুদকের মুখোমুখি হয়েছে এবারই  প্রথম। জিজ্ঞাসাবাদের পর এ সংক্রান্ত মামলাগুলোর চার্জশিট পেশ করা হবে।

২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুই মেয়াদে ছয় বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ওই ব্যাকংটির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। ২০১৫ সালের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকের ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬টি মামলা করে দুদক। এই হিসাব অনুযায়ী গত দুই বছরের বেশি সময়ে মামলাগুলোর চার্জশিট পেশ করা হয়নি।

দুদক সূত্রমতে, ৫৬ মামলার আওতায় ওই সমুদয় পরিমাণ টাকার ঋণ প্রস্তাবই ছিল ত্রুটিপূর্ণ। প্রস্তাবগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) রিপোর্ট ছিল না। প্রস্তাবে উল্লেখ করা জামানতের মূল্য যাচাই করা হয়নি। অধিকাংশ ঋণ গ্রহীতার কোনো ব্যবসা নেই। কারও কারও ছোট্ট পরিসরে ব্যবসা থাকলেও ৫০, ৮০, একশ’ কোটি টাকার ঋণ ফেরত দেওয়ার সক্ষমতা নেই। ঋণ প্রস্তাবে এসব বিষয় উল্লেখ করা হলেও পর্ষদ তা বাতিল না করে অনুমোদন দিয়েছে।

২০১৫ সালের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান, পল্টন ও মতিঝিল থানায় দায়ের করা ৫৬ মামলার তদন্ত করছেন দুদক উপপরিচালক ঋত্বিক সাহা, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, মির্জা জাহিদুল আলম, মাহবুবুল আলম, শামসুল আলম, সহকারী পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীন, উপসহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান ও আ স ম শাহ আলম।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পরে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। ওই চার বছর তিন মাসে ব্যাংক থেকে মোট ৬ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়, যার সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকাই নিয়ম ভঙ্গ করে দেওয়া হয়েছে।

ওই সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৩৪১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদক ৫৬টি মামলা করে। বাকি ২ হাজার ৪৬৩ কোটি ৩৪ লাখ ৫ হাজার ৬৫৯ টাকা আত্মসাতের অনুসন্ধান শুরু করা হয়নি। গত বছরের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মতিঝিল, গুলশান ও আগারগাঁও থানায় দায়ের করা ওইসব মামলায় ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামসহ মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়।