• বুধবার , ২৭ নভেম্বর ২০২৪

তথ্য গোপন করে বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত অমিতাভ-ঐশ্বরিয়া


প্রকাশিত: ৩:২৪ পিএম, ৫ এপ্রিল ১৬ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৯ বার

amitabh-and-ashwariya-www.jatirkhantha.com.bd ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে আসমা খন্দকার   :  মোস্যাক ফনসেকা নামক পানামাভিত্তিক এক আইনি প্রতিষ্ঠানের ফাঁস হওয়া প্রায় ১১ মিলিয়ন নথিপত্রে পাঁচ শতাধিক ভারতীয় ব্যক্তির নাম রয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস খবরটি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, কর ফাঁকি দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধভাবে ব্যবহারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রায়, আদানি গ্রুপের গৌতম আদানি ও তার বড় ভাই বিনোদ আদানিও।

2ওই আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভারতের সরকার এবং কর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতার কথাও উঠে এসেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে। মোস্যাক ফনসেকার প্রধান কার্যালয় পানামায় অবসি’ত, যেখানে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার হাজারো কারসাজির সুযোগ রয়েছে। ওই ফাঁস হওয়া নথিকে ‘পানামা পেপারস’ নামে অভিহিত করা হচ্ছে। ওই আইনী প্রতিষ্ঠানটির মক্কেল ছড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।

প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট ফি নেওয়ার মাধ্যমে মক্কেলদের বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। এর মাধ্যমে তারা ওই অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ উপায়ে ব্যবহারের সুযোগ পান। ওই আইনী প্রতিষ্ঠানই এসব বেনামী কোম্পানির দেখাশুনা করে থাকে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৩৪টি ভারতীয় পাসপোর্ট এবং ৩৬ হাজার নথির ওপর তারা আট মাস তদন্ত চালিয়েছে।

পানামা পেপারসে কর ফাঁকি ও সম্পদ গোপনের তালিকায় রয়েছে বলিউড তারকা অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বরিয়া রায়, ডিএলএফ স্বত্বাধিকারী কেপি সিং ও তার পরিবারের আরও ৯ সদস্য, অ্যাপোলো টায়ারস, ইন্ডিয়ান বুলস থেকে আদানি গ্রুপের গৌতম আদানি ও তার বড় ভাই বিনোদ আদানির নাম। দুই রাজনৈতিক ব্যক্তির মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিশির বাজোরিয়া এবং লোকসত্তা পার্টির দিল্লি ইউনিটের সাবেক প্রধান অনুরাগ কেজরিওয়ালের নাম।

‘পানামা পেপারস’-এর তালিকায় মুম্বাইয়ের ডন ইকবাল মিরচি থেকে শুরু করে পাঞ্চকুলা, দেহরাদুন, ভাদোদারা এবং মান্দাসুরের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম-ঠিকানাও রয়েছে। তবে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তদন্তে দেখা যায়, ওই ঠিকানাগুলো যে ব্যক্তির নামে দেওয়া, তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। এমনকি একটি ঠিকানা ছিল এক বস্তির। কয়েকটি নথিতে দেখা যায়, সরকারও ওইসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনে জড়িত। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ থাকা অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, যারা ক্রিকেটে আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের নামও ওই তালিকায় এসেছে।

উল্লেখ্য, রেভিনিউ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) অনুসারে, ২০০৩ সালের আগে কোনও ব্যক্তি বড় অংকের বিদেশি অর্থ দেশের বাইরে পাঠাতে পারতেন না। ২০০৪ সালে একজন ব্যক্তি বছরে ২৫ হাজার ডলার বিদেশে পাঠাতে পারতেন, যা বর্তমানে বেড়ে আড়াই লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। কিন’ ২০১৩ সাল পর্যন্ত আরবিআই কোনও ব্যক্তিকে বিদেশে কোম্পানি খোলার অনুমতি দেয়নি। ২০১৩ সালের আগস্টে ভারতীয় নাগরিকদের সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে, তারা যৌথ উদ্যোগে বিদেশে কোম্পানি খুলতে পারবেন।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ভারতীয় ট্যাক্স কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও মোস্যাক ফনসেকার সম্পর্ক ছিল। ব্রিটিশ আইল্যান্ড বা পানামার মতো ট্যাক্স মুক্ত কর্তৃপক্ষ ওই ভারতীয়দের তথ্যের জন্য মোস্যাক ফনসেকার ওপরই নিভর্র করতো। ‘পানামা পেপারস’ এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো, যখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম বি শাহ-এর নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল কালো টাকার অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন তৈরি করছে।

প্রায় এক বছর আগে জার্মানির মিউনিখের একটি পত্রিকা জিড্ডয়েটশ সাইটুঙ্গ একটি বেনামা সূত্র থেকে এই বিপুল তথ্যভাণ্ডরের সন্ধান পায়। তারা ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস বা আইসিআইজের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জানায়। তবে নথিগুলোর সংগ্রাহক ও প্রকাশকারীর নাম জানানো হয়নি।

উল্লেখ্য, গত বছর ‘সুইস লিকস’-এ দেখা যায়, ১ হাজার ১০০ জনেরও বেশি ভারতীয়ের এইচএসবিসি জেনেভায় গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আর ওই ঘটনাটি ভারত থেকে অর্থপাচারের বিষয়টিকে আবারও সামনে তুলে ধরে।