ঢাকায় লংকান প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা দশটি চুক্তি-সমঝোতা স্মারক সই হবে
বিশেষ প্রতিনিধি : ঢাকায় পৌঁছেছেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বৃহস্পতিবার সাড়ে ১১টার দিকে তিনি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেয়া হয়। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
বৈঠক শেষে ১০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের আগমন উপলক্ষে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। কোথাও কোথাও শোভা পাচ্ছে শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। নগরীর বিভিন্ন স্থানে টানানো হয়েছে বর্ণিল পতাকা ও অতিথিকে স্বাগত জানিয়ে নানা বর্ণের ফেস্টুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে তার এ সফর।
এরআগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের সফরসঙ্গী হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী, উচ্চশিক্ষা এবং জনপথ প্রতিমন্ত্রী, কৃষি প্রতিমন্ত্রী, অর্থ ও গণযোগাযোগ উপমন্ত্রী, বন্দর ও নৌপরিবহন উপমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দল থাকবেন।
উল্লেখ্য, সিরিসেনা দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী থাকাকালে ২০১৩ সালের ৮ থেকে ১১ এপ্রিল এবং ২০১৪ সালের ২২ থেকে ২৩ জুন বাংলাদেশ সফর করেন।
বিকালে তিনি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করবেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী শ্রীলংকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সফরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ১৪ জুলাই দু’দেশের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। বৈঠকে দু’দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, মৎস্য, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, শিক্ষা, তথ্য প্রযুক্তি, তথ্য ও প্রচার, ভিসা সংক্রান্ত বিষয়াবলী গুরুত্ব পাবে বলে তিনি জানান।
সফরকালে যেসব চুক্তি এবং এমওইউ সই হবে; তার মধ্যে আছে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা, উচ্চশিক্ষা, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্ট ধারীদের ভিসা অব্যাহতি, দু’দেশের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রভৃতি।
এছাড়াও দু’দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সহযোগিতা, দু’দেশের ফরেন সার্ভিস ইন্সটিটিউটের মধ্যে এবং বাংলাদেশের বিস ও শ্রীলংকার লক্ষণ কাদিরগামা ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিসের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে।
এদিকে দু’দেশের মধ্যে রেডিও, ফিল্ম ও টিভির সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) ও শ্রীলংকার স্ট্যান্ডার্ড ইন্সটিটিউশনের (এসএলএসআই) মধ্যে সহযোগিতা, দু’দেশের সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা, দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ফ্যাশন ইন্সটিটিউট ও শ্রীলংকা টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল ইন্সটিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ১৪ জুলাই বিকালে শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে ১৪ জুলাই সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন।
তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেয়া নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। আগামী ১৫ জুলাই শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এমসিসিআই এবং বিডার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাংলাদেশ-শ্রীলংকা বিজনেস সংলাপে অংশগ্রহণ করবেন। এর পরপরই তিনি শ্রীলংকার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সফরের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে ৩ জুলাই বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়।
১৯৭২ সালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এর আগে ২০১১ সালের এপ্রিলে শ্রীলংকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে বাংলাদেশ সফর করেন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে শ্রীলংকা সফর করেন।