• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

ঢাকায় বিশ্বমানের উড়াল সড়ক- ১০ মিনিটে ফার্মগেট থেকে এয়ারপোর্ট-


প্রকাশিত: ১২:২১ এএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২৩ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১১৮ বার

-কুতুবখালি পর্যন্ত চালু হলে বদলাবে সব-

লাবণ্য চৌধুরী : অবশেষে ঢাকায় বিশ্বমানের উড়াল সতক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে। বহুল প্রতিক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন হয়েছে । শুরুতে সাড়ে ১১ কিলোমিটারের আংশিক উদ্বোধন হলেও ২০২৪ সালের মধ্যে পুরোপুরি চালু হবে এ প্রকল্প। তখন কুতুবখালি পর্যন্ত চলে যাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোল দিয়ে এই উড়াল সড়কে ওঠেন এবং ফার্মগেট অংশে এসে নামেন। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) এটি সর্বসাধারণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ায়, প্রকল্পটি নিয়ে মানুষের কৌতহূলের শেষ নেই। বিশেষ করে প্রকল্পটির নির্মাণশৈলী নিয়ে মানুষের আগ্রহ এখন তুঙ্গে।পাখির চোখে তাকালে বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত দেখা মিলবে এক নতুন পথের। নানা সংকটে বারবার সময় বাড়িয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রথম ভাগ।দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে এ প্রকল্পে ব্যবহার হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের নানা উন্নত প্রযুক্তি এবং একেবারে ভিন্নধর্মী নির্মাণশৈলী।

বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) সমন্বয়কারী মিসবাহিল মোকার রাবিন দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, এলিভেটেড এক্সওপ্রেসওয়েটি আন্তর্জাতিক মান মেনে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এটি মেগা প্রকল্প, তাই এখানে আন্তর্জাতিক মানের রড-সিমেন্ট ব্যবহার হয়েছে।তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের দায়িত্বে রয়েছে চীন ও থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান। তাদের দেশে এমন অনেক এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে। তারা সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করছে। প্রাথমিকভাবে এলিভেটেড এক্সওপ্রেসওয়েটির স্থায়ীত্বকাল ১০০ বছর ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, এলিভেটেড এক্সওপ্রেসওয়েটি চালু হলে ঢাকা শহরের মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ কাওলা থেকে এক্সওপ্রেসওয়েটি সরাসরি গিয়ে মিলবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে।

এ পথে যাত্রীদের সুবিধার্থে অনেকগুলো র‌্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে যাত্রীরা সহজেই নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশেই এখন আন্তর্জাতিক মানের রড-সিমেন্টসহ নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপকরণ তৈরি হচ্ছে। তাই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো মেগাপ্রকল্পগুলোতে এখন দেশে তৈরি রড-সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে।

দেশের সরকারের নানা অবকাঠামো নির্মাণের ওপর ভিত্তি করে দেশে রড, সিমেন্ট, ইট, বালুসহ নানা উপখাত গড়ে উঠেছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব পণ্য এখন বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এতে বেড়েছে রড, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর চাহিদা। এ চাহিদা পূরণে দেশি-বিদেশি বিশাল অঙ্কে গড়ে উঠছে ভারী শিল্প কারখানা। এতে কর্মসংস্থান বাড়ছে, সমৃদ্ধ হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতি।

বর্তমানে দেশে বিশ্বমানের যেসব স্থাপনা, সুউচ্চ ভবন, সড়ক অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে তার জন্য খুব একটা নির্মাণ সামগ্রী আমদানি করতে হচ্ছে না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, মেট্রোরেল, ঢাকা-চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ চলমান মেগা প্রকল্পগুলোতে নির্মাণ সামগ্রীর জোগান দিচ্ছে দেশীয় কারখানাগুলো।

অপেক্ষা কুতুবখালী-

এলিভেটেড এক্সওপ্রেসওয়ের বিষয়ে নগর-পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান জানান, মূলত যমুনা ব্রিজ হয়ে যেসব গাড়ি ঢাকাকে বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করে চট্টগ্রাম যায়, সেসব গাড়ি শহরে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল উদ্দেশ্য উত্তরবঙ্গের এসব গাড়ি ঢাকার ওপর দিয়ে চলে যাবে। এতে বাঁচবে সময়, অন্যদিকে রাজধানীর ওপরে চাপও কমবে।

আদিল বলেন, যদিও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম পর্যায়ে ১৫টি র‍্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেখানে গাড়িগুলো যানজট এড়িয়ে নিজস্ব গন্তব্য পৌঁছাতে পারবে। তবে টোল ফি দিয়ে কয়টি গাড়ি এখানে উঠবে সেটি একটি প্রশ্ন। অন্যদিকে এই এক্সপ্রেসওয়ে পুরোপুরি চালু হয়ে কুতুবখালি বিস্তৃত না হওয়া পর্যন্ত এর পূর্ণাঙ্গ সুফল পাওয়া যাবে না। আর ঢাকার যানজট কমাতে হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে ফ্লাইওভারের মতো ব্যবহার না করে সুষ্ঠু একটি গাঠনিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।

প্রকল্পসূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম ফেইজ হিসেবে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সামনে থেকে ফার্মগেট প্রান্ত অংশ পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই পথের দূরত্ব দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার।

র‍্যাম্পসহ এই পথের মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে র‍্যাম্প রয়েছে ১৫টি র‍্যাম্প। র‍্যাম্পগুলো হচ্ছে— বিমানবন্দরে ২টি, কুড়িলে ৩টি, বনানীতে ৪টি, মহাখালীতে ৩টি, বিজয় সরণিতে ২টি এবং ফার্মগেটে ১টি। ১৫টির মধ্যে ১৩টি র‍্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি। প্রকল্পের ভৌত কাজের প্রথম ধাপে ১৪৮২টি পাইল, ৩২৬টি পাইল ক্যাপ, ৩২৫টি কলাম, ৩২৫টি ক্রস বিম, তিন হাজার ৪৮টি আই গার্ডার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া তিন হাজার ৪৮টি আই গার্ডার এবং ৩২৮টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই ভৌত কাজের অগ্রগতি ৯৭.২৮ শতাংশ।

প্রকল্পের ভৌত কাজের দ্বিতীয় ধাপে ১৬৩৩টি পাইল, ৩৩৫টি পাইল ক্যাপ, ৩২৩টি কলাম, ৩২০টি ক্রস বিম, ২৩০৫টি আই গার্ডারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ২০৪৪টি আই গার্ডার এবং ২৩৩টি ব্রিজ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই ভৌত কাজের অগ্রগতি ৫৪.২২ শতাংশ।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।

২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।