ঢাকায় জঙ্গি হামলার ছকে তারেক-মীর কাশেম আলীর গোপন প্লান
ডেস্ক রিপের্টার : ঢাকায় জঙ্গি হামলায় তারেক জিয়া ও মীর কাশেমের গোপন প্লান অবশেষে ফাঁস করলো আনন্দবাজার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা পরিকল্পনায়ও জামায়াত নেতার ফাঁসির রায়ের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি। তারা ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর বরাত দিয়ে জানায়, হাসিনা সরকারকে ফেলে দেয়া এবং প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ছক হিসাবে জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা পৌঁছেছে। এই হামলার পিছনে সেই টাকাও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ঢাকা।
আনন্দবাজার জঙ্গি হামলার সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ইঙ্গিত করে জানায়, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার লন্ডনবাসী ছেলে তারেক জিয়ার ফোনও ১ জুলাই সারারাত ব্যস্ত ছিল। তাঁর ফোন থেকেও ঢাকা, করাচি ও আরবে কথা বলার প্রমাণ মিলেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, তাঁর এক খাস চাকরের নামে নথিভুক্ত ফোনে সেই রাতে কথা বলছিলেন তারেক জিয়া।
জামায়াত নেতা মীর কাশেমকে ছাড়াতেই ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে জঙ্গি হামলা ও হামলা হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা। তারা ঢাকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে জানায়, ফাঁসির আসামি জামাতে ইসলামি নেতা মীর কাশেম আলীকে জেল থেকে মুক্ত করাটাও গুলশানে জঙ্গি হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিল।
তাদের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হোলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গি হামলা নিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি নয়াদিল্লিকে যে প্রাথমিক তথ্য দিয়েছে, তাতে এই সন্দেহের কথা জানানো হয়েছে। ঢাকার দাবি- পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ভারতীয় গোয়েন্দা এবং গুপ্তচর সংস্থাগুলি এখন সেই তথ্যের বিশ্লেষণ করছে বলে (বাংলাদেশের) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই পাঁচ জঙ্গিকে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে দু’মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। এর পরে চট্টগ্রাম হয়ে তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। থাইল্যান্ড থেকে এসেছিল জঙ্গিদের অস্ত্র। বিদেশিদের পণ বন্দি করে মীর কাশেম আলীকে মুক্ত করার পাশাপাশি সেনাদের বিদ্রোহে উস্কানি দেয়াও উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে উদ্বৃত্ত করে আনন্দবাজার জানায়, ‘ধনকুবের মীর কাশেমকে মুক্ত করাটা লক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে এখন একমাত্র তাঁর ফাঁসিই কার্যকর হওয়া বাকি। এই ফাঁসি আটকাতে নানা রকম চক্রান্ত চলছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতাও তার অঙ্গ হতে পারে।’
মীর কাশেম আলী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত একজন যুদ্ধাপরাধী। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে খুনি ‘আল বদর’ বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন চট্টগ্রামে তৎকালীন ছাত্রনেতা মীর কাশেম। পরে জামায়াত ইসলামের নেতা হন তিনি। ১৯৮৩ সালে তিনি ইসলামি ব্যাঙ্ক স্থাপন করে তার প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান হন। কেয়ারি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে তার ১০টি কোম্পানির প্রধান হিসেবেও ছিলেন তিনি। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের রুটে তাঁর পাঁচটি বিলাসবহুল প্রমোদতরী চলে। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ কোম্পানির মালিক ইবনে সেনা ট্রাস্টেরও সদস্য তিনি। নয়া দিগন্ত নামে একটি দৈনিক পত্রিকা ও দিগন্ত টেলিভিশনেরও তিনি মালিক ছিলেন। সরকারি হিসেবে সব মিলিয়ে মীর কাশেমের সম্পদের পরিমাণ অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা।
আনন্দবাজার আরো জানায়, আন্তর্জাতিক আদালতে নিজের বিচার প্রক্রিয়া চলার সময়ে মীর কাশেম বিশ্বের নামী-দামি আইনজীবীদের নিয়োগ করেছিলেন। বিচার বন্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রচারের জন্য বিপুল অর্থ নিয়োগ করে মার্কিন লবিস্টও নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর ফাঁসির রায়ের পরে পাকিস্তানের আইনসভায় বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নেয়া হয়েছিল। তুরস্ক সরকারও ফাঁসি রদ চেয়ে ঢাকার কাছে সরকারি ভাবে আবেদন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকেও কাশেমের ফাঁসি রদ চেয়ে সওয়াল করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দাবি, শুক্রবার রাতে জঙ্গি হানা চলার সময়ে করাচি এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যে কয়েক হাজার ফোন কল গিয়েছে। পাশাপাশি দুবাই, সিরিয়া থেকেও ওই সময় ঢাকায় অজস্র ফোন এসেছে এবং গিয়েছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা মনে করছেন, পণ বন্দি অবস্থায় করাচি, আরব এবং ঢাকার মধ্যে অজস্র ফোনালাপ থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে কোন কোন দেশ এই ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে।
এ ছাড়া বেশ কিছু নির্দিষ্ট তথ্যও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এসেছে। ওই পাঁচ জঙ্গির কাছেও আরব থেকে সরাসরি ফোন আসছিল। গুলশান-বনানী এলাকার ফোন পরিসেবা বন্ধ করে দিয়েছিল সেনাবাহিনী। তার পরেও দেখা যায় ওই বেকারিতে কয়েকটি স্যাটেলাইট ফোন সক্রিয় রয়েছে। জঙ্গিরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে আরবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। জঙ্গিরা সেনাবাহিনীর অফিসারদেরও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। বলেছিল, তা হলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশে শরিয়ত আইন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বাংলাদেশে এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের জড়িত থাকার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছে দিল্লি। দিল্লির এক গোয়েন্দা কর্তা জানায়, ‘বাংলাদেশে আগুন জ্বললে আমাদেরও তার আঁচ পোয়াতে হবে। তাই সতর্ক থাকতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে।’