ঢাকায় আয়ারল্যান্ড ডুবল ১৮৩ রানে
স্পোর্টস রিপোর্টার : আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে বড় জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করল টাইগাররা। শনিবার সিলেটে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে আয়ারল্যান্ডকে ১৮৩ রানে রেকর্ড ব্যবধানে হারায় টিম বাংলাদেশ। যা নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়।
টাইগারদের দেয়া ৩৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় তারা। এ জয়ের ফলে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ এবাদত-তাসকিনদের অসাধারণ বোলিংয়ে ৩০.৫ ওভারে ১৫৫ রানে গুটিয়ে য়ায় আইরিশরা।
বিশাল টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে বিনা উইকেটে পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় সফরকারীদের সংগ্রহ। অবশেষে আইরিশদের ওপেনিং জুটি ভেঙে সাকিব ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার পরের ওভারেই আঘাত হানেন এবাদত। জুটিতে ৬০ রান আসার পর সাকিবের বলে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ডোহেনি। বিদায়ের আগে ৩৮ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলেছেন এই আইরিশ ব্যাটার। ৪টি চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি। পরের ওভারে আরেক আইরিশ ওপেনার পল স্টার্লিংকে বিদায় করেন এবাদত। এবারও ক্যাচ নেন মুশফিক। ৩১ বল স্থায়ী ইনিংসে ২২ রান করেন স্টার্লিং।
জোড়া ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি আয়ারল্যান্ড। নিজের পরবর্তী ওভার করতে এসে ওভারের দ্বিতীয় বলেই চারে নামা হ্যারি টেক্টরকে (৩) বিদায় করেন এবাদত। এবার ম্যাচে নিজের তৃতীয় ক্যাচটি নেন মুশফিক। পরের ওভারে আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নিকে (৫) বোল্ড করেন তাসকিন।
আয়ারল্যান্ডের পরের উইকেটটিও তাসকিনের; এবার তার লাফিয়ে ওঠা বলে আইরিশ উইকেটকিপার-ব্যাটার লরকান টাকার (৬) ক্যাচ তুলে নেন। আর তা লুফে নেন স্লিপে থাকা ইয়াসির আলী।
৭৬ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে আইরিশরা যখন ধুঁকছে তখন দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলার চেষ্টা করেন জর্জ ডকরেল ও কুর্টিস ক্যাম্পার। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজনে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন। তবে অসহায় ছিলেন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে।
তাদের জুটিতে একশো পার হয় সফরকারীরা। কিন্তু দলীয় রান তিন অঙ স্পর্শ করার পর আর বেশিদূর এগোয়নি এই জুটি। ১৬ রান করা ক্যাম্পারকে ফিরিয়ে ৩৩ রানের এই জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। ২৪তম ওভারের চতুর্থ বলটি অফ এবং মিডল স্ট্যাম্পের ওপর রেখে ফুল লেন্থে করেছিলেন নাসুম। বলে সামান্য টার্ন থাকায় ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করেন ক্যাম্পার।
তাতে বল সরাসরি পায়ে আঘাত হানলে নাসুমের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি এই আইরিশ অলরাউন্ডার। ফলে রিভিও নেন তিনি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। নিজের পরের ওভারে বোলিংয়ে ফিরে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন নাসুম। ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান করা গেরেথ ডেলানিকে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলানোর পরের বলেই অ্যান্ড্রি ম্যাকব্রাইনকেও ফিরিয়েছেন এই স্পিনার। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে রানের খাতা খুলতে পারেননি ম্যাকব্রাইন। ইনিংসে এটা নাসুমের তৃতীয় শিকার।
ব্যাটারদের এমন আসা-যাওয়ার মিছিলেও এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন ডকরেল। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। তার ৪৫ রান শুধুই হারের ব্যবধান কমিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ৩০ ওভার ৫ বল খেলে ১৫৫ রান তুলে অলআউট হয়েছে আয়ারল্যান্ড।
এর আগে শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে স্বাগতিকরা। যা ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৩৩ রান করেছিল। অবশ্য ব্যাটিংয়ের শুরুটা একদমই ভালো হয়নি বাংলাদেশের।
মার্ক আডইয়ারের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান ৯ বলে ৩ রান করা অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এরপর নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে ৩৪ রানের জুটি গড়েন আরেক উদ্বোধনী ব্যাটার লিটন দাস। কিন্তু দুজনের কেউই পারেননি ইনিংস লম্বা করতে। ২ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ বলে ২৬ রান করে ক্যাম্পারের বলে স্টার্লিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন লিটন। শান্ত লাইন মিস করে বোল্ড হন ম্যাকব্রিনের বলে, ৩৪ বল খেলে ২৫ রান করেন। ৮১ রানে তিন উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও তাওহীদ হৃদয়।
সাকিব আল হাসান শুরুর দিকে কিছুটা ভুগেছেন। কিন্তু যত সময় গড়িয়েছে, তিনি হয়েছেন সাবলীল। ৩৫তম ওভারে হ্যারি টেক্টরকে তো দুঃস্বপ্নই দেখিয়েছেন সাকিব। ছয় বলের পাঁচটিতেই চার মেরে নিয়েছেন ২২ রান। প্রায় ১৩৭০ দিন আগে সেঞ্চুরির দেখা পাওয়া সাকিবের জন্য ছিল বেশ বড় সুযোগ।
কিন্তু তিনি আউট হয়েছেন খুবই সাদামাটাভাবে। ৯ চারে ৮৯ বলে ৯৩ রান করে গ্রাহাম হিউমের বলে উইকেটে পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। ‘নব্বই’তে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অষ্টমবার আটকে গেলেন তিনি। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে এটি যৌথভাবে সর্বোচ্চবার। তার সঙ্গে তাওহীদের ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি দশ ম্যাচ পর বাংলাদেশে প্রথম তিন অঙ্ক ছাড়ানো জুটি।
এরপর মুশফিক সাত নম্বরে নেমে ৩ চার ও সমান ছক্কায় ২৬ বলে ৪৪ রান করেছেন তিনি। এরপরের পুরো আলোটাই অবশ্য ছিল তাওহীদ হৃদয়ের দিকে। দুর্দান্ত খেলতে থাকা এই ব্যাটার পেতে পারতেন সেঞ্চুরির দেখা। তিন অঙ্কের দেখা পেলে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে অভিষেকে সেঞ্চুরি করার কীর্তি হতো। কিন্তু কেবল ৮ রানের জন্য সেটি করতে পারেননি তিনি। হিউমের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তাওহীদ। ৮ চার ও ২ ছক্কার ইনিংসে ৮৫ বলে ৯২ রান করেন তিনি।
শেষদিকে ইয়াসির আলির ১০ বলে ১৭, তাসকিন আহমেদের ৭ বলে ১১ ও নাসুম আহমেদের ৭ বলে ১১ রানে ইনিংসে বাংলাদেশ পায় রেকর্ড গড়া সংগ্রহ। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে ১০ ওভারে ৬০ রান দিয়ে চার উইকেট নেন গ্রাহাম হিউম।