ঢাকায় আইএস বাহিনীর চার জঙ্গি গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা:
রাজধানীর দুটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ বলেছে, এরা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেইট (আইএস) এর সদস্য। রোববার গভীর রাতে যাত্রাবাড়ী ও খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশে আইএস এর প্রধান সমন্বয়ক। বাকি তিনজন তার সহকারী। এরা হলেন- সাখাওয়াতুল কবির, আনোয়ার হোসেন বাতেন, রবিউল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম। তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ ও জিহাদি লিফলেট উদ্ধার করা হয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে।
গোয়েন্দ পুলিশের পরিদর্শক মো. আবু জাফর জানান, সাখাওয়াতের ভায়রা শামীম ও বাতেনের ভগ্নিপতি সায়েম পাকিস্তানে থাকতেন এবং তারা দুজনেই আইএসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারাই বাংলাদেশে সাখাওয়াতকে সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে। সাখাওয়াত পাকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করেছেন।
সম্প্রতি পাকিস্তানে জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে শামীম ও সায়েম নিহত হন বলে উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান।
গত বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে সামিউন রহমান ইবনে হামদান নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়, যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামলাও হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সংগ্রহ করে সিরিয়ায় পাঠানোর জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন হামদান (২৪)। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং বাংলাদেশে ইসলামী শরীয়াভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তন করাও তার উদ্দেশ্য ছিল।
এছাড়া ইসলামিক স্টেটের জন্য অনলাইনে সদস্য সংগ্রহের অভিযোগে ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকা থেকে মো. হিফজুর রহমান নামের ২২ বছর বয়সী আরেক তরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিলেটের শাহজালাল উপ-শহর এলাকার সরকারি তিব্বিয়া কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র হিফজুর আগে নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সদস্য ছিলেন বলে পুলিশের অভিযোগ।
ওই সময়ই রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও রমনা এলাকা থেকে মো. আসিফ আদনান (২৬) ও মো. ফজলে এলাহী তানজিল (২৪) নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যারা ইসলামিক স্টেটে যোগ দেয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে গোয়েন্দা পুলিশের দাবি।
গত অগাস্টে ইউটিউবে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, পাঁচজন আইএস প্রধান আবু বকল আল বাগদাদির কাছে জিহাদের শপথ নিচ্ছেন। ওই ভিডিওর সঙ্গে ইংরেজি ক্যাপশনে তাদের বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করা হয়।
আদনান ও তানজিল উগ্রপন্থী সংগঠন ‘আনসারউল্লাহ বাংলাটিম’ এর সদস্য। এদের মধ্যে আদনান সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এক বিচারপতির ছেলে এবং তানজিলের মা একজন ওএসডি যুগ্ম সচিব।
ইরাক ও সিরিয়ার বিরাট এলাকা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গত বছর খেলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা। ইরাকের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করার অভিযোগ রয়েছে এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি কয়েকজন মার্কিন ও ব্রিটিশ নাগরিকের শিরশ্ছেদ করে ইন্টারনেটে তার ভিডিও প্রকাশ করে আইএস।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে উগ্র ইসলামিক এই সংগঠন। তাদের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৮০টির বেশি দেশের ১৫ হাজারের বেশি ‘যোদ্ধা’ রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা।
বিভিন্ন দেশ থেকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য সংগ্রহ ঠেকাতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে ব্যবস্থা নেয়ার তাগাদা দিয়ে গত বছর একটি প্রস্তাবও পাস করে নিরাপত্তা পরিষদ।