ডেথ ফোবিয়া’ মুসাকে দুই-সপ্তাহ সময় দিল দুদক
স্টাফ রিপোর্টার: জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরকে আগামী ২৮ জানুয়ারি বেলা ১১টায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুদকের পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত ওই চিঠি আজ বুধবার মুসার অফিসে পাঠানো হয়েছে।
অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে দুদকের তলবে হাজির হতে পারছেন না বলে গতকাল মঙ্গলবার চিঠি পাঠান মুসা বিন শমসের। ওই চিঠিতে তিনি বলেন, তিনি মৃত্যু আতঙ্কে (ডেথ ফোবিয়া) ভুগছেন। সেই সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসও তাঁকে ভোগাচ্ছে। চিকিৎসকের সনদ যুক্ত করে দুদককে দেওয়া চিঠিতে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় দুই থেকে তিন মাস পেছানোর আবেদন করেন।
এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্ধারণ করে মুসাকে চিঠি পাঠিয়েছে। দুদক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।বিতর্কিত এ ব্যবসায়ীর কথিত বিপুল পরিমাণ সম্পদের রহস্য উদ্ঘাটন করতে চলতি মাসের ৪ জানুয়ারি তৃতীয়বারের মতো তাঁকে তলব করে চিঠি দেয় দুদক। পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী স্বাক্ষরিত ওই তলবি নোটিশে তাঁকে আজ বুধবার বেলা ১১টায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৭ জুন দুদকে দেওয়া সম্পদ বিবরণী অনুযায়ী মুসা বিন শমসের সুইস ব্যাংকে তাঁর ১২ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ছয় শ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে) ‘ফ্রিজ’ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও সুইস ব্যাংকের ভল্টে ৯০ মিলিয়ন ডলার দামের (বাংলাদেশি প্রায় সাত শ কোটি টাকা) অলংকার জমা রয়েছে।
গাজীপুর ও সাভারে তাঁর নামে প্রায় এক হাজার দুই শ বিঘা সম্পত্তি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মুসা। বর্তমান বাজার দরে এসব জমির মূল্য এক হাজার দুই শ কোটি টাকারও বেশি। অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকায় এসব সম্পত্তির খাজনা পরিশোধ করে নামজারি করা সম্ভব হয়নি বলে জানান মুসা।
মুসার দেওয়া তথ্য যাচাই করতে দুদকের চাহিদা অনুযায়ী সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু চিঠির উত্তরে ব্যাংকটি জানিয়েছে, সেখানে ওই নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাই ওই ব্যক্তির নামে কোনো সম্পদও নেই। সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জবাব পাওয়ার পর প্রকৃত তথ্য জানতে মুসাকে আবারও দুদকে তলব করা হয়।
সূত্র জানায়, মুসা বিন শমসেরকে এর আগে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করেও সুইস ব্যাংকের হিসাব নম্বর জানতে পারেনি দুদক। এবারের জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য না জানালে তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রদানে অসহযোগিতার অভিযোগে মামলা করা হতে পারে। এ অপরাধে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। মামলার পর আইন অনুযায়ী অনুসন্ধানও চলতে থাকবে। অনুসন্ধানে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেলে পরে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হবে। এ মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
২০১৪ সালের জুন মাসে বিজনেস এশিয়া নামের একটি সাময়িকীতে মুসাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ওই বছরের ৩ নভেম্বর তাঁর সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ১৮ ডিসেম্বর প্রায় ৪০ জন ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর বহর নিয়ে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হন তিনি। পরে দুদকের অনুসন্ধান দলটি মুসার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ড্যাটকোতে গিয়ে তাঁকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে মুসা দাবি করেন, ৪২ বছর বিদেশে বৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমেই তিনি ১২ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন। সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, মিসর, সিরিয়া ও পাকিস্তানসহ অনেক দেশের সরকারি প্রতিরক্ষা ক্রয় সংক্রান্ত পাওনা পরিশোধের অর্থ ওই সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে তাঁর অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।