• শনিবার , ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ডেঙ্গুতে কাহিল মাশরাফি বিন মর্তুজা বললেন এক অসহায় কাহিনী


প্রকাশিত: ৫:৩১ এএম, ২৩ অক্টোবর ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৫৪ বার

Masrafi-www.jatirkhantha.com.bd দিনা করিম:     ডেঙ্গুতে কাহিল মাশরাফি বিন মর্তুজা। আট দিন হাসপাতালে থেকে মাশরাফি বিন মুর্তজাও এখন অনেকটা সুস্থ। সমস্যা কেবল শারীরিক দুর্বলতা। বিসিবির ডাক্তার-ফিজিওদের আশা, সেটাও দূর হয়ে যাবে শিগগিরই। আগামী রোববার থেকে মাশরাফিকে একটু একটু রানিং-জগিংও শুরু করতে বলা হয়েছে! কিন্তু মাশরাফির মনের ‘ডেঙ্গু’ সারাবে কে?

নিজের মুখেই বললেন ডেঙ্গুর অসহায় কাহিনী। হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার দুই দিন আগের ঘটনা। বাথরুম থেকে বের হয়েই মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন বিছানায়। প্রচণ্ড ঘামাতে লাগলেন। অ্যাপোলো হাসপাতালে ডাক্তার-নার্সদের ছুটোছুটি। মুঠোফোনে সেই স্নায়ু¶য়ী মুহূর্তের কথা বলছিলেন মাশরাফি, ‘ডাক্তাররা ব্লাডপ্রেশার মেপে দেখলেন ৬০ আর ৪০। প্রেশার আমার এমনিতেই একটু কম থাকে। কিন্তু এত কম কখনো আসেনি। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’

মূলত ওই ঘটনাই মাশরাফিকে মানসিক সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। সে সমস্যা এখন এতটাই প্রকট যে, শারীরিক দুর্বলতাটাকেও মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে, এটা আসলে মানসিক সমস্যা না তো! ‘মনে হচ্ছে আমি যেন মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছি! এত খারাপ কখনো লাগেনি। কথা বলতে পারছি না, ঠিকভাবে হাঁটতে পারছি না। একটু উঠে বসলেই টায়ার্ড লাগছে। মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাওয়ার অনুভূতিটা যেন এখনো আছে’—ও প্রান্তে মাশরাফির কণ্ঠে ক্লান্তি ও শঙ্কার যুগল উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছিল স্পষ্ট।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই চোটাঘাতের সঙ্গে বসবাস। নতুন করে সেসবের বৃত্তান্তে না গিয়ে সর্বশেষ দুটো ঘটনাতেই তাঁর কপালের অদৃশ্য ফাটলটা দেখতে পাবেন। ভারত সিরিজের আগে বাসের ধাক্কায় রিকশা থেকে পড়ে হাত-পায়ে চোট পেলেন। মাশরাফির ভাষায়, ‘ওই দুর্ঘটনার পর ভারত আর দ¶িণ আফ্রিকা সিরিজে তো দুধভাত খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছি। মনে হচ্ছিল আমার কিছুই হচ্ছে না। ১৪ দিন বসে থেকে বিরাট ¶তি হয়ে গিয়েছিল।’

সেই ধাক্কা কাটিয়ে মন আর শরীরকে যখন দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটের জন্যও প্রস্তুত করে ফেললেন, তখনই ডেঙ্গু। সেটিকেও সাময়িক সমস্যা হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। তবে ¶তি যা হওয়ার তা যে হয়েই গেছে, সেটি মাশরাফিও বোঝেন, ‘পুরোপুরি সুস্থ ছিলাম। কিন্তু খেলার জন্য যে প্রস্তুতিটা ছিল, অসুখ হওয়াতে তাতে অনেক পিছিয়ে গেলাম। অনেকে বলে, “তোমার কত বড় বড় অপারেশন হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ে এত ভাবার কী আছে!” হয়তো ঠিক। তবে অসুখ যা-ই হোক, সেটা তো আমার খেলা বন্ধ করে দিতে যথেষ্ট হলো!’

ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে এখন অনেকটাই ক্লান্ত মাশরাফি। এমনকি কণ্ঠে চলে আসে আত্মসমর্পণের অসহায়ত্বও, ‘সব সময় তো এভাবে পারা যায় না। নিজের সঙ্গে লড়াই সব সময় করা যায় না। অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করছিলাম জাতীয় লিগে অন্তত দুটো ম্যাচ খেলব, সেটা নষ্ট হয়ে গেল! সবই কি মেনে নেওয়া যায়!’

মাশরাফির অবশ্য এখনো ইচ্ছা, জাতীয় লিগে অন্তত শেষ পর্বের ম্যাচটা খেলবেন। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে খেলার মধ্যে থাকতেই এই ইচ্ছা। তবে জানুয়ারির জিম্বাবুয়ে সিরিজের একটা অংশ নভেম্বরে চলে আসছে বলে একটু চিন্তিতও ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক। চিকিৎসকেরা যতই নিশ্চয়তা দিচ্ছেন ডেঙ্গুর প্রভাব তাঁর খেলায় বাধা হবে না, তবু মনে ভয়, ‘এত দিন খেলা ছিল না, আমি সুস্থ ছিলাম। এখন হুট করে খেলা চলে এল, আর আমার কিনা ডেঙ্গু! আবার নতুন করে শুরু করা, আবার ফাইটৃ।’

নতুন এই লড়াইয়ে বাড়তি ঝামেলা হয়ে দেখা দিয়েছে শরীরের ওজন। শক্তি ফিরে পেতে খাওয়া বাড়িয়ে দেওয়ায় দুর্বলতা কমুক আর না-কমুক, ওজন বেড়ে গেছে কেজি চারেক। জিমনেসিয়ামে তাই একটু বাড়তি ঘামই ঝরাতে হবে। কিন্তু তাতে হয়তো শরীরের অতিরিক্ত ওজনটুকু ঝরে যাবে; হাসপাতালের দুঃসহ স্মৃতি তাড়াতে পারে, ফিরিয়ে আনতে পারে পুরোনো আত্মবিশ্বাস, এমন কোনো জিমনেসিয়াম যে নেই!

মাশরাফির জীবনে অনেকবারই হাসপাতালে গেছেন। বেশির ভাগই খেলায় পাওয়া চোট নিয়ে। সেগুলো ছাড়া এবারের আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মাত্র একবার, ২০০৩ সালে জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছে। সেবার মাত্র দুই দিনেই বাসায় ফিরতে পারলেও ডেঙ্গু রাখল আট দিন। ক্যারিয়ারে ছয়-সাতবার ডেভিড ইয়াংয়ের অস্ত্রোপচারের টেবিলে ওঠা মাশরাফির কাছে সবচেয়ে ভয়াবহ এবারের অভিজ্ঞতাই, ‘জীবনে অনেকবার হাসপাতালে গেছি। কিন্তু সাত-আট দিন কখনোই থাকিনি। এমনকি বড় বড় অস্ত্রোপচার করেও টানা এত দিন কখনো হাসপাতালে থাকতে হয়নি।’

আট দিনের মধ্যে দুই দিন অবশ্য থেকেছেন ছেলে সাহেল মুর্তজার খুব কাছাকাছি। তাতে পিতা মাশরাফি নিশ্চিতভাবেই নিজের জ্বরের কষ্ট কিছুটা হলেও ভুলে ছিলেন। থাকারই কথা। সন্তান অসুস্থ হলে নিজের অসুস্থতার কথা কি আর খেয়াল থাকে কারও! কী কপাল, মাশরাফির জ্বরে পড়ার দু-তিন দিন পর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পাশের রুমে উঠতে হয়েছিল তাঁর এক বছর বয়সী পুত্রসন্তানকেও!