• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

ডিসি নিয়োগে অভিযোগ-দুর্নীতি-উপদেষ্টা বিষোদগারে সারজিস


প্রকাশিত: ১২:০৯ এএম, ৬ অক্টোবর ২৪ , রোববার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৫ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় আওয়ামীপন্থী ডিসি নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে বিভিন্ন গণমাধ্যম এ নিয়োগের আসল অভিযুক্তদের বাদ দিয়ে সমন্বয়কদের নিয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করার অভিযোগ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। গত সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে আওয়ামীপন্থী ডিসি নিয়োগ নিয়ে কথা বলেন তিনি।সারজিস আলম অভিযোগ করেন, ‘জনপ্রশাসনে আছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা, আছেন তার সহযোগী মাহফুজ ভাই। সরাসরি দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রভাবিত করছেন আলী ইমাম মজুমদার এবং তার পিএস আহসান কিবরিয়া। আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক মেয়াদে পরিচালক (২০১৫-২০২০), দুই মেয়াদে মহাপরিচালক (২০২০-২০২৪)। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিনও এই আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে সারজিস আলম লেখেন, ‘আজকে দেখলাম একটা প্রোগ্রামে গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ ভাই বললেন সমকাল পত্রিকায় নাকি নিউজ হয়েছে- দুইজন সমন্বয়ক ডিসি নিয়োগের সাথে জড়িত! অলরেডি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নাকি ডিসি নিয়োগের মাধ্যমে শুরু হয়ে গেছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৬ জেলার ডিসি নাকি তারা নিয়োগ দিয়েছে! নাম সারজিস আর হাসনাত!’

সারজিস আলম লেখেন, ‘এরপর সমকাল পত্রিকায় এই নিউজ খোঁজা শুরু করলাম ৷ কোথাও পেলাম না দুই সমন্বয়কের নাম! পরে যুগান্তর পত্রিকায় এমন একটা নিউজ পেলাম। সচিবালয়ে এমন একটা ঝামেলা হয়েছে। কেউ একজন আমাদের সাথে পরিচয়ের কথা বলেছেন। এরপর আমাদের কাছে জানতে না চেয়ে, আমাদের নাম ম্যানশন নিয়ে আমাদের মতামত না নিয়ে কোনো এক হলুদ সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেছেন। সম্পূর্ণ মিথ্যা এই সংবাদ কত টাকার বিনিময়ে কিংবা কার স্বার্থে তিনি এই কাজ করেছেন সেটা তিনিই ভালো জানেন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাহসী এ যোদ্ধা লেখেন, ‘আবার পরের দিনের যুগান্তর পত্রিকায় দেখলাম সত্যতা যাচাই না করে সমন্বয়কদের নাম ব্যবহার করে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ কারনে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও সেটা মানুষের চোখে পড়েনি। কারণ ওই মানুষগুলো প্রকৃতপক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। এই হলো কতিপয় বিভিন্ন রংয়ের সাংবাদিকদের অবস্থা।’

ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কিন্তু এই যে রাশেদ ভাই দেশের একটা রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, তার জায়গা থেকে একটা ফোরামে তথ্য যাচাই না করে গুজব লীগের এক্সটেন্ডেড ভার্সনের মতো পাগলের প্রলাপ করা কতটুকু শোভা পায়?’

তিনি লেখেন, ‘নতুন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে তার (রাশেদ) মতো তরুণদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। কিন্তু সেই সময়ে তথাকথিত প্রথাগত কিছু রাজনীতিবিদদের মতো অন্যকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে ছোট করে বড় হতে চাওয়ার যে কলুষিত টেকনিক, সেটার আশ্রয় নিয়ে তিনি শুধু নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন না বরং তরুণ নেতৃত্বের আস্থার জায়গায় সংকট তৈরি করলেন।

সারজিস আলম অভিযোগ করেন, ‘জনপ্রশাসনে আছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা, আছেন তার সহযোগী মাহফুজ ভাই। সরাসরি দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রভাবিত করছেন আলী ইমাম মজুমদার এবং তার পিএস আহসান কিবরিয়া। আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক মেয়াদে পরিচালক (২০১৫-২০২০), দুই মেয়াদে মহাপরিচালক (২০২০-২০২৪)। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিনও এই আহসান কিবরিয়া শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক। এই আহসান কিবরিয়াকে বর্তমানে রানিং পিএস বানিয়েছেন আলী ইমাম মজুমদার। এই মজুমদার সাহেব যখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন (২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল ) তখন আহসান কিবরিয়া ছিলেন তার একান্ত সচিব।

সারজিস আলম প্রশ্ন ছুড়ে লেখেন, ‘ডিসি নিয়োগে যদি আওয়ামী দোসররা স্থান পায় তবে ওপরের এই মানুষগুলো কি করছিল? তাদেরকে প্রশ্ন করা হয় না কেন? তাহলে তো তারা- হয় ব্যর্থ না হয় তাদের কাজ তারা করেন না। আমরা নিয়োগ দেওয়ার কে? আমরা কি কোনো অথরিটি? সমন্বয়কদের নাম ভাঙিয়ে খাওয়ার এই অপচেষ্টা আপনাদের পর্যায়ে কি মানায়?’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম এ সমন্বয়ক লেখেন, ‘আরও ১৬ বছর আগে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা একজনকে কেন এখন জনপ্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হলো সেই প্রশ্ন রাশেদ ভাই করতে পারেন না। আহসান কিবরিয়া কিভাবে অভ্যুত্থানের পর তার পিএস সেই প্রশ্ন তারা করতে পারে না। গুজব লীগের মতো বোগাস ৫৬ জন আওয়ামী ডিসির বয়ান বাদ দিলাম। ১০ জনও যদি আওয়ামীপন্থী দোসর হয় তাহলে তারা কিভাবে নিয়োগ পেলেন সেই প্রশ্ন জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট ক্ষমতাবান কাউকে তারা করতে পারেন না।’

সারজিস আলম লেখেন, ‘বঞ্চিত নাম ভাঙিয়ে কিভাবে বিভিন্ন বিভাগীয় মামলা খাওয়া কিংবা দূর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার পদায়ন হচ্ছে সেই প্রশ্ন তারা করতে পারেন না। ২ মাসের মধ্যে তিনটা প্রমোশন পেয়ে ওই ফিল্ডে কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়া কীভাবে একজন সিনিয়র সহকারী সচিব অতিরিক্ত সচিব বনে যান, সেই প্রশ্ন তারা করতে পারেন না। কীভাবে এখনো সচিবালয়ে টাকা লেনদেন হয়, কারা সেটা করে সেই প্রশ্ন তারা করতে পারেন না। তারা শুধু পারে কিছু অপেশাদার সাংবাদিকের গুজব নিয়ে লাফালাফি করতে। এসব বাদ দিয়ে দেশ সংস্কারে গঠনমূলক আলোচনা করুন। কাজে নেমে পড়ুন।
আওয়ামী লীগের অন্যতম টার্গেটে রয়েছেন জানিয়ে সারজিস আলম লেখেন, ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যদি আবার ক্ষমতায় আসে তবে সবার আগে যে পাঁচজনকে ক্রসফায়ার দিবে তার মধ্যে সারজিস-হাসনাত দুইজন। তাই ওইসব ফ্যাসিস্ট গংদের মতো বিভিন্ন দলের সাথে লিংক খোঁজার অসুস্থ মানসিকতা বাদ দেন।’

দেশের প্রতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সারজিস আলম লেখেন, ‘দেশের জন্য যতদিন বেঁচে আছি ততদিন অনৈতিক সুপারিশ বা এক টাকার লেনদেনের অভিযোগ কেউ করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ ৷ ওই হাজার কোটি টাকার মালিক সালমান এফ রহমানের দাঁড়ি ছাড়া চোরের মতো অপরাধী চেহারাটা দেখার পরও যদি কারো শিক্ষা না হয় তাহলে এই পৃথিবীতে তার জন্য কি অপমান অপেক্ষা করছে সেটা শুধু আল্লাহ জানে। কথা ও কাজ হবে ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে। এটাকে আপনারা যে বিশেষণে বিশেষায়িত করুন তাতে আমরা বিন্দুমাত্র চিন্তিত নই। সবার আগে আমার দেশ, আমার বাংলাদেশ।’