ডা. রিজিয়ার অবহেলায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল গালিবা-হায়াত
প্রিয়া রহমান : ডা. রিজিয়ার অবহেলায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল গালিবা-হায়াত।মাত্র দু’দিনে সারা বাংলাদেশকে মায়ার জালে জড়িয়ে ফেলেছিল বিস্ময় শিশুটি। ফরিদপুরের ‘মিরাকল শিশু’ গালিবা হায়াতের চাচা শামীমুল হক তালুকদার বললেন, রবিবার রাতে পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। গালিবার বাবা নাজমুল হুদা মিঠু তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য ফরিদপুরের স্থানীয় চিকিৎসককে দায়ী করেছেন।
গালিবার চাচা বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে দেশের চিকিৎসকদের কাছে অনুরোধ তারা যেন তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা না করেন।’২২ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের ‘ডা. জাহেদ শিশু মেমোরিয়াল হাসপাতালে’ জন্ম নেয় ক্রিকেট খেলোয়াড় নাজমুল হুদা মিঠু ও নাজনীন আক্তারের প্রথম সন্তান গালিবা হায়াত। কিন্তু জন্মের পর শিশুটির হার্টবিট না পাওয়ায় হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ডা. রিজিয়া আলম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই রাতেই শিশুটিকে দাফন করতে কবরস্থানে নেওয়া হলে দাফনের আগে সে নড়ে উঠে। এরপর দ্রুত তাকে ওই হাসপাতালেই ইনকিউবিটরে রাখা হয়। পরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে আনা হয়। তাকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে শিশুটি মারা যায়। আজ সোমবার গালিবাকে বেলা ১২টা ৯ মিনিটে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।
সকাল ৯টায় শিশু গালিবার মরদেহ হস্তান্তর করার কথা থাকলেও আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে দেরি হয়েছে বলে জানান শামীমুল। তিনি বলেন, ‘চিকিৎসকরা তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। আমরা তাদের সেবায় সন্তুষ্ট। তবে দেশেরে সব চিকিৎসকের প্রতি অনুরোধ তারা যেন তাদের দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা না করেন। দেশের প্রত্যেক নাগরিক যেন সুচিকিৎসা পায়। আর গালিবাকে যেন সৃষ্টিকর্তা বেহেশত নসিব করেন।’
তিনি আরও বলেন, স্কয়ার হাসপাতালে তাদের মোট বিল হয়েছিল ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে বিলের অর্ধেকটা বহন করেছেন। বাকি টাকা আমরা দিয়েছি। গালিবাকে বাদ আসর ফরিদপুরের আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে বলেও জানান তিনি।
গালিবার বাবা নাজমুল হুদা তার সন্তানের মৃত্যুর জন্য চিকিৎসক রিজিয়া আলমের অবহেলাকে দায়ী করেন। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে আসেননি নাজমুল। মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘ডাক্তার যদি সময় মতো ব্যবস্থা নিতেন, আমার স্ত্রীকে চিকিৎসা দিতেন তাহলে আমার সন্তান মারা যেত না। একথাটা অন্তত বলতে পারতাম যে, অবহেলায় আমার সন্তান মারা যায়নি।’
স্কয়ার হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আফতাব ইউসুফ রাজ জানিয়েছিলেন, নবজাতকদের ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি হতে হয়। এ শিশুটির ওজন মাত্র ৪৫০ গ্রাম অর্থাৎ আধা কেজিরও কম। সাধারণত মায়ের গর্ভে বয়সপ্রাপ্ত ভূমিষ্ট হওয়ার উপযোগী শিশু হিসেবে ধরা হয় ৩৭ সপ্তাহের শিশুকে। কিন্তু গালিবার জন্ম হয়েছে মাত্র ২৩ সপ্তাহে। গাইনোকলজি সোসাইটির মতানুসারে, ২৪ সপ্তাহের নিচে যদি কোনও বাচ্চার জন্ম হয় সে বেঁচে থাকার জন্যে ঠিক উপযুক্ত নয়। কারণ তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই তৈরি হয়নি।