ডাপের গ্যাসে নাকাল আনোয়ারাবাসী
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : ডাপের গ্যাসে নাকাল চট্টগ্রামের আনোয়ারাবাসী । অ্যামোনিয়া গ্যাস কয়েক কিলোমিটার এলাকা গ্যাস ছড়িয়েছে । তবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সার কারখানায় ছড়িয়ে পড়া গ্যাস অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছে ফায়ার সার্ভিস। ছড়িয়ে পড়া গ্যাসে ইতোমধ্যে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ৫ শিশুসহ ৪৬ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, এখনো পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
আটটি ইউনিটের ১৬ টি গাড়ি সেখানে কাজ করছে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন স্থানে গাড়িগুলো অবস্থান করছে। অসুস্থদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।গ্যাসের তীব্রতায় গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তি বেশ কয়েকজন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য আব্দুল হালিম বলেন, অসুস্থদের মধ্যে নয়জন হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। অ্যামোনিয়াম ফসফেটের বার্নাল (আধার) বিস্ফোরণে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায় গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনার পর পর গভীর রাত পর্যন্ত অ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্রতায় অসুস্থ হয়ে পড়া প্রায় ৫০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল) সংলগ্ন কারাখানাটির অ্যামোনিয়া ট্যাংকের একটি অংশ ফেটে গেছে বলে মনে করেছেন চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবুল কালাম। তিনি বলেন, ট্যাংকে আর গ্যাস নেই। সেখানে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অ্যামোনিয়া ছিল। বিস্ফোরণে সেখান থেকে ছড়ানো গ্যাস আশাপাশে ঘন কুয়াশার মতো ভেসে ছিল।”
কীভাবে গ্যাস সরানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রাউন্ড মনিটর এবং টুইন ওয়ান গ্রাউন্ড ফেইজের মাধ্যমে পানি ছিটানো হচ্ছে। এতে সেই কুশায়ার ঘনত্ব কমতে কমতে রাত ৪টার দিকে ৬০ শতাংশে আসে। সকাল ৮টা নাগাদ ১০ শতাংশে নেমেছে।’
ড্যাপ (ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট) সার কারখানাটি কর্ণফুলী নদী সংলগ্ন আনোয়ারা থানাধীন ইউরিয়া সার কারখানা কমপ্লেক্সের মাঝে অবস্থিত। এই ড্যাপ সার কারখানার অ্যামোনিয়া গ্যাসের দুটি ট্যাংকের মধ্যে একটির সংযোগ ভাল্বে লিকেজ কিংবা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে কারখানায় কর্মরতদের সূত্রে জানা যায়।
জানা গেছে, ড্যাপের দুটি ইউনিটের মধ্যে বন্ধ প্রথম ইউনিটের ট্যাংকটিতেই ঐ দুর্ঘটনা ঘটে। গত কয়েকদিন ধরে কারিগরি ত্রুটির কারণে এই ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটের ২৪ ঘণ্টায় ৮শ টন ড্যাপ সার উত্পাদন ক্ষমতা থাকলেও বাস্তবে দেড়শ থেকে দুশ টন সার উত্পাদন হয়।
ড্যাপ সার কারখানার উত্পাদন ভাগের কর্মকর্তা দীপু সুলতান জানান, দুর্ঘটনার পর পর অ্যামোনিয়া গ্যাস দ্রুত বাতাসে মিশে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে রাতের শিফটে প্ল্যান্টে কর্মরত লোকজন বেশি আক্রান্ত হয়।
রাতে অ্যামোনিয়া গ্যাস কর্ণফুলী নদী পেরিয়ে শাহ আমানত বিমানবন্দর, কাঠগড়, পতেঙ্গা বন্দর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে ঐসব এলাকার লোকজনও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। অ্যামোনিয়া গ্যাসের দুর্গন্ধে অনেকের মধ্যে বমির প্রবণতা বেড়ে যায়।অ্যামোনিয়ার তীব্র ঝাঁজে ড্যাপ ও পার্শ্ববর্তী কাফকো সার কারখানার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ লোকজন আতঙ্কে বাসা-বাড়িতে আশ্রয় নেয়।