ডাকসুসহ সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিন-ওবায়দুল
ঢাবি প্রতিনিধি : ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ডাকসুসহ সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বুধবার ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অপরাজেয় বাংলায় র্যালিপূর্ব সমাবেশে তিনি এ দাবি জানান।
শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলব, ক্যাম্পাসে যদি গণতন্ত্র চর্চা, সুন্দর ও চমৎকার পরিবেশ গড়ে তুলতে চান। তাহলে, ডাকসুসহ সকল ছাত্র সংসদে নির্বাচন দেয়ার ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন যদি থাকে, যারা প্রার্থী হবে তারা ভাববে- আমি যদি খারাপ আচরণ করি তাহলে সাধারণ ভোটাররা আমাকে ভোট দেবে না। সে এমনিতেই সংশোধন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে আজকে ২৫ বছরে প্রায় ৫০ জন ভিপি ও জিএস হতো। অন্যন্যা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও এমনটা হতো। জাতীয় রাজনীতে নেতৃত্বে দিতে পারতো। ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকার কারণে এই পথটা বন্ধ হয়েছে। আমি আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও কলেজের কর্তৃপক্ষকে বলে উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী গণতন্ত্র চর্চার জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন- যোগ করে ওবায়দুল কাদের।
ছাত্রলীগের নেতাদের আহ্বান জানিয়ে তিনি ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রীকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে হবে, ছাত্রলীগকে বিতর্কের উর্ধ্বে উঠতে হবে। ছাত্রলীগে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে কমিটি করতে হবে। কমিটিতে যাতে নিয়মিত ছাত্র থাকে। সেই ধারা শুরু হয়েছে। ত্যাগী-কর্মীরা যেন কোণঠাসা নয় হয়। পকেট কমিটি যেন না হয়। এটা আমি বিশেষভাবে বলছি। আজকে উমুকের এই ভাগ, উমুকের এই ভাগ হলে অগ্রযাত্রা ব্যহত হবে। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ছাত্রলীগে গ্রুপ, ভাগাভাগি চলবে না। এটা চলতে দেয়া যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগে মনে করিয়ে দিতে চাই। ছাত্রলীগকে সুনামের সঙ্গে হাঁটতে হবে। তোমাদের মেধা, শ্রম দিয়ে ছাত্রলীগকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করতে তুলতে হবে। অনুপ্রবেশকারী, আগাছা মুক্ত ছাত্রলীগ চাই। ২০১৭ সালের অঙ্গীকার- অনুপ্রবেশকারী ও আগাছা মুক্ত ছাত্রলীগ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এরাই ছাত্রলীগের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান বাধা। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটি গঠনের সময় সতর্ক থাকতে হবে। দলের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা সৃষ্টি করে। সমস্যা সৃষ্টি করে গুটি কয়েক পরগাছা, আর বদনাম হয় গোটা পার্টির, বদনাম হয় শেখ হাসিনা সরকারের।’
ছাত্রলীগ ও দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘২০১৭ সালে নতুন বছরে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সম্পদায়িক উগ্রবাদ। এটাই আমাদের উন্নয়নের মহাসড়কে প্রধান বাধা। কাজেই এই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে হবে। সকল বাধা অতিক্রম করে শপথ নিতে হবে, আমরা এই সম্প্রদায়িক অপশক্তিকে প্রতিহত করব, প্রতিরোধ করব, পরাজিত করবো।’
তিনি বলেন, ‘কথায় কথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ও বন্ধ থাকা চলবে না। এটা অশুভ প্রবণতা, এটা তাদের চরম ব্যর্থতা। যদি অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্য ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অস্বভাবিক হয়, সেটার জন্য আমাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা আছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা আছে। কেউ গোলমাল করতে তাদের পুলিশের কাছে সোপোর্দ করতে হবে।’
এসময় বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আজকে তাদের বুদ্ধিজীবীরা বলেন, ‘বিএনপি হাটুভাঙ্গা দল। তারা বলে- ফেলা আসা বছরের সবচেয়ে ব্যর্থ দল হচ্ছে বিএনপি।’ আমি বলি, বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। শুধু নাশিল করে। নাসিক নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে বিএনপি এখন পথ হারিয়ে দিশেহারা। এই দিশেহারা পথিক আবল তাবল বকছে। তারা মির্থাচার করছে। আমি সহকর্মীদের বলি- তাদের সকল প্রশ্নের জবাব দেয়ার দরকার নেই।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আব্দুল মান্নান, বাহলুল মজনু চুন্নু, ইসহাক আলী খান পান্না, মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, বাহাদুর বেপারী, লিয়াকত শিকদার, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন প্রমুখ।এরপর অপরাজেয় বাংলার পদদেশ থেকে ছাত্রলীগের র্যালিটি শুরু হয়ে শাহবাগ, মৎসভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, জিপিও মোড় হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়।