ট্রাইব্যুনাল সরাতে যতবার আদেশ ততবারই চিঠি-আইনমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : পুরোনো হাইকোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন যতবার চিঠি দেবে, ততবারই এটি পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দেবে আইন মন্ত্রণালয়।
আজ বুধবার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আয়োজিত স্পেশাল জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল জজ এবং সমপর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ‘ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিং কোর্সের’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এসব কথা বলেন।
ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালির শেষ অবস্থা কী? এ প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এর শেষ অবস্থা আমি বলতে পারব না। যতবারই আদেশ পাব, ততবারই আমি এটা পুনর্বিবেচনা করার জন্য বলব। সুপ্রিম কোর্ট যতবার চিঠি দেবে, ততবারই আমি পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দেব।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধের বিচারের অভিজ্ঞতা ছিল না। আমরা এই ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউশন টিম গঠন করেছি। ক্রমান্বয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বেড়েছে। আজকে এটা সারা বিশ্বে স্বীকৃত। কারণ এই ট্রাইব্যুনাল আমাদের সুষ্ঠু বিচার উপহার দিতে পেরেছে।’
আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আনিসুল হক বলেন, বর্তমান সরকার সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুরোপুরিভাবে মেনে চলছে এবং বিচার বিভাগের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ করছে না—এটিও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ—নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইনসভার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা থাকতে হবে। এটি থাকলেই আমরা গণতন্ত্রে যে ভারসাম্যের কথা বলি, তা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং গণতন্ত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হয় এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা হলে গণতন্ত্রের উন্নয়ন হয় এবং দেশ শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়। বর্তমান সরকার এই নীতিতে বিশ্বাস করে এবং এই নীতিই পালন করে যাবে।’
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দাঁড়িপাল্লা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের প্রতীক। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট এক প্রশাসনিক আদেশে দাঁড়িপাল্লাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার আদেশ জারি করেছেন। এই আদেশ মোতাবেক নির্বাচন কমিশন দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ব্যবহার না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
মন্ত্রী জানান, প্রতীক নির্বাচনের এখতিয়ার হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন যদি কোনো প্রতীককে বাদ দিতে চায় বা কোনো প্রতীককে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, আইনত সেটা তারা পারে। আইনত যেহেতু তারা সেটা পারে, তাই আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত সঠিক আছে।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে সরকারের আইন প্রণয়ন করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবিধানে এটা স্পষ্টভাবেই লেখা আছে, এটা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার। রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। তিনি বলেন, এই সরকার একটা অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।
হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি বিচারক নিয়োগ দেন। বিচারক নিয়োগ একটি চলমান প্রক্রিয়া। সে ক্ষেত্রে যখনই বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে, তখনই বিচারপতি নিয়োগ হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়োগটা যাতে বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকে এবং যোগ্য লোক নিয়োগ দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে এবং এ বছরের মধ্যেই বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করা হবে।